ভাইরাল জ্বরের থাবায় রাজ্যের শিশুরা, ভাইরাস সনাক্ত করতে হু' র কাছে শিশু বিশেষজ্ঞরা - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, 15 September 2021

ভাইরাল জ্বরের থাবায় রাজ্যের শিশুরা, ভাইরাস সনাক্ত করতে হু' র কাছে শিশু বিশেষজ্ঞরা


প্রেসকার্ড নিউজ ডেস্ক: ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ উত্তরবঙ্গে। হাসপাতালে উপচে পড়ছে ভিড়। ভর্তি ৫০০-র অধিক শিশু। মৃত্যু দুই শিশুর। নতুন কোনও ভাইরাসের থাবা কিনা সে নিয়েই ধন্দে চিকিৎসক মহল। জ্বরের এই ভাইরাস সনাক্ত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা শিশু বিশেষজ্ঞদের। 


জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগে মঙ্গলবার ছয় বছর বয়সী কাবেরী রায়ের মৃত্যু হয়। কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা সে। বেশ কয়েকদিন থেকে জ্বরে ভুগছিল সে। রবিবার মেখলিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। কিন্তু অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় সোমবার জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে শিশুটিকে রেফার করা হয়। তবে শেষ রক্ষা হল না, মঙ্গলবার ভোর ৫টা নাগাদ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে কাবেরী।  স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, নিউমোনিয়ার প্রকোপেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ভারপ্রাপ্ত সিএমওএইচ জ্যোতিষচন্দ্র দাস জানান, শিশুটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। শত চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। 


এদিকে সোমবার দুপুরে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে মৃত্যু হয় ছয় মাস বয়সী মৃত্তিকা রায়ের। সে ময়নাগুড়ির আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেতপাড়ার বাসিন্দা। বেশ কয়েকদিন ধরের জ্বরে ভুগছিলে বলে জানা গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের জন স্বাস্থ্য বিভাগের ওএসডি ডঃ সুশান্ত রায় জানান, শিশুটির হার্টের সমস্যা ছিল। হাসপাতালে নিয়ে আসার পরই তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। জন্ম থেকেই শিশুটির হার্টে ফুটো ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।


জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে শতাধিক শিশু ভর্তি রয়েছে। যদিও মঙ্গলবার বিকেলে ২৯ জন শিশু সুস্থ হয়ে যাওয়ায়, তাদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২৪ জন শিশুকে আরও ভর্তি করা হয়েছে ১০ জন শিশুর লালার নমুনা পাঠানো হয়েছে ন্যাশনাল স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। হাসপাতালে থাকা প্রতিটি শিশুই জ্বরে আক্রান্ত। তাদের করোনা, চিকন গুনিয়া, স্ক্রাব টাইফাস, জাপানি এনসেফালাইটিস পরীক্ষা করা হয়েছে। এমনকি কলকাতা থেকে কিট এনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও সূত্রে খবর। 


পাশাপাশি শিলিগুড়িতেও একই দৃশ্য। জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া খবরে জেলা হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, বমি, পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি রয়েছে ৭০ টি শিশু। শিশুদের জ্বর-সর্দি উপসর্গ নিয়ে উপসর্গ‌ নিয়ে প্রতিদিনই প্রায় ৩০০ শিশুদের নিয়ে মায়েরা আসছেন হাসপাতালে। কারও শরীরেই করোনা ধরা পড়েনি। তবে জ্বরের এই ভাইরাস চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে ক্রমশই। শিশু বিশেষজ্ঞেরা 'হু'-এর সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করছেন বলেও সূত্রে জানা গিয়েছে। 


এছাড়া ধুপগুড়ি, মালবাজার ও বানারহাট হাসপাতালেও শিশুদের নিয়ে মায়েদের ভিড় চোখে পড়ার মত। ধুপগুড়িতে বেশিরভাগ শিশুদের জ্বর এবং মাথাব্যথা। অন্যদের পেট খারাপ। এমনকি ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত চার শিশুকে ধুপগুড়ি হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়েছে। বানারহাট হাসপাতালে প্রায় ১০০ জন রোগী ভাইরাল জ্বরের চিকিৎসার জন্য আসে, যার মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় কয়েকজনকে, তবে সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। কয়েকজন শিশুকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালেও স্থানান্তরিত করা হয়েছে। 


স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত প্রায় ১৪ টি শিশু গত কয়েক দিনে মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বানারহাট হাসপাতালে ১০০ জন রোগী ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের ওষুধ দেওয়া হয়।


কোচবিহারের পরিস্থিতিও সঙ্কটজনক। জানা গিয়েছে, এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৮৪ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। যেখানে সাধারণত দিনে ১০ থেকে ১৫ জন শিশু ভর্তি হয়, পরিস্থিতি সংকটজনক হওয়ায় দিনে ৩০ জন করে শিশুও ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে সোমবার ২৮, রবিবার ৩১, শনিবার ২৮ শুক্রবার ২২ টি শিশু ভর্তি হয়েছিল এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন করে ১০ শিশু ভর্তি হয়।


হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি শিশুই ভাইরাল জ্বর, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই জেলার প্রতিটি হাসপাতালে সুপারের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডঃ সুকান্ত বিশ্বাস। 


একে করোনা আতঙ্ক এখনও কাটেনি, তাঁর ওপর আবার অজানা জ্বর জাঁকিয়ে বসেছে। দুইয়ের যাঁতাকলে পিষে কী করবেন, কোথায় যাবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না শিশুদের পরিবার।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad