প্রেসকার্ড নিউজ ডেস্ক: আফগানিস্তান এখন তালিবানদের দখলে রয়েছে এবং তালিবানের শীর্ষ কমান্ডাররা সারা বিশ্ব থেকে তালিবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। এই শীর্ষ তালিবান কমান্ডারদের মধ্যে একজন হলেন শের মোহাম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজাই, যার ভারত ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে পুরনো সম্পর্ক রয়েছে। স্ট্যানিকজাই ১৯৮২ সালে দেরাদুনের ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি (আইএমএ) থেকে প্রি-কমিশনিং প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
স্ট্যানিকজাই গত কয়েক বছর ধরে কাতারের রাজধানী দোহায় বসবাস করছে এবং তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে। গত বছর, মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় তালিবান প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিল স্ট্যানিকজাই। যদিও, এই আলোচনা সফল হয়নি এবং তালিবান সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের জোরে আফগানিস্তান দখল করে। মনে করা হচ্ছে যে, আফগানিস্তানে তালিবান সরকার গঠন করলে স্ট্যানিকজাইকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হতে পারে।
প্রসঙ্গত, শের মোহাম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজাই ১৯৮২ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দেরাদুনের আইএমএ থেকে প্রি-কমিশনিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সন্দীপ থাপারও স্ট্যানিকজাইয়ের সাথে এই কোর্সে (ব্যাচে) ছিলেন। থাপার এখন সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন, কিন্তু 'শেরু' তার এখনও মনে আছে। কারণ স্ট্যানিকজাই আইএমএতে শেরু নামে পরিচিত ছিল। সর্বভারতীয় এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বিশেষ আলাপচারিতায় ব্রিগেডিয়ার থাপার জানান যে, তার ব্যাচে চারজন আফগান ভদ্রলোক বিদেশী ক্যাডেট ছিলেন। শেরু ছিল সেই চারজনের একজন। অন্যান্য আফগান ক্যাডেটদের মতো শেরুও ছিল খুবই গুরুগম্ভীর প্রকৃতির ছিল। সে সাধারণ ক্যাডেটদের মতো শারীরিক ড্রিলও করত।
ব্রিগেডিয়ার থাপারের মতে, 'প্রশিক্ষণের সময় কখনই মনে হয়নি যে শেরু কখনও মুজাহিদীন (যে পরবর্তীতে তালিবান গঠন করেছিল) হতে পারে। সম্প্রতি, যখন কাতারের রাজধানী দোহা থেকে তালিবান প্রতিনিধি দলের ছবি বিশ্ববাসীর সামনে আসে, তখন তিনি তাকে দ্রুত চিনে ফেলেন। ব্রিগেডিয়ার থাপারের মতে, শের মোহাম্মদ আবাস তালিবানের নতুন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি আশা করেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে স্ট্যানিকজাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজাই ওরফে শেরু ১৯৮২ সালে আইএমএ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আফগান সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। এই সময়টা ছিল যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছিল। কয়েক বছর পরে, স্ট্যানিকজাই আফগান সেনাবাহিনী ছেড়ে তালিবানে যোগ দেয়। তখন তালিবান পাকিস্তান ও আমেরিকার নির্দেশে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছিল।
১৯৯৬ সালে যখন তালিবানরা প্রথম আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে, তখন স্ট্যানিকজাইকে উপ -পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়। পরবর্তীতে আমেরিকা যখন আফগানিস্তান থেকে তালিবানদের উৎখাত করে, তখন স্ট্যানিকজাইও বাকি কমান্ডারদের নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যায়। গত কয়েক বছর ধরে তিনি কাতারের রাজধানী দোহায় ছিলেন। আমেরিকার সঙ্গে তালিবানদের চলমান শান্তি আলোচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দশক ধরে আফগানিস্তান এবং অন্যান্য বন্ধু দেশ থেকে ক্যাডেটরা আইএমএ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যান্য মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে প্রি-কমিশনিং প্রশিক্ষণের জন্য আসেন। বর্তমানে আফগান সেনাবাহিনীর প্রায় ৬০ জন ক্যাডেট আইএমএ -তে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
No comments:
Post a Comment