হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। উডল্যান্ড হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেও আজ পাম এভিনিউয়ের বাড়িতে ফিরছেন না তিনি। এক সপ্তাহ এন্টালির একটি নার্সিংহোমে আইসোলেশনে থাকতে হবে তাঁকে।
করোনাকে হারিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের স্ত্রী মিরাদেবীও। তিনিও পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে যাচ্ছেন না। জানা গিয়েছে, চিকিৎসকদের পরামর্শমতো আগামী সপ্তাহখানেক দক্ষিণ কলকাতার একটি সেফ হোমে থাকবেন দু’জনেই।
উল্লেখ্য, গত মাসেই করোনা আক্রান্ত হন সস্ত্রীক রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। হাসপাতালে ভরতি হয়ে চিকিৎসা করাতে নারাজ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাই বাড়িতে থেকেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তবে তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যকে ভরতি করা হয়েছিল হাসপাতালে। কয়েকদিনের মধ্যেই বাড়ি ফেরেন তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। তার ঠিক পরেরদিনই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় অনেকটাই। তাই তাঁকে হাসপাতালে ভরতির সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। সেই অনুযায়ী হাসপাতালে ভরতি হন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ভরতি করা হয় উডল্যান্ডস হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তার কৌশিক চক্রবর্তী, ধ্রুব ভট্টাচার্য, সৌতিক পণ্ডার অধীনে চিকিৎসা শুরু হয়। পরে তাঁর জন্য ৫ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। এদিকে, তাঁর স্ত্রীর আবার প্যানিক অ্যাটাক হয়। তাঁকেও ওই একই হাসপাতালে ভরতি করা হয়।
ভরতি হওয়ার পর থেকে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই চিকিৎসকদের নজরে ছিলেন সস্ত্রীক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বাইপ্যাপের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। এছাড়াও রেমডেসিভিরও দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে। তাতেই শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় তাঁর। হাসপাতালে ভরতির সময় ঝিমুনি ভাব থাকলেও তা কয়েকদিনের মধ্যে কেটে যায়। অন্য সমস্যা দুঃসচিন্তা না বাড়ালেও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি শুকনো কাশি চিন্তায় রাখছিল। কিছুতেই কমছিল শুকনো কাশি ও শ্বাসকষ্ট। তবে এখন অনেকটাই স্বস্তি। কাশি কমে গিয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর। মঙ্গলবার উডল্যান্ড হাসপাতালের তরফে মেডিক্যাল বুলেটিন প্রকাশ করে জানানো হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর শারীরিক পরিস্থিতির কথা। কোনওরকম যান্ত্রিক সহায়তা ছাড়াই খেতেও শুরু করেন তিনি। কথাও বলছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
এই মুহূর্তে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশ, যা স্বাভাবিক। পালস রেট প্রতি মিনিটে ৬৫। মাঝে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়ায় নতুন করে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে সেই মাত্রাও স্বাভাবিক। তাঁকে গ্লুকোজ এবং অন্যান্য খাবার তরলাকারে খাওয়ানো হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিজেই খেতে পারছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কথাও বলছেন স্বাভাবিকভাবে। সামান্য শ্বাসকষ্ট রয়েছে। করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধ রেমডেসিভির ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে। সেই কোর্সও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে দুটি ওষুধ এখনও চলছে। সবমিলিয়ে, গত এক সপ্তাহে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর শারীরিক অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে বলেই সন্তোষপ্রকাশ করেছেন উডল্যান্ডসের চিকিৎসকরা।
খাবার, ঘুমের পাশাপাশি দু-একদিন আগে রাজ্য তথা গোটা দেশে কী ঘটছে, তা জানতে খবরও দেখেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বুধবারই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো আপাতত সপ্তাহখানেক নিভৃতবাসে থাকতে হবে তাঁকে। তাই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে যাচ্ছেন না সস্ত্রীক বুদ্ধবাবু। পরিবর্তে দক্ষিণ কলকাতার একটি সেফ হোমে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
No comments:
Post a Comment