মোদির সাথে আর বাংলাদেশে যেতে চান না মমতা! - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 16 April 2021

মোদির সাথে আর বাংলাদেশে যেতে চান না মমতা!


নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: "এরপর প্রধানমন্ত্রী নিজে বললেও তার সাথে বাংলাদেশ সফরে যাবেন না। দরকারে একা যাবেন, তবুও মোদির সাথে নয়," সাফ জানিয়ে দিলেন ক্ষুব্ধ মমতা। 

পশ্চিমবঙ্গে চলমান বিধানসভার নির্বাচন যত সামনের দিকে এগিয়ে আসছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়েও ততই ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি। রাজ্যের ২৯৪ টি বিধানসভার আসনে প্রথম দফার ভোট শুরু হয় গত ২৭ মার্চ। আর ওইদিন দুপুরে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের হরিচাঁদ ঠাকুর গুরুচঁদ ঠাকুরের মন্দির পরিদর্শন করেন এবং সেখানে পূজা দেন মোদি। মতুয়াদের সাথে মত বিনিময়ও করেন তিনি। এছাড়াও সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দিরও প্রদর্শন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এরপরই মোদির ওই কর্মসূচি নিয়ে প্রবল আপত্তি জানায় ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান। এমনকি মোদির বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচনে কমিশনেও অভিযোগ জানায় তারা। এরপরও একাধিক সভা-মিছিল থেকে মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে তোপ দাগেন মমতা।

কিন্তু শুক্রবার এই ইস্যুতে ফের মমতার নিশানায় মোদি। ক্ষুব্ধ মমতা সাফ জানিয়ে দিলেন ‘এরপর প্রধানমন্ত্রী নিজে বললেও তার সাথে বাংলাদেশ সফরে যাবেন না। দরকারে একা যাবেন, তবুও মোদির সাথে নয়। কারণ তিনি বাংলাদেশকে ভালবাসেন।’

ঠিক কি বলেছেন মমতা? এদিন দুপুরে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাবড়ায় দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে এক নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত থেকে মমতা বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি কেবল বলেন যে, মমতা ব্যানার্জি নাকি বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের ঢোকাচ্ছে। আর ভোটের সময় তিনি চুপি চুপি বাংলাদেশ গিয়ে দেখাচ্ছেন ভোট কাটতে হবে। মতুয়াদের ওখানে গিয়ে তিনি বলছেন ওদের সাথে দেখা করতে এসেছি। তবে এতদিন দেখা করেননি কেন?’

তিনি আরও বলেন ‘নরেন্দ্র মোদী যতবার বাংলাদেশ গেছে, প্রতিবার আমাকে ফোন করে বলেছে যে তোমায় আমার সাথে যেতে হবে। আমি না চাইলেও, নরেন্দ্র মোদিকে পছন্দ না করলেও প্রধানমন্ত্রী বলেছে বলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ভালো রাখার স্বার্থে বারবার গেছি। কিন্তু এবারের নির্বাচনের সময় তো তুমি আমায় যাওয়ার কথা বল নি। কারণ এটা তোমার ভোটের খেলা। এটা আসলে বাংলাদেশকে ভালোবাসা নয়। আর সেই কারণেই তুমি গিয়েছিলে তাই মমতা ব্যানার্জিকে তুমি সেদিন সাথে নিয়ে যাও নি। এরপরে মমতা ব্যানার্জিকে যদি তুমি কোনওদিন বলো, মমতা ব্যানার্জি তোমার সাথে আর বাংলাদেশে যাবে না। গেলেও একা যাবে। তোমার সাথে সে দেশে যাবে না কারণ বাংলাদেশকে আমি ভালোবাসি। আমি ওই দেশে যাব। তবে রাজনীতি করতে যাবো না।’

তবে মোদির বাংলাদেশ সফরই নয়, রাজ্যে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও মোদির বিজেপি সরকারকেই দায়ী করেছেন মমতা। তার অভিযোগ নির্বাচনী লড়াইয়ে না পেরে বিজেপি বাংলায় করোনা ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন ‘নতুন করে ফের কোভিড শুরু হয়েছে। রাজ্যে নরেন্দ্র মোদি সভার সভা হচ্ছে, বাইরে থেকে হাজার হাজার লোক এসে প্যান্ডেল করছে, সভা পরিচালনা করছে, বাইরের বহিরাগতরা বসে আছে, সব হোটেল, গেস্ট হাউজ ভর্তি