ফের গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ! ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে গেল হংকংয়ে। গণতন্ত্রকামীদের স্মরণে মোমবাতি জ্বালাতে চেয়েছিলেন চাউ হাং তুং। এই ছিল তাঁর অপরাধ। এই ‘অপরাধে’ তাঁকে গ্রেপ্তার করল হংকং পুলিশ। ৪ জুন তিয়েন আনমেন দিবস। চিনের দমননীতির প্রতিবাদে ও নিহত গণতন্ত্রকামীদের স্মরণে আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে মোমবাতি জ্বালাতে চেয়েছিলেন চাউ হাং তুং। এই চাওয়ার কারণে গ্রেপ্তার হতে হলো তাঁকে। উল্লেখ্য, গত বছরও এই দিনটিতে হাজার-হাজার মানুষ জড়ো হয়ে চিনের ‘দমননীতি’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।
চাউ হাং তুং হলেন হংকংয়ের গণতন্ত্রের দাবিতে সরব এক গোষ্ঠীর সদস্য। প্রতিবারই এই দিনে তাঁরা বিরাট জমায়েতের আয়োজন করেন। এবার সেই জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। এরই মাঝে শুক্রবার সকালে শহরে ভিক্টোরিয়া পার্কে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল, ‘শহিদ’দের প্রতি সম্মান জানিয়ে মোমবাতি জ্বালাবেন। ঘটনা জানতে পেরে সেই একই পথে রওনা হতেই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। হংকংয়ের বাসিন্দারা যেন কোনোভাবেই তিয়েন আনমেন দিবস পালন করতে না পারেন সে দিকেই পাখির চোখ প্রশাসনের। রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনা ও পুলিশ। তাঁদের এই আচরণকে ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ শাসনের উদাহরণ বলে দাবি করেছেন হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীরা। উল্লেখ্য, চিনের মূল ভূখণ্ডে তিয়েন আনমেন দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ। হংকংয়ে যাতে চিনবিরোধী কোনও জমায়েত না হয়, তার দিকে কড়া নজর রাখছে প্রশাসন।
গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে চাউ হাং তুংয়ের সহযোদ্ধারা জানিয়েছেন, “ও (চাউ হাং তুং) শুধুমাত্র ভিক্টোরিয়া পার্কে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সেখানে গিয়ে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহতদের স্মরণ করতে চেয়েছিলেন।” যদিও হংকং প্রশাসনের দাবি, চাউ হাং অবৈধ জমায়েত করার চেষ্টা করছিলেন। বেআইনি কাজের জন্য ওই গণতন্ত্রকামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, হংকংয়ের বহু গণতন্ত্রকামীই আপাতত জেলবন্দী। এমনকী আন্দোলনকারী গোষ্ঠীগুলির অফিসের বাইরে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে।
চীনের আদর্শ অনেকদিন ধরে পৃথিবীর বামপন্থী মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। কিন্তু কখন সে বিচ্যুত হয়েছে আদর্শে, কখন সে সাধারণের উপর নামিয়ে এনেছে শাসনের তীব্রতা, তা বোধহয় শাসক হিসেবে মনেও নেই তার। কিন্তু চীনের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ তাদের অধিকার ছেড়ে দিতে নারাজ। তাই বৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করেই তারা চীন নেমেছে রাস্তায়। বেজিং শহর বারবার লোকে লোকারণ্য হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখে লাখে লোক নেমে এসেছেন পোস্টার, ব্যানার হাতে, তুলেছেন স্লোগান। বিক্ষোভকারীরা এমন একটি আইনের প্রতিবাদ করছিলেন যা কার্যকর হলে হংকং-এর কোনও ব্যক্তিকে বিচারের জন্য চীনের মূলভূমিতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে পাবে প্রশাসন। অভিযোগ, তাহলে হংকংয়ের নিজস্ব বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। তীব্র প্রতিবাদের কারণেই ইতিমধ্যে এই বিলটি স্থগিত করে দেয় সরকার। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভ চলতে থাকে এবং প্রশাসনিক প্রধান ক্যারি ল্যামের পদত্যাগের দাবি ওঠে। বিক্ষোভের মধ্যেই শেনজেন সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে চীন। সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বেজিং জানিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, ‘আমরা দু’মাস ধরে লড়াই করছি। কিন্তু আমাদের সরকার তা সত্ত্বেও সাড়া দিচ্ছে না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব।’
No comments:
Post a Comment