ঘটনাটি ২৩ মে’র। গ্রীসের এথেন্স থেকে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াস যাচ্ছিল রায়ান এয়ারের ফ্লাইট ৪৯৭৮। বিমান যখন ভিলনিয়াসের প্রায় কাছে তখন পাইলট ঘোষণা করলেন, তিনি পাশের দেশ বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে জরুরী অবতরণ করতে যাচ্ছেন। বিমানের ১৭১ জন যাত্রী যখন এর কারণ খুজছিলেন, তখন একজন যাত্রী বুঝে গেলেন আসলে কি ঘটতে যাচ্ছে। তিনি ২৬ বছর বয়সী সাংবাদিক রোমান প্রোতেসেভিচ। দ্রুত হাতে তিনি তিনি তার ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনটি পাশের নারী সঙ্গীর হাতে দিলেন। বাকি যাত্রীরা জানতেও পারলেন না দুটি মিগ-২৯ জঙ্গি বিমান রায়ান এয়ারের ফ্লাইটটিকে রিতিমতো পাহারা দিয়ে মিনস্কে নামতে বাধ্য করেছে।
বিমান অবতরণের পর বেলারুশের সেনা সদস্যরা রোমান প্রোতেসেভিচ ও তার বান্ধবীকে তুলে নেন। মূলত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কা যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে সাংবাদিক রোমান প্রোতেসেভিচ নামিয়ে আনতে বাধ্য করেছেন। পাইলটকে বলা হয়েছিলো বিমানে বোমা হামলার হুমকি আছে। পরে যা ভূয়া প্রমাণ হয়েছে।
গেলো কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের সবচে নিলজ্জ একনায়কের তকমা পেয়ে আসছেন ৬৬ বছর প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কা। ১৯৯৪ সাল থেকেই তিনি ক্ষমতায়। গেলো বছরের আগষ্টের নির্বাচনেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। সেই নির্বাচনের কোন সংবাদ প্রচার করতে দেননি লুকাশেঙ্কা। ২০১৯ সালেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাংবাদিক প্রোতেসেভিচ। কিন্তু বিদেশে বসেই নেক্সাটা নামের একটি বিকল্প গণমাধ্যমের সাহায্যে তিনি বেলারুশের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির খবর প্রচার করেন। এটাই তার অপরাধ।
বিমানের সহযাত্রীদের কাছে বিদায় জানাতে গিয়ে প্রোতেসেভিচ বলেছেন তাঁর মৃত্যুদণ্ড হবে। হয়তো সেটাই হবে। কিংবা হয়তো আর কোনদিনই জানা যাবে না কেমন আছেন এই তরুন নির্ভিক সাংবাদিক।
এভাবে বিশ্বজুড়ে লুকাশেঙ্কাদের বিরুদ্ধে প্রোতেসেভিচরাই দাঁড়ান একা। নিরস্ত্র দাঁড়ায় সাংবাদিকতা। দু একজন প্রোতেসেভিচই বাঁচিয়ে দেন সাংবাদিকতাকে। স্যালুট প্রোতেসেভিচ।
লেখক : সুজন কবির। সিনিয়র সাংবাদিক। বাংলাদেশ। ৭১ টিভি।
No comments:
Post a Comment