প্রেসকার্ড নিউজ ডেস্ক: চুপ শক্তির সাথে সংবাদ মাধ্যম চলছে ! জাতীয় কিংবা আঞ্চলিক রাজনীতিতে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা দেখে লাইনটি ভুল মনে হবে কি?
মনে করুন তো জাতীয় কিংবা আঞ্চলিক রাজনীতিতে যে কোনও ঘটনাকে ঘিরে সংবাদ মাধ্যম যে ভাবে বিরোধীদের শক্ত করে চেপে ধরে নিজেকে পাহারাদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে ঠিক সেভাবেই। থুঁড়ি একশো ভাগের এক ভাগও কি শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের শক্ত করে চেপে ধরে? মনে করুন আপনি। মনে খুঁড়েও মনে করতে পারবেন না। ঘটেনি তো মনে করবেন কি করে।
দুবৃত্তায়নের যে রাজনীতি চলছে তাকে সঙ্গ দিচ্ছে সাংবাদিকতাও। তা জাতীয় রাজনীতি হোক কিংবা আঞ্চলিক। সাংবাদিকতা শাসক দলের ক্যাডারের রোলকেও অনেক ক্ষেত্রে হার মানাচ্ছে।
এই বাংলার একটি বাস্তব ঘটনা বলি। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় শিক্ষকদের সাংগঠনিক এক অনুষ্ঠানে এসে বাংলার মানুষের বাংলা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারানো নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম সরকারের শিক্ষা ব্রাত্য বসুকে সতর্ক করেছিলেন তা জানিয়ে বলেন, বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার প্রতি আস্থা ফেরানোর কাজ শিক্ষকদের। শিক্ষা ক্ষেত্রে এই ঘাটতি ভালো লক্ষন নয়।
এরপর তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় শিক্ষক সংগঠনে তৃণমূলের লবি নিয়ে মন্তব্য করেন। সংবাদ মাধ্যমের দরদী হয়ে শাসক তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের লবি কোন্দল মেটাতে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনল। পরপর দুদিন ধরে চলল সেই সংবাদ।
অথচ, করোনাকালে মধ্যবিত্ত বাচ্চাদের শিক্ষা খরচ মেটাতে হিমশিম দশা এবং বাংলা মাধ্যমের প্রতি অনীহা নিয়ে কোনও প্রতিবেদন করেনি। সংবাদ মাধ্যমের কাছে গুরুত্ব পেলনা শিক্ষার মতন এমন গুরুত্বপূর্ণ এবং বিস্ফোরক বিষয়টি।
এবার চলুন যাই জাতীয় রাজনীতিতে, ভারতীয় টেলিভিশনের তথাকথিত তারকা অ্যাঙ্করদের বিতর্ক, কভারেজ এবং টুইটগুলি দেখুন। "যদি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী হাথ্রাস বা লখিমপুর খেরিতে যান, তারা কেন কাশ্মীরে যাননি?", তারা জিজ্ঞাসা করবে। মোদি কেন হাথ্রাস ও লখিমপুর কিংবা কাশ্মীর যাননি, এই প্রশ্ন তাদের কাছে আসে না। যদি কংগ্রেস নেতারা একজন ধর্ষিতা বা তার পরিবারের সাথে দাঁড়ান, দলটি সরকারকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে বুঝতে পেরেই জিজ্ঞাসা করা হবে কেন ধর্ষণের শিকার মেয়েকে রাজস্থান বা ছত্তিশগড়ে দেখতে যায়নি। তাহলে কি রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে রাজ্য সরকার বা শাসক দল ধর্ষকদের রক্ষায় দাঁড়াচ্ছে না ।
দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটের জাতীয় ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রের এই সাংবাদিকতা গরীব ও মধ্যবিত্ত জনগন এবং বিরোধী দল গুলোকে বিপাকে ফেলে অতল অন্ধকারে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
সংবাদ মাধ্যমের এই ভূমিকায় বিরোধী দলের কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি কর্তৃত্বমূলক শাসন ব্যবস্থায়ও, গণমাধ্যমের পরিবর্ধন ছাড়া ভিন্নমত টিকে থাকতে পারে না। টেলিভিশন স্টুডিওতে, বিরোধী দলের মুখপাত্র হিসাবে, রাজনৈতিক বিতর্কে দুই থেকে তিনটি সরকারপন্থী চিতকারের মুখোমুখি হন। বিরোধী দলের রাস্তার প্রতিবাদ খুব কমই মিডিয়া কভার করে। জাতীয় এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতাদের সংবাদ সম্মেলন বেশিরভাগ চ্যানেলে লাইভ কভারেজ পায় না। এবং তারপর একই মিডিয়া নির্লজ্জভাবে জিজ্ঞাসা করে, "বিরোধী দল কোথায়?" কখনও প্রশ্ন করেনা জনগনের জন্য সরকার তুমি কোথায়?
ইতিহাস আমাদের সময়ের সবচেয়ে সমালোচনামূলক প্রশ্নের উত্তর চাইবে - যখন গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছিল, তখন মিডিয়া কোথায় ছিল?
© সত্যজিৎ চক্রবর্তী।
বি দ্র : আর্টিকেলটি সত্যজিৎ চক্রবর্তীর পেজ সত্যজিৎ জার্নাল থেকে সংগৃহীত। লেখকের মতামতের সাথে প্রেসকার্ড নিউজের কোনও সম্পর্ক নেই।
No comments:
Post a Comment