করোনার পর এবার বার্ড ফ্লু। আঁতুরঘর সেই চীন। একেই করোনার সঙ্কটকাল চলছে বিশ্বজুড়ে। এবারে নতুন ভয়ের জন্ম দিতে হাজির বার্ড ফ্লু। নেপথ্যে সেই চীন! সে দেশের পূর্ব জিয়াংসুতে বার্ড ফ্লুয়ের H10N3 স্ট্রেনে সংক্রমিত হয়েছেন এক ব্যক্তি। মঙ্গলবার সেই বার্তাই প্রকাশ্যে এনেছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। বার্ড ফ্লু এবারে মানুষের শরীরেও।
চীনের এক স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম CGTN TV সূত্রে খবর, ঝিনজিয়াং শহরের ওই রোগীর শরীরে পাওয়া গিয়েছে এই ভাইরাস। রোগীর বয়স ৪১ বছর। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। জানা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রথমে এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে চায়নি। তাঁদের দাবি, পোল্ট্রি থেকেই একজনের শরীরেই সংক্রমণ হয়েছে। এটি কখনই মহামারির আকার নিতে পারে না।
প্রসঙ্গত, ২৮ শে মে রোগীর শরীরে থাকা ভাইরাসকে H10N3 এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে কীভাবে সেই ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন ।
উল্লেখ্য, এই প্রথম H10N3 ভাইরাসের সঙ্গে মানুষের সরাসরি সংক্রমণ ঘটলো। এর আগে বিশ্বজুড়ে H10N3 ভাইরাসের সঙ্গে মানুষের সংক্রমণের কোনও ঘটনা ঘটেনি। H10N3 সাধারণত হাঁস-মুরগির শরীরে দেখা যায়। এটি তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর স্ট্রেন এবং এটির বৃহত্তর আকারে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুব কম বলে জানাচ্ছেন সে দেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা।
চিনে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার বিভিন্ন স্ট্রেন রয়েছে এবং কিছু বিক্ষিপ্তভাবে সংক্রামিত লোকজন রয়েছে। তাঁরা সাধারণত পোলট্রি ফার্মের সঙ্গে যুক্ত। H5N8 ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের একটি সাব টাইপ যেটি বার্ড ফ্লু ভাইরাস নামে পরিচিত। যদিও H5N8 মানুষের পক্ষে কম ঝুঁকিপূর্ণ তবে এটি বন্য পাখি এবং হাঁস-মুরগির জন্য অত্যন্ত মারাত্মক।
প্রসঙ্গত, বছরের শুরুতে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বার্ড ফ্লুয়ের সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল। বছরের শুরুতেই রাজস্থানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে প্রথম এই ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। তার পর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কেরল, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ ও গুজরাটে। এই রাজ্যগুলির বিভিন্ন প্রান্তে বহু সংখ্যায় কাক, পরিযায়ী পাখি, মুরগি মারা যাওয়ার খবর আসতে থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই করোনার আবহে তা আরও শঙ্কা বাড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসন সতর্ক হতে শুরু করে। কেরল সরকার বার্ড ফ্লু’কে রাজ্যে বিশেষ বিপর্যয় ঘোষণা করে দেয়। সেখানে সংক্রমিত এলাকায় মুরগির মাংস বিক্রি এবং খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়। হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলায় দু’দিনের মধ্যে এই রোগে প্রায় আড়াই হাজার পরিযায়ী পাখির মৃত্যু ঘটে।
সেখানে মুরগির মাংস কেনা, বেচা, আমদানি-রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ আপাতত। অন্য রাজ্যগুলোও সব রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার হাই অ্যালার্ট জারি করে দেশের সব রাজ্যকে এই রোগ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং বিভিন্ন রাজ্যে পাখির রক্তের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। যেখান থেকে পাখিমৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে সেই জায়গাকে বিশেষ সংক্রমিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানকার মানুষের মধ্যে প্রচার ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপৎকালীন ভিত্তিতে কাজ শুরু করে দিয়েছে বিভিন্ন রাজ্যসরকারও।
কিন্তু এতে এখনই এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রথমে বুঝতে হবে বার্ড ফ্লু-র লক্ষণগুলো কী। সাধারণ ভাবে জ্বর, পেশিতে ব্যথা, কাশি, মাথার যন্ত্রণা!তার সঙ্গে শরীরে দুর্বলতা। ডায়েরিয়া, বুকে ব্যথাও হতে পারে।
অন্য ভাইরাসঘটিত রোগের মতোই বার্ড ফ্লু’ও ভালো হয় শরীরের স্বাভাবিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে। তবে একটু সতর্ক হলে আটকেই দেওয়া যায় এই রোগকে। কী সেগুলো?
১) কোনও পাখি হোক বা পাখির খাঁচা— এগুলো ছোঁয়া বা এগুলোর কাছাকাছি যাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
২) পাখির মাংস হোক বা অন্য কোনও মাংস— রান্না করার বাসনগুলো আলাদা ভাবে রাখতে হবে।
৩) মাংস খেতে হবে ভালো করে সেদ্ধ করে।
৪) যাঁরা পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করতে যান, তাঁরা কাজ করার আগে-পরে সাবান আর গরম জল দিয়ে হাত-পা ধুয়ে নিতে হবে।
৫) পাখির মৃতদেহ পড়ে থাকলে, তার ধারে কাছে না যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, স্পর্শ করা চলবে না। করতে হলে খুব সাবধান হয়ে স্পর্শ করতে হবে, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে, স্পর্শ করার পরে।
৬) আধসেদ্ধ ডিম বা মাংসে নৈব নৈব চ।
Post Top Ad
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment