করোনার করাল গ্রাসে প্রায় শেষ লগ্নে ভারতের অর্থিনীতির বয়স। এই সমস্যা কেবল ভারতের নয়। গোটা বিশ্বের। ব্যতিক্রম কেবল চিন। করোনা মহামারিতে দেশ তথা সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতির
বাজার যেমন ভেঙে পড়েছে, কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো। গতানুগতিকতাকে পেছনে ফেলে করোনাকালে চীনের অর্থনীতির সূচক ঊর্ধগামী। তবে এ তো গেল চীনের কথা। ভারতের ছবিটা উল্টো। অতিমারীর বড় ধাক্কা লেগেছে দেশের অর্থনীতিতে। দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড প্রায় ভাঙতে বসেছে। কিন্তু এই ভাঙ্গনের পরিমাণ ঠিক কতটা, তা নিয়ে চলছিল জল্পনা। অবশেষে প্রকাশ্যে এলো তথ্য। জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর জানিয়ে দিল, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে অর্থনীতির সঙ্কোচন হয়েছে ৭.৩ শতাংশ। আর অর্থনীতির এই ফলাফল বিগত চার দশকের সবথেকে খারাপ।
করোনা ভাইরাসের দাপটে গত অর্থবর্ষের প্রথম তিনমাসে (এপ্রিল, ’২০ থেকে জুন, ’২০) ভারতের জিডিপি বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন রেকর্ড ২৪.৩৮ শতাংশ সংকুচিত হয়। পরবর্তী সময় পর্যায়ক্রমে বেশ খানিকটা উন্নতি হয়। গত অর্থবর্ষের শেষ তিনমাসে (জানুয়ারি, ’২১ থেকে মার্চ, ’২১) জিডিপি বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১.৬ শতাংশে। টানা প্রায় আট মাস লকডাউন চলার পর সরকার গত জুলাইয়ে আনলক পর্ব বা নিউ নর্মাল পর্ব চালু করে। এই আনলক পর্ব থেকেই কিছুটা হলেও অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করে। গত অর্থবর্ষের জুলাই, ’২০ থেকে সেপ্টেম্বর, ’২০, এই তিনমাসে জিডিপি বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৭.৫ শতাংশে। যা যথেষ্ট ভাল বলেই মনে করছেন দেশের অর্থিনীতিবিদরা।
২০১১-২২ অর্থবর্ষ থেকে জিডিপি বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হয়েছে করোনার জেরে। প্রথম সংশোধনী হিসেব অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৪৫.৬৯ লক্ষ কোটি টাকা। যা প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবর্ষ কমে হয়েছে ১৩৫.১৩ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ সঙ্কোচন হয়েছে ৭.৩ শতাংশ। উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। যা তার আগের ১১ বছরের মধ্যে সব থেকে কম।
অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, গত অর্থবর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের জিডিপির ফলাফল নিয়ে। চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২১ এ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কারখানা, অফিস খোলা ছিল। স্বাভাবিক ছন্দেই কেটেছে দেশের কর্মকান্ড। কিন্তু লাভের লাভ খুবই কম। সেক্ষেত্রে জিডিপি বৃদ্ধির হার মাত্র ১.৬ শতাংশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলেও দেশের অর্থনীতির হাল ফিরছে না। যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
অর্থনীতিবিদদের অনেকের ধারণা, এই সময় সব খোলা থাকলেও, ব্যবসা এবং উৎপাদন স্বাভাবিক গতি পায়নি। কারণ, করোনা অতিমারীর জেরে বহু মানুষ রোজগার হারিয়েছেন। বহু মানুষের আয় কমেছে। সবমিলিয়ে সাধারণ মানুষের আর্থিক সংকট বেড়েছে অনেকটাই। এরপর মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত ছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা। আগের বার লকডাউনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে হাতে নগদ টাকা রেখে দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। আর দেশের মধ্যবিত্তের চাহিদা এবং ক্রয় ক্ষমতার ওপরই ব্যবসা ও উৎপাদনের গতিপ্রকৃতির সিংহভাগ নির্ভর করে। চতুর্থ ত্রৈমাসিকের ফলে সেই অনিশ্চয়তা এবং সংকটের চিত্রটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের অনুমান, চলতি ২০২১-২২ অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে পারে আট শতাংশ। যা রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার পূর্বাভাসের থেকেও ০.৫ শতাংশ বেশি। কিন্তু, দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ংকর রূপ নিয়ে আছড়ে পড়ায় সংক্রমণ রুখতে প্রায় সব রাজ্যকে ৩০ থেকে ৪৫ দিনের লকডাউনের রাস্তায় হাঁটতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবর্ষ শেষে জিডিপির বৃদ্ধির পূর্বাভাস কতটা মিলবে তা নিয়ে আশঙ্কা থাকছেই। আশঙ্কা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরেও।
আশঙ্কা ছিলই। বাস্তবে সেটাই প্রতিফলিত হলো। করোনার প্রবল প্রভাব পড়ল ভারতীয় অর্থনীতিতে। জানুয়ারি-ডিসেম্বরের আর্থিক কোয়ার্টারে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ১.৬ শতাংশ। জিডিপি সম্পর্কে ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অর্গানাইজেশন এই তথ্য জানিয়েছে। যা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। আর্থিক বৃদ্ধি ৭.৩ শতাংশ ঘাটতি থাকায় তা ঋণাত্মক দিকে যাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
Post Top Ad
Tuesday, 1 June 2021
বিগত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পতন ভারতের অর্থনীতিতে : জিডিপি পৌঁছলো -৭.৩%
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment