বাংলায় তৃণমূলের বিদ্রোহীদের বোঝা সহ্য করতে পারেনি বিজেপি

প্রেসকার্ড নিউজ ডেস্ক: বিজেপি টিএমসির বড় নেতাদের নিজেদের দলে নেওয়া এবং নির্বাচনী প্রচারে পুরো শক্তি প্রয়োগের পরেও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ১০০ টি আসন জিততে পারেনি। তৃণমূল ২১৩ টি আসন জিতেছে। বিজেপি মাত্র ৭৭ টি। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হল তিন নেতা ছাড়া টিএমসি থেকে পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সমস্ত বিধায়কই এই নির্বাচনে হেরে গেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে টিএমসির বিদ্রোহীরা দল পরিবর্তন করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিল কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষমতা বিরোধী তরঙ্গ থেকে মুক্তি পেতে পারেনি।

টিএমসি থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া যে তিন নেতা বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ী হতে পেরেছেন তাদের মধ্যে প্রথম নাম শুভেন্দু অধিকারী, তিনি নন্দীগ্রাম থেকে জিতেছিলেন, যিনি টিএমসি সুপ্রিমো এবং সিএম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছেন। শুভেন্দু ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং ততদিন পর্যন্ত মমতার ঘনিষ্ঠ যোদ্ধা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৭ সালে টিএমসি থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায়ও কৃষ্ণনগর আসনে জিতেছেন যেখানে তিনি টলিউড অভিনেতা কৌশানী মুখোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছেন। উত্তরবঙ্গের নাটাবাড়ী আসন থেকে টিএমসির প্রাক্তন বিধায়ক মিহির গোস্বামীও জয়ী হয়েছেন, যিনি ২০২০ সালের নভেম্বরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।

নির্বাচন বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছেন যে ২০১৭ সাল থেকে ৩৭ টিএমসি বিধায়কসহ প্রায় ১৪০ জন নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ ২০২০ এর শেষদিকে এবং ২০২১ এর গোড়ার দিকে বিজেপিতে প্রবেশ করেছিলেন এবং টিকিট পেয়েছিলেন। তবে তা প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ই হোক বা সিঙ্গুর আন্দোলনের মূল চেহারা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, বা মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রংশু রায়, সবাই পরাজিত হয়েছেন। 

নির্বাচনের ধারার পরিবর্তনের মধ্যে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, "এটি সত্য যে আমরা কাঙ্ক্ষিত ফল পাইনি। ভুল কোথায় গেছে তা আমাদের দেখতে হবে।" বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ভবানীপুরে টিএমসি থেকে আগত রুদ্রনীল ঘোষকে মাঠে নামিয়েছে, যেখানে মমতা তার সরকারের জ্বালানীমন্ত্রী সোভানদেব চ্যাটার্জীকে মাঠে নামিয়েছিলেন। এখানেও ঘোষ হেরেছে। টিএমসি থেকে বিজেপিতে আসা বিধায়কদের মধ্যে ছিলেন বালির বৈশালি ডালমিয়া, ডায়মন্ড হারবার থেকে দীপক হালদার, উত্তরপাড়া থেকে প্রবীর ঘোষাল এবং কালনা আসন থেকে বিশ্বজিৎ কুণ্ডুও নির্বাচনে হেরে গেছে

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্রমাগত বিজেপিতে যোগ দেওয়া টিএমসি নেতাদের বিশ্বাসঘাতক বলছিলেন এবং অভিযোগ করেছিলেন যে যারা ছেড়ে গেছেন তারা সকলেই দুর্নীতির কবলে পড়েছেন। মমতা সরকারে মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি বলেছেন- "এই ফলাফলগুলি বহিরাগতদের সহায়তায় বাংলা দখলের চেষ্টার বিজেপির চেষ্টার, দুর্নীতিবাজ নেতাদের এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষা।"