উত্তর দিনাজপুর: দীপাবলির আমাবস্যায় বয়রা কালী মায়ের পুজো ঘিরে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে কালিয়াগঞ্জ শহরে। মায়ের অষ্টধাতুর মূর্তিতে সারা অঙ্গজুড়ে থাকে সোনার অলঙ্কার। উত্তরবঙ্গের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী শ্যামা পুজোগুলির মধ্যে উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ শহরে রায়গঞ্জ- বালুরঘাট রাজ্য সড়কের ধারে অবস্থিত বয়রা কালীবাড়ির শ্যামা পুজো বহু প্রাচীন।
কথিত আছে শ্রীমতি নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা আর বজরা নিয়ে দূর দূরান্ত থেকে বাণিজ্য করতে আসা বনিকেরা নৌকা নোঙর করে বিশ্রাম নিতেন নদীর ধারে জঙ্গলাকীর্ণ অরন্যে। সেখানেই বয়রা গাছের নীচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন এক বনিক৷ দেবীর স্বপ্নাদেশ পান ওখানেই মূর্তি দিয়ে কালী পুজো করার৷ সেই বয়রা গাছের তলায় প্রথম পুজো শুরু হয় "বয়রা কালীবাড়ি" র পুজো।
পরবর্তিতে কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দারা সেই জঙ্গল পরিস্কার করে বাঁশ ও মাটি দিয়ে তৈরি করে মায়ের মন্দির। এরপর ১৯৬২ সালে তৈরি হয় দেবীর নতুন মন্দির যা আজ বয়রা কালীমন্দির নামে বিখ্যাত। মায়ের মূর্তিও হয়েছে অষ্টধাতুর।
দীপাবলির রাতের বয়রা কালীবাড়ির পুজোকে ঘিরে কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট সহ উত্তরবঙ্গের মানুষের আলাদাই উন্মাদনা থাকে। এখানে কয়েক লক্ষ পূন্যার্থীর সমাগম ঘটে দীপাবলির রাতে। দুই-তিন হাজার পাঠাবলি হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার কারণে সরকারি বিধি মেনে সম্পূর্ণ রূপে বলি প্রথা বন্ধ আছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাধারন মানুষ দাবী করে এসেছে বলি প্রথা বন্ধ করার। কারও নিজের মনস্কামনা পুরনোর জন্য নিরীহ প্রাণীকে হত্যা করা ঠিক নয়। করোনা অতিমারী কারণে দীর্ঘদিন ধরে বলি প্রথা বন্ধ থাকায় সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সকলের দাবীকে প্রাধান্য দিয়ে মন্দির কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলিদান প্রথা বন্ধ করে দেওয়ার।
স্থানীয় বাসিন্দা থেকে মন্দির কর্তৃপক্ষ ও ভক্তরা জানিয়েছেন, এখানে মা বয়রা কালী মায়ের কাছে মানত করলে তা ফলে যায়। মানত পূরণ করতেই হাজার হাজার ভক্ত আসেন এখানে পুজো দিতে। কালিয়াগঞ্জের রাজনন্দিনী পুজোতে শোল, বোয়াল সহ পাঁচ রকমের মাছ ও পাঁচ রকমের সবজি দিয়ে মায়ের ভোগ হয়।
No comments:
Post a Comment