প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির তোয়াক্কা না করেই যশ রিভিউ মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে যান মমতা : মুখ্যমন্ত্রী'কে কড়া চিঠি কেন্দ্রের - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, 2 June 2021

প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির তোয়াক্কা না করেই যশ রিভিউ মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে যান মমতা : মুখ্যমন্ত্রী'কে কড়া চিঠি কেন্দ্রের








ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু কলাইকুন্ডার ‘যশ’ রিভিউ মিটিং। কেন্দ্র-রাজ্যের সর্বশেষ ঠান্ডা লড়াইয়ের ইস্যু। গত শুক্রবারের সেই বৈঠক নিয়ে এখনও চলছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের চিঠিচাপাটি। কেন্দ্রের দাবি, ওই বৈঠক প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠক বয়কট করেছেন। 


রাজ্যের সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলির প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সোমবার দিল্লিতে যে চিঠি লিখেছিলেন, তাতে তিনি স্পষ্ট করে জানান, তিনি কলাইকুন্ডার বৈঠক থেকে মুখ্যসচিবকে নিয়ে দিঘায় বিপর্যয় খতিয়ে দেখতে রওনা হওয়ার আগে ‘নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট ভাবে’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুমতি নিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, তিনি যেহেতু অনুমতি নিয়েই বৈঠক ত্যাগ করেছেন, তাই সেটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করে বিষয়টিতে ইতি টানা উচিত ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র এদিন একাধিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে সেদিনের বৈঠক ছাড়ার কোনও অনুমতি দেননি। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষ হওয়া পর্যন্ত তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সরকারি আমলাদেরও বৈঠকে যোগ দিতে দেননি বলে ওই সূত্রের অভিযোগ।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর ডাকা রিভিউ মিটিং এবং আলাপন ইস্যুতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে কেন্দ্রকে পাঁচ পাতার চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন তুলেছিলেন, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের এক সূত্র মমতার সেই চিঠির পালটা ৯ টি বিষয় উত্থাপন করেছে। সোমবারের চিঠিতে মমতা জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি ঠিক হওয়ার আগে থেকেই তাঁর দিঘা সফরের পরিকল্পনা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য তাতে রদবদলও করেন তিনি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলেই কলাইকুন্ডা যাওয়ার আগে হিঙ্গলগঞ্জ ও সাগরে যান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর চপারের জন্যই সাগরে তাঁর চপার আটকে দেওয়া হয়। তিনি ২০ মিনিট সেখানে অপেক্ষা করেন। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী বেলা আড়াইটের আগেই কলাইকুন্ডা পৌঁছেছিলেন।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রের ওই সূত্রের পালটা দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর আগেই কলাইকুন্ডা পৌঁছানো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেখানে ১ টা ৫৯ মিনিটে কলাইকুন্ডা পৌঁছে যান, সেখানে মমতা পৌঁছান ২টো ১০ মিনিটে। যা ‘প্রোটোকল’ বিরোধী। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রী আটকে গেলেও রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র এবং জেলাশাসক সেখানে ছিলেন। সুতরাং, এতে প্রোটোকল ভঙ্গ হয়নি। মমতার যুক্তি ছিল, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘যশ’ নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বার্তা পাঠালে ইতিবাচক ইঙ্গিতও মেলে। কিন্তু শেষমুহূর্তে বৈঠকের কাঠামো বদলে দেন প্রধানমন্ত্রী। ডেকে নেওয়া হয় স্থানীয় বিধায়ককে। মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে স্থানীয় বিধায়কের ডাক পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের পালটা যুক্তি, ওই বিধায়ক আর কেউ নন, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর এর আগেও একাধিক রাজ্যে বিরোধী দলনেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রিভিউ মিটিং করার উদাহরণ আছে। তৃণমূল পালটা প্রশ্ন তুলছে, দিন কয়েক আগেই তাউকতের পর গুজরাটের পরিস্থিতি নিয়ে রিভিউ মিটিংয়ে কংগ্রেসের তরফের বিরোধী দলনেতাকে ডাকা হয়নি। তাহলে এরাজ্যে শুভেন্দুকে বৈঠকে ডাকা হল কেন?

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে তলবের বিষয়ে মমতার সরাসরি অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের মানুষের স্বার্থ বিরোধী। কিন্তু কেন্দ্র বলছে, আলাপন নিজের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেননি বলেই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কলাইকুণ্ডার সেই বৈঠককে ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্যের যে সংঘাত শুরু হয়েছে, তা দীর্ঘায়িত হবে বলেই মত প্রশাসনিক মহলের। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যেখানে সরকারিভাবে চিঠি লিখেছেন, সেই চিঠির জবাব সরকারিভাবে দেওয়ার আগেই সূত্র মারফৎ তা ফাঁস হয়ে গিয়েছে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

অন্যদিকে সোমবারই আলাপনবাবুকে দিল্লির তরফে শোকজ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের আন্ডার সেক্রেটারি আশিস কুমার সিং চিঠিটি পাঠিয়েছেন। আলাপনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে শুক্রবার কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা রিভিউ মিটিংয়ে তিনি কেন ছিলেন না? ওই বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে আলাপন বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১ (বি) ধারা ভঙ্গ করেছেন বলেও দাবি করা হয়েছে নোটিসে। আলাপনের বিরুদ্ধে কেন কেন্দ্রীয় সরকার কোনও পদক্ষেপ করবে না তারও ব্যাখ্যা চেয়েছেন আশিস কুমার সিং। নবান্ন সূত্রের খবর, যথাসময়ে আলাপনবাবু কেন্দ্রের পাঠানো শোকজের জবাব দেবেন। তিনদিনের মধ্যে জবাব চেয়েছে কেন্দ্র। এই মোতাবেক আগামীকাল অৰ্থাৎ বৃহস্পতিবার কারণ নির্দেশের শেষদিন।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad