বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী এবং সেদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের তরফে কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্র’ স্থাপনা করা হল।
বৃহস্পতিবার বিকালে বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত ওই সংবাদ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান, প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন, কক্সেসবাজার সংসদ সদস্য সাইমুল সারওয়ার কমল এমপি, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার সাবান মাহমুদ, দিল্লির প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া’র সাবেক সভাপতি গৌতম লাহিড়ী প্রমূখ।
এই সংবাদ কেন্দ্রে রয়েছে প্রিন্টার, স্ক্যানার, কম্পিউটার, কালার টেলিভিশন, প্রজেক্টর, একটি প্রদর্শনী হল, গ্রন্থাগার প্রমুখ। ভিতরের দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্বলিত বিভিন্ন ছবি।
মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রেস ক্লাব কলকাতা এবং কলকাতার সাংবাদিকদের উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকারের তরফে এই উপহার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্স্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তথ্যমন্ত্রী। এর পর মুক্তিযুদ্ধ কভার করতে গিয়ে নিহত ভারতের দুই সাংবাদিক দীপক বন্দোপাধ্যায়, সুরজিৎ ঘোষালের প্রতিকৃতিতে মাল্যাদান করে শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী সহ অন্যরা।
পরে হাছান মাহমুদকে প্রেস ক্লাবের তরফে সম্বর্ধনা জানান সহ সম্পাদক নিতাই মালাকার। এছাড়া কক্সেসবাজার সংসদ সদস্য সাইমুল সারওয়ার কমল এমপি, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার সাবান মাহমুদ, দিল্লির প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া’র সাবেক সভাপতি গৌতম লাহিড়ীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় প্রেসক্লাবের তরফে।
হাছান মাহমুদ বলেন "এবছর আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী এবং দেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছি। একই সঙ্গে এই বছরটি ভারত বাংলাদেশের মৈত্রীর ৫০ বছর পূর্তি।
তাই এই একটি তাৎপর্যপূর্ণ বছর। এই সময়ে কলকাতা প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্র স্থাপনে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোয় ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরো বলেন "বঙ্গবন্ধু রাজনৈতীক জীবন, রাজনৈতীক দিক্ষ্যা শুরু হয় কলকাতায়। আমাদের স্বাধীনতার সময় যেভাবে ভারত আমাদের পাশে দাড়িয়েছিল, তার কৃতজ্ঞ চিত্ত স্বীকার করি। সে সময় ভারত যদি না দাড়াতো, তবে আমাদের স্বাধীনতা নয় মাসেই হতো কিনা সন্দেহ ছিল। লাখ লাখ মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা সেটাকে বোঝা মনে করে নি।
মন্ত্রীর অভিমত "আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে প্রেস ক্লাবের এই আয়োজনকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আপনারা যে সম্মান জানিয়েছেন, তাকে ধন্যবাদ জানাই। দিল্লির পর কলকাতা প্রেস ক্লাবে সংবাদ কেন্দ্র উদ্বোধন অনেক তৎপরযপূর্ণ। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে কলকাতা প্রেস ক্লাব যে অবদান রেখেছিল, তার অবদান অনসবীকার্য।"
কলকাতা প্রেস ক্লাব ও বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের মধ্যে এ সম্পর্কিত একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। এতে প্রেস ক্লাবের তরফে স্বাক্ষর করেন সহ সম্পাদক নিতাই মালাকার এবং প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন।
পরে একটি সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মন্ত্রী। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা প্রসঙ্গে সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন " বাংলাদেশ আমরা কাউকে সংখ্যালঘু হিসেবে দেখি না। আমরা সকলেই একসাথে বাস করি। আমরা সকলেই বাংলাদেশি এবং সকলেই বাঙালি। হিন্দু মুসলিম খৃষ্টান সকলে মিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের লড়াই করেছে, তাদের রক্ত দিয়েছে তাই আমরা কখনো কাওকে সংখ্যালঘু হিসাবে বিবেচনা করি না।"
