প্রেসকার্ড নিউজ ডেস্ক: এমন এক গ্ৰাম, যেখানে পুরুষদের অবিবাহিত থাকাটাই যেন সাধারণ হয়ে গিয়েছে। এ যেন এক অভিশাপ। ভাগ্যের এমনই পরিহাস, যে এই গ্ৰামে কেউ নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চান না। না কোনও কুসংস্কার এর জন্য দায়ী নয়। দায়ী হল, এখানকার পরিবেশ। যানবাহন চলাচল তো দূরস্ত, বেঁচে থাকার মৌলিক সুবিধাগুলোও এখানে নেই।
আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যে সরকারের দাবী ছিল উন্নয়নের আলো রাজ্যের প্রতিটি কোণায় পৌঁছাবে, কিন্তু রাজধানী রাঁচির প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক গ্রাম এখনও মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও অনেক দূরে। কাঙ্কে ব্লকের উচ্চ কোন্কি পঞ্চায়েতের অবস্থাও একই রকম। পাহাড় ও বনের মাঝে অবস্থিত এই পঞ্চায়েতে সেতুর অভাবের কারণে সানাইয়ের আওয়াজ খুব কমই শোনা যায়। এই গ্রামে কেউ তাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে চায় না।
পাহাড় ও বনের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে চলা এই পরিস্থিতি রাজ্যে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা কী, তা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে কৌন্কি ব্লকের উচ্চ কৌনকি পঞ্চায়েতের অনেক গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন পাহাড় ও বনের মধ্যে প্রবাহিত নদীর জলেই আটকা পড়ে আছে। সেতু নির্মাণ না হওয়ায় এই পঞ্চায়েতের ১৫ টির মধ্যে ৬ টি গ্রাম, সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অবস্থা এমন যে প্রায় ১৫০০ জনসংখ্যার প্রত্যেককে প্রতিটি প্রয়োজনে এই নদী পার হতে হয়। বর্ষাকালে যখন নদীর জলোচ্ছ্বাস হয়, তখন কেউ সেখান দিয়ে যাওয়ার সাহস পায় না। আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামে বিয়ের সানাই খুব কমই বেজে ওঠে, কারণ কেউই তাদের মেয়ের বিয়ে দিতে চায় না এমন গ্ৰামে, যেখানে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার মতো মৌলিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত সকলে।
সংবাদমাধ্যম News18-এর টিম এই এলাকা ঘুরে দেখেন সরেজমিনে। তারা যখন পাহাড় এবং জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত এই পঞ্চায়েতের অবস্থা জানতে পৌঁছান, তখন গ্রামের যুবকরা আশাবাদী চোখে তাকিয়ে থাকে। ২৪ বছর বয়সী সোমু মুন্ডা হতাশার সুরে বলে যে, তার চেয়েও বয়স্ক যুবকদের এখনও বিয়ে হয়নি। কারণ অন্য গ্রামের মানুষ এই বনাঞ্চলে তাদের মেয়েদের দিতে চায় না। কেউ নদী পার হয়ে গ্রামে প্রবেশ করতে চায় না। এমন অবস্থায় গ্রামের অনেক ছেলে অবিবাহিত।
২৬ বছর বয়সী হেসা নাগ ২০১১ সালে কাট্রিবেদা গ্রামে খুন্তিকে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু তারপর থেকে তিনি রাজধানীর ঝলমলে দৃশ্য দেখতে পারেননি। তিনি বলেন যে, দুর্গা পূজার মতো উৎসবে ভালো পোশাক পরে রাঁচিতে গিয়ে ঘুরতে তারও খুব মন চায়, কিন্তু গ্রামের নদী পার হয়ে যাওয়া খুবই কঠিন।
বহু বছর ধরে, গ্রামবাসীরা রাঢ়া এবং উচ্চ কঙ্কি পঞ্চায়েতের মধ্যে একটি সেতু নির্মাণের দাবী করে আসছেন, যাতে মানুষ সহজে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। স্বাস্থ্যের কথা বললে, একজন গ্রামবাসীর স্বাস্থ্যের অবনতি হলেও চিকিৎসা সেবায় পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব, কারণ কেউ যদি পাহাড় ও বনের দুর্গম ও পাথুরে পথ দিয়ে কেউ সাহায্যের জন্য পৌঁছায়ও, তবে তার যাত্রা এই নদী পর্যন্ত এসেই থেমে যায়। আর এরপরেও যেতে হলে এই নদী অতিক্রম করে, পাহাড়ের গ্রামে পাথুরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়।
গ্রামে বসবাসকারী মহিলাদের মতে, মা হওয়ার সময় বেঁচে থাকা একমাত্র ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে। গ্রামের মহিলারা জানান যে, বিয়ের পর তারা বছরের পর বছর শহরের মুখ দেখেননি। গ্রামের প্রবীণদের মতে, শৈশবে তাদের গ্রামের যে ছবি তারা দেখেছিল, বার্ধক্যেও একই দৃশ্য। সরকার এসেছে এবং গেছে, কিন্তু উচ্চ কনকি পঞ্চায়েতের গ্রামের চেহারা বদলাতে পারেনি। গ্ৰামের বাসিন্দা পান্ডু মুন্ডা বলেন যে, 'শৈশবেও তিনি জল সাঁতরে পথ অতিক্রম করেছিলেন এবং আজ তিনি বৃদ্ধ বয়সেও একই কাজ করছেন। উপজাতীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু কিছুই হবে বলে মনে হচ্ছে না।'
No comments:
Post a Comment