ফেসবুক আইডি পাসওয়ার্ড হ্যাক করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হ্যাকার চক্র - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 4 October 2021

ফেসবুক আইডি পাসওয়ার্ড হ্যাক করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হ্যাকার চক্র

  


প্রেসকার্ড নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শ্যামলীর বাসিন্দা জিনিয়া শাম্মী (ছদ্মনাম)। বয়স ২২। অনেকটা একই ধরনের সমস্যায় পড়েন খিলক্ষেতের বাসিন্দা সুজানা আক্তার (ছদ্দনাম)। পেশায় গৃহিণী। সেপ্টেম্বরের শুরুতে তার ম্যাসেঞ্জারে পরিচিত এক ব্যক্তির আইডি থেকে একটি লিংক আসে। সেখানে ক্লিক করতেই ফেসবুক ইন্টারফেস আসে। তখন সেই লিংকে ঢুকতে ফেসবুক আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিলে সেই অ্যাকাউন্টের আইডি ও পাসওয়ার্ড চলে যায় হ্যাকারের কাছে। 


এরপর হ্যাকার যোগাযোগ করেন সুজানার সঙ্গে। অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে বসে হ্যাকার। একপর্যায়ে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে আইডি ফেরত নেন তিনি। শুধু উপরের দুটি সমস্যার তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের কাছে আসে ভয়ংকর সব তথ্য। চার সদস্যের একটি চক্র এভাবে অন্তত ২ হাজার নারীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তবে এই সদস্যের তিনজন পুরুষ, একজন নারী। 


মাদারীপুরের শিবচর থানার মাতব্বরচর পূর্ব কাচাকান্দি এলাকা থেকে মো. ওবাইদুল রহমান নোবেল, মো. শামীম সরদার ও মো. সবিজ খলিফাকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়। চক্রের দলনেতা নোবেল। শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র এসএসসি, শামীম সরদার চতুর্থ শ্রেণি ও সজিব মাত্র তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। জানা গেছে, গ্রেফতার নোবেল এসএসসি পাস। এক সময় সে মুদি দোকান চালাত। করোনাকালে তার ব্যবসা মন্দা হওয়ায় সে ইউটিউব দেখে হ্যাকিংয়ের কৌশল শিখে প্রতারণা শুরু করে। একইভাবে চতুর্থ শ্রেণি পাস শামীম ইলেকট্রিশিয়ানের পেশা এবং সজিব গার্মেন্টের চাকরি ছেড়ে ফেসবুক আইডি হ্যাকিং শুরু করে। সজীব খলিফা গার্মেন্টে চাকরি করে। মূলত সে-ই ফিশিং লিংক তৈরি করে। ভিকটিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে নোবেল। টাকা উঠানোর কাজ করে শামীম। তবে নোবেলের স্ত্রীকে দিয়ে মাঝেমাঝেই বিভিন্ন ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলিয়েছে। সে প্রেমের অভিনয় করে টার্গেট ব্যক্তিদের কাছ থেকে তাদের পাসওয়ার্ড নিয়ে নিত। মূলত তরুণী ও বিবাহিত অল্প বয়সী নারীরাই তাদের টার্গেট।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, তরুণীরাই তাদের মূল টার্গেট ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এক নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতারের পর তারা অন্তত ২ হাজার নারীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতার যুবকদের মোবাইল ঘেঁটে দেখা গেছে, সেখানে ২০০-৩০০ মেয়ের একান্ত ছবির ফোল্ডার রয়েছে। এসব ছবি দেখিয়ে তারা ভিকটিমদের কাছ থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়।


তিনি বলেন, মূলত ওই হ্যাকাররা টার্গেট করা নারীর পরিচিত পুরুষ ব্যক্তির ফেসবুক আইডি আগে হ্যাক করে। এরপর ওই আইডি দিয়ে তারা নারীর মেসেঞ্জারে ফিশিং লিংক পাঠায়। পরিচিত হওয়ার কারণে ওই নারী সেই লিংকে ক্লিক করে পাসওয়ার্ড দিলেই আইডির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হ্যাকারের কাছে। এরপর আইডি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা দাবি করা হয়। তাদের নিয়ন্ত্রণে সব সময় একটি আইডি থাকেই।  


জানা গেছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর শ্যামলী এলাকার শাম্মীর ফেসবুক হ্যাক হওয়ার পর প্রথমে ২০ হাজার টাকা দাবI করা হলেও একপর্যায়ে ৫ হাজার টাকা দিলে আইডি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হ্যাকার রাজি হয়। এরপর হ্যাকার নোবেল ও শামীম ০১৮৬৫৫২১৭৪২ ও ০১৭৩২৭২৮৫৭৯ নম্বরে টাকা বিকাশ করতে বলেন। ওই নম্বরে টাকা পাঠানোর পর ওই নারীর আইডি ফেরত দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করলে তার তদন্তভার যায় ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের কাছে। একপর্যায়ে তাদের মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। 


এর আগে গত ২৩ জুন মামুন মিয়া নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে ডিবি। তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা মোবাইল উদ্ধার করে সাইবার পুলিশ। মামুনও তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পর্কে পারদর্শী। সে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি ইউটিউব ও গুগল ঘেঁটে ফেসবুক আইডি হ্যাক করার ফিশিং প্রক্রিয়া রপ্ত করে। একাধিক প্রবাসীসহ অসংখ্য নারী মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন পুলিশের কাছে। 


কীভাবে হ্যাকারদের থেকে নিরাপদ থাকা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে এডিসি জুনায়েদ বলেন, একটু সচেতন হলেই ফেসবুক হ্যাকিং থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সেগুলো হচ্ছে, যাচাই না করে কোনও ধরনের ইউ আর এল লিংক ক্লিক করা থেকে বিরত থাকা, লিংকে ক্লিক করার পর কোনও ফেসবুক পেজে বা অন্য কোথাও রিডাইরেক্ট হলে লগইনের জন্য ফেসবুক আইডি/পাসওয়ার্ড প্রদান করা থেকে বিরত থাকা, ফেসবুক আইডিতে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের সঙ্গে একটি ই-মেইল এড্রেস যোগ করে রাখা, অথোরাইজ লগিন অপশন চেক করা, ফেসবুক আইডি বা ম্যাসেঞ্জারে একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি আদান-প্রদান, ভিডিও কথপোকথন থেকে বিরত থাকা, মোবাইলে আসা নোটিফিকেশনে ইয়েস/নো ক্লিক করার আগে ভালোভাবে পড়ে নেওয়া এবং ফেসবুকে তিন থেকে পাঁচজন ট্রাস্টেড কন্ট্রাক্ট যোগ করা। 


তিনি আরও বলেন, আমাদের কারোরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার কিংবা কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা উচিৎ নয়।


সৌজন্যে বাংলাদেশ প্রতিদিন

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad