কুরবানিতে আর বাড়ি ফেরা হল না হাওড়ায় কর্মরত তিন শ্রমিকের - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, 8 July 2021

কুরবানিতে আর বাড়ি ফেরা হল না হাওড়ায় কর্মরত তিন শ্রমিকের


নিজস্ব সংবাদদাতা, বীরভূম: আর বাড়ি ফিরে যমজ সন্তানের মুখ দেখা হল না জাকিরের। দুই সন্তানের দুধের খরচ মাসে সাত হাজার দু’শো টাকা এখন কীভাবে জোগাড় হবে সেই চিন্তাই ভেঙে পড়েছে পরিবার। আর কুরবানির আগে মোটা টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল সাবির ও আলামিনের। কিন্তু তার আগেই হাওড়ার জয়পুর থানার ঝামটিয়া গ্রামে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু হল বীরভূমের নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের নওয়াপাড়ার গ্রামের তিন যুবকের।

জেলায় কাজের অভাব। কাজ থাকলেও আয় কম। তাই বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তের যুবক ভিন জেলা এমনকি ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয় কাজের খোঁজে। সেখানে বাড়তি উপার্জন করে বাড়িতে পাঠায় তাঁরা। সেই টাকায় চলে সংসার। শুধু উৎসবে বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মাতেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। অভাবের কারনেই বীরভূমের নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের নওয়াপাড়া গ্রামের অধিকাংশ যুবকই আজ গ্রাম ছাড়া। একইভাবে ঈদের পরেই গ্রাম ছেড়ে হাওড়া জেলার জয়পুর থানা এলাকায় শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন সাবির শেখ (৩৪), আলামিন শেখ (২৫) ও জাকির শেখ (৩৩)। মঙ্গলবার দুপুরে জয়পুর থানার ঝামটিয়া গ্রামে একটি নবনির্মিত সেফটিক ট্যাঙ্কের সেন্টারিংয়ের পাটা খুলতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু হয় তিনজনের। অসুস্থ একই গ্রামের নাজিম শেখ নামে আরও এক যুবক। তাকে জয়পুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে গ্রামের তিন যুবকের মৃত্যু সংবাদ পৌঁছতেই কান্নাই ভেঙে পরেন পরিবারের সদস্যরা। গোটা গ্রাম শোকস্তব্ধ। গ্রামের বাসিন্দা সামিরুল শেখ, কবিরুল ইসলামরা বলেন, “এলাকায় তেমন কাজ নেই। তাই বেশির ভাগ সময় গ্রামের যুবকরা রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরে কাজ করতে যায়। কারন এলাকায় কাজের যা বহর তাতে সংসার চালান দুষ্কর। সেই কারনেই ৮-১০ জন মিলে হাওড়ায় কাজ করতে গিয়েছিল তাঁরা। কিন্তু তিনজন যে আর ফিরবে না ভাবতেও পারছি না”।

গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, “জাকিরের বাড়িতে রয়েছেন বাবা, বড় ভাই, বৌদি, বোন, নিজের স্ত্রী, এক মেয়ে এবং মাস তিনেকের যমজ পুত্র সন্তান। মায়ের দুধের অভাব থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শে মাসে ৭২০০ টাকার কৌট দুধ কিনে খাওয়াতে হয় যমজ শিশু সন্তানদের। সেই টাকা দিতেই এই সপ্তাহে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। ঠিক ছিল সেপটিক ট্যাঙ্কের সেন্টারিংয়ের পাটা খোলার পর টাকা পাওয়া যাবে। সেই টাকা নিয়ে ফিরবে। আলামিনের বাড়িতে দুই মেয়ে। মাস তিনেক আগে দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যু হয়েছে। বাড়িতে মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে নিয়ে সংসার। আর সাবিরের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদীঘি থানার ইমামনগর গ্রামে। নওয়াপাড়া গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতেই থাকতে শুরু করে। তাঁর দুই বিবাহযোগ্যা মেয়ে রয়েছে বাড়িতে। তিনজনের মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা অসহায় হয়ে পড়েছে।”

জাকিরের মা মানোয়ারা বিবি বলেন, “ছেলে পেতের দায়ে বেশি আয়ের জন্য বাইরে কাজ করতে গিয়েছিল। এলাকায় কাজ থাকলেও আয় খুব কম। বেশি আয় করতে গিয়ে আমার ছেলেটাই চলে গেল।”

নওয়াপাড়া পঞ্চায়েত প্রধান এমদাদুল হক বলেন, “গ্রামের অধিকাংশ যুবক বাইরে কাজ করে। এরাও বাইরে কাজ করতে গিয়েছিল বেশি উপার্জ‌নের জন্য। বেশি আয় করে মা-বাবা পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে। স্বচ্ছল চলবে সংসার। কিন্তু তিন জনের মৃত্যু সব সুখ ছিনিয়ে গেল। পরিবার গুলির অবস্থা এখন শোচনীয়।”

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad