নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: ১০৩ বছরের হাওড়া মাকড়দহ শ্রীমানী পরিবারের দেবী দুর্গা দশভূজা রূপে নয়, পূজিত হন হরগৌরী রূপে।
হাওড়া মাকড়দহ অঞ্চলে বসবাস ছিল তৎকালীন সময়ে শর্করা ও ঘিয়ের ব্যবসাদার কেদারনাথ শ্রীমানী ও তার দুই পুত্র বিশ্বনাথ ও হরিপদের। আজ থেকে ১০৩ বছর আগে অর্থাৎ ১৯১৮ সালের এক ভোরে বিশ্বনাথ শ্রীমানীর স্ত্রী (বড় মা) সকালে বাড়ীর দালানে জল ছড়াতে গেলে দেখতে পান ঠাকুর হরগৌরীর কাঠামো । ঠাকুরের আদেশ ভেবে তারপর থেকেই শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। তবে দেবী দুর্গা এখানে দশভূজা নয়, তাকে আরাধনা করা হয় হরগৌরী রূপে।
মা দুর্গা প্রতিবছর তার স্বামী শংকর মহাদেব ও তার চার সন্তান লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক ও সরস্বতীকে নিয়ে পূজিত হন এই শ্রীমানী পরিবারে। তাদের পুজোয় কোন বলির প্রথা নেই। দেবীকে তখনকার দিনে এক মণ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হতো ও একই সঙ্গে নারকেলের তৈরী সমস্ত মিষ্টান্ন পূজার প্রসাদ হিসেবে প্রদান করা হতো দেবী সন্মুখে। তাছাড়া থাকতো বিভিন্ন ধরনের ফল। দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ আসতেন এই পুজোয় অংশ নিতে। পুজোর চার দিন থাকতো বাড়িতে সকলের জন্য ভোজের আয়োজন।
প্রতিবছর জন্মাষ্টমীর দিন প্রথা অনুসারে কাঠামো পুজো করে শুরু হতো হরগৌরী প্রতিমা নির্মাণের কাজ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে পুরনো দিনের সেই পুজোর আয়োজন। এর ওপর আবার করোনার প্রকোপ। তাই করোনাকালে এ বছর আর বাড়ীর দালানে তৈরি হচ্ছে না প্রতিমা, তা আনা হবে কুমোরটুলি থেকে।
পরিবারের অধিকাংশ লোকেরাই কর্মসূত্রে এখন রয়েছেন বিদেশে। তবে ষষ্ঠীর দিন সকালেই চলে আসেন হাওড়া মাকড়দহের বাড়িতে। চার-পাঁচটা দিন কীভাবে যে কেটে যায়, তা কেউ বুঝতেই পারেন না। আর বিসর্জনের সময় এখনও পর্যন্ত দেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় মানুষের কাঁধে করে। সেই সময় মাকে সিঁদুর দান করার জন্য মাকড়দহ মাকড়চন্ডী মন্দিরে প্রতীক্ষা করেন হাজারও মানুষ । আগের মতন সেই এলাহি ব্যবস্থা না থাকলেও, ১০৩ বছরের পুরনো পুজোর আয়োজনে আগেকার সেই ঐতিহ্য এখনও বজায় রয়েছে হাওড়া মাকড়দহ শ্রীমানী পরিবারের।
No comments:
Post a Comment