বিএনপি কে নিশানা করে তিনি বলেন "বিএনপি, জামাত ও মৌলবাদী শক্তি স্প্রদায়িকাতায় বিশ্বাস করে, তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার প্রচেস্টা করছে। আমরা আগেই বলেছি, যে বাংলাদেশে কোনো হিন্দু বা মুসলিম মানুষ কোরান বা গীতার অবমাননা করতে পারেনা। এটা মৌলবাদীদের কাজ। তারা দেশকে শান্তি-শৃঙ্খলা কে নষ্ট করতে চাইছে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্তু
আমাদের সরকার এই অপরাধীদের বিরুদ্ধ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এখনো পর্যন্ত ১২৯ টি মামলা হয়েছে, ১২০৪ জন মানুষকে আটক করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা গুলিকে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতির নিয়েছে এবং এই মৌলবাদীদের নির্মূল করার অঙ্গীকার নিয়েছে।"
মন্ত্রীর অভিমত "নির্বাচন আসলেই বিএনপি-জামাত ভারত বিরোধী স্লোগান দেয়। তারা স্লোগান দেয় যে আওয়ামী লীগ পন্থী দল, হিন্দু পন্থী দল, তারাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই কাজ করেছে। তারা এক ঢিলে দুই পাখি মারার উদেশে এই কাজ ঘটিয়েছে।"
তিনি আরো বলেন "ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। দুর্গা পূজা বা ঈদ হলে ধর্ম নির্বিশষে পালন করে থাকি। উৎসব সব মানুষের মধ্যেই ছড়ায়। আমাদের প্রথম পরিচয় বাঙালি, কিন্তু যারা বিএনপি করে তাদের কাছে মানুষের প্রথম পরিচয় তার ধর্ম।"
তিনি আরো বলেন "গত ১২ বছরে বাংলাদেশে হামলার ঘটনা ঘটেনি। এই প্রথম ঘটনা ঘটলো। তাছাড়া রাতের অন্ধকারে তারা এই ঘটনা ঘটায় । এটা অনভিপ্রেত। এবছর ৩২ হাজার পূজা মন্ডপ হয়েছে, প্রতি পুজা মন্ডপে আর্থিক সহা়তায় ও অন্য সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে ৫/৬ মন্ডপে হামলার ঘটনা ঘটে। এবং যখন এই ঘটনা ঘটে তখন সব বিরোধীরা এক হয়ে যায়।"
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদের প্রসেঙ্গে "৭২ সালে বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান করেছিলেন তার মূল চেতনা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু জেনারেল এরশাদ সংবিধানের মধ্যে ধর্মের বিষয় টি এনে রাষ্ট্রের মূল চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।"
এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা কলকাতার পাঁচ সিনিয়র সাংবাদিককে ‘মুক্তিযুদ্ধ সুবর্ণ জয়ন্তী কলম সেনা’ সম্মাননা দেওয়া হয়। এরা হলেন মানস ঘোষ, দিলীপ চক্রবর্তী, সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত, তরুণ গাঙ্গুলী, ড.পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য এর আগে ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ‘প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া’য় বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার চালু করা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লতে ওই মিডিয়া সেন্টারের উদ্বোধন করেন ড. হাছান মাহমুদ।
পেসস ক্লাবের অনুষ্ঠানের আগে এদিন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভবন পরিদর্শনে যান মানননীয় মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সেখানে তাকে স্বাগত জানান বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায়। সেখানে হাসান মাহমুদকে উষ্ণ সম্বর্ধনা জানানো হয়। এর পর বেশ কিছুক্ষন তাদের উভয়ের মধ্যে বৈঠক হয়।
এই সাক্ষাতকারকে সৌজন্যমূলক আখ্যা দিয়ে হাছান মাহমুদ জানান "আমি একজন যেহেতু পার্লামেন্টের সদস্য, তাই এখানে বিধানসভার কাজ কিভাবে হয়, আমাদের দেশে পার্লামেন্টারি কমিটিগুলো কাজ কিভাবে হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হল, অর্থনীতি বিষয়ক বিভিন্ন আলোচনা হয়েছে। তাছাড়া বিমান ব্যানার্জীর আরেকটি পরিচয় হলো তিনি বাংলাদেশের বরিশালের জন্মগ্রহণ করেছেন, সেখানকার একটি নার্সিংহোমে তার জন্মনথিও আছে।" বিমান ব্যানার্জীকে বাংলাদেশে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন হাছান মাহমুদ।"
এদিন পদ্মার ইলিশ রপ্তানি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হাছান মাহমুদ জানান "বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ইলিশ রপ্তানির সময়সীমা আরও দশ দিন বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এখন অনেক ইলিশ মাছ এখানে আসছে। আর সত্যি কথা বলতে কলকাতায় একটি রেস্টুরেন্টে আমি ইলিশ খেয়েছি তার স্বাদই আলাদা।" এটি অনেক সময় আমি ঢাকাতেও পাইনা বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
No comments:
Post a Comment