করোনায় কেড়েছে রোজগার, পেটের দায়ে ঢাকিরা আজ দিনমজুর - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday, 2 October 2021

করোনায় কেড়েছে রোজগার, পেটের দায়ে ঢাকিরা আজ দিনমজুর

 


নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদা: করোনা সংক্রমণ এবং লকডাউনের জেরে মালদা ঢাকিদের রুজি- রোজগার না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ঢাক বাদ্য ছেড়ে এখন অধিকাংশই ঢাকিরা দিনমজুরি করছেন । কেউ যাচ্ছেন ভিন রাজ্যে কাজ করতে। আবার কেউ ইটভাটা থেকে শুরু করে নির্মাণ কাজের শ্রমিকের কাজ করছেন।কেউবা করছেন জুতো সেলাই।


অধিকাংশ ঢাকিদের বক্তব্য, গত দু'বছর ধরে লকডাউনের জেরে ভিন রাজ্যে থেকে কোন বায়না আসেনি। ঢাক বাজানো ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হতে হয়েছে । সংসারে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে চরম অসহায় তার মধ্যে চলতে হচ্ছে । রাজ্য সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মেলনি কোনো সরকারী ভাতা। এই অবস্থায় কেউ কেউ আবার পরিবার নিয়ে আত্মহত্যার কথা অভিমান করে বলেছেন। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামীতে এই বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিল্প ঢাকিদের একটা বড় অংশ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে।


মালদা জেলার কালিয়াচক ২ ব্লকের রথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে নওগাঁ এলাকায় রয়েছে ঢাকিদের একটি পাড়া । যেখানে ৫০টিরও বেশি পরিবার এই ঢাক বাদ্যের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু গত দুই বছর ধরে করোনা সংক্রমনের জেরে এখন জেরবার অবস্থা ওইসব ঢাকি পরিবারদের। অধিকাংশ ঢাকিরা বিগত দিনে ভিন রাজ্য যথা - দিল্লি , মুম্বাই , মধ্যপ্রদেশ , উত্তরাখন্ড, আসাম, ঝাড়খন্ড, বিহার সহ বিভিন্ন রাজ্যের ঢাক বাজানোর মোটা টাকা পেতেন, যার দরুন পরিবারের লোকেরাও কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পুজোর কটা মাস কাটাতেন। 


কিন্তু গত দু'বছর ধরে করোনা সংক্রমণ এবং লকডাউনের জেরে দিশেহারা অবস্থা মালদার ঢাকিদের। ঢাক বাজানো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এখন কেউ ঠিকা শ্রমিক। আবার কেউ রাজমিস্ত্রির সাথে সহযোগী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। কেউ বা করছেন জুতো সেলাই। অনেকের হাতে আবার কাজ নেই । তাই সারাদিন বাড়িতে বসেই কাটাচ্ছেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন অনেক পরিবার। এই অবস্থায় কি করবেন কিছুই ভেবে কূলকিনারা করতে পারছেন না তাঁরা। তাই মালদার ঢাকিদের সরকারি সহযোগিতার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কাছে বিভিন্নভাবে দরবার করেছেন অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা।


নওদা ঢাকিপাড়া এলাকার ঢাক বাদক উত্তম রবিদাস , বাবলু রবিদাসদের বক্তব্য, 'পুজোর সময় বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতাম। মোটা টাকা রোজগার হতো। কিন্তু করোনার জন্য ভিন রাজ্য থেকে ঢাক বাজানোর কোন বায়না এখন আসছে না। মালদাতেও বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা ঢাক বাজানোর ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রিম কোন বরাত দিচ্ছেন না। বাপ-ঠাকুরদাদার আমল থেকে তৈরি হয়ে আসা প্রাচীন শিল্প এখন তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে।' ঢাকিদের পরিবারের পাশে যাতে সরকার মানবিক মুখ নিয়ে চেয়ে দেখে, সেই আশায় পথ চেয়ে রয়েছেন মালদার ঢাকিরা।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad