করোনার প্রকোপ: গোবরডাঙ্গা রাজবাড়ীতে বন্ধ দেবীর মূর্তি পূজা - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, 6 October 2021

করোনার প্রকোপ: গোবরডাঙ্গা রাজবাড়ীতে বন্ধ দেবীর মূর্তি পূজা


নিজস্ব প্রতিনিধি, উত্তর ২৪ পরগনা: কোভিড বিধি মেনে কোনরকম ঘট পূজাতেই সীমাবদ্ধ গোবরডাঙ্গা রাজবাড়ীর ৩০০ বছরের দূর্গা উৎসব।

১২২৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রসন্নময়ী মায়ের পুজো হয়ে আসছে গোবরডাঙ্গা রাজবাড়ীতে। আর তার প্রায় ১০০ বছর আগে থেকে গোবরডাঙ্গা রাজবাড়ীতে শুরু হয় মা দুর্গার পূজা। মা প্রসন্নময়ীর পুজো দেওয়ার পরেই দুর্গার আরাধনা শুরু হয়। দেখতে দেখতে ৩০০টি বছর ধরে হয়ে আসছে দেবী দুর্গার পূজা।  গোবরডাঙ্গা রাজবাড়ীতে কয়েকটি দিনের জন্য উমা আসেন সপরিবারে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাজবাড়ী সদস্যরাও মায়ের টানে বাড়িতে ফেরেন, হই হই করে কেটে যায় কয়েকটা দিন। কিন্তু গত দু'বছর ধরে আর ফিরছেন না রাজবাড়ী সদস্যরা, কারণ করোনা পরিস্থিতির জন্য উমা সপরিবারে রাজ বাড়ী আসছেন না অর্থাৎ দুর্গা পুজা হচ্ছে না রাজবাড়ীতে। শুধু প্রসন্ন মায়ের মন্দিরে ঘট পূজার মাধ্যমে পূজিত হচ্ছেন দেবী দুর্গা।


প্রতি বছর জন্মাষ্টমীতে রাজবাড়ীর ঠাকুর দালানে মায়ের কাঠামোতে মাটি পড়ে। কিন্তু গত বছর থেকে তার ব্যতিক্রম হয়েছে। মহালায়ায় প্রসন্নময়ী মায়ের মন্দিরে ঘট পেতে পুজোর পর সেই ঘট ঠাকুরদালানে নিয়ে যেতেন রাজ পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির জন্য সেটি হচ্ছে না গত বছর থেকে। প্রতিবছর ঠাকুরদালানে মায়ের প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত হয় ষষ্ঠীতে তবে কোভিডের জন্য প্রসন্ন মায়ের মন্দিরেই ঘট পূজো হবে।


রাজবাড়ীতে ষষ্ঠীর দিনে কালী মন্দির থেকে কলা বউ নিয়ে এসে মায়ের অস্ত্র দান করা এবং সন্ধা আরতি, অষ্টমী, নবমী দশমী, নিয়ম করে শাস্ত্র মতে পুজো কিছুই হচ্ছে না এবার। শোনা যায় এই পুজো উপলক্ষে সেকালে মোষ বলির প্রচলন ছিল। পরে তা পাঠা বলিতে রূপান্তরিত হলে ও ১৯৯৭ সালে বলি প্রথা নিয়ম করে বন্ধ হয়ে যায়। বিগত কয়েক বছর ধরে চাল কুমড়ো ও এক বলে দিয়ে নিয়ম রক্ষা করা হয়। রাজ পরিবারের সদস্যদের দাবী পৃথিবীকে ঠান্ডা করতেই দেওয়া হয় এক বলি।


কথিত আছে মুখোপাধ্যায়দের পূর্বপুরুষরা পূজার সূচনা করেছিলেন যশোরে। বংশের আদি পুরুষ রাম মুখোপাধ্যায় উমার আরাধনা শুরু করেন যশোরের সারশা এলাকায়। পরে তার বংশধরেরা গোবরডাঙ্গা চলে আসেন। পুত্র শ্যামরাম মুখোপাধ্যায় গোবরডাঙ্গার ইছাপুর চৌধুরী বাড়ির জামাই ছিলেন। এই শ্যামরামের পুত্রই হলেন খেলারাম মুখোপাধ্যায়, তিনি মাতুলালয়ে পুজো শুরু করেন। সেই সময় ইংরেজ শাসন কাল। ২৪ পরগণার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন হিঙ্কল সাহেব। সাহেবের কাজের তদারকি করতেন খেলারাম। তাতে খুশি হয়ে মাতুলালয়ের বেশকিছু জমি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ওই ইংরেজ সাহেব। সেখানেই তৈরি হয় রাজবাড়ী।


সেসব এখন ইতিহাস। ইতিহাস হয়েছে কামান দেগে সন্ধি পুজোর ঘোষনাও। তবে রাজবাড়ি থেকে গিয়েছে রাজবাড়িতেই। নিয়ম মেনে এবার আর পুজো হচ্ছে না রাজবাড়ীতে। প্রতি বছরের মতো উমা ঠিকই আসছে কিন্তু রাজবাড়িতে নয়। এই কারনে রাজবাড়ী সদস্য ও গোবরডাঙ্গাবাসীর মন ভালো নেই। তবে রাজপরিবারের এখন অষ্টম পুরুষের সদস্যরাই এই পুজো এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তারা চাইছেন আগামী দিনে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার পুরনো জৌলুস ফিরে আসবে গোবরডাঙ্গা রাজবাড়ীতে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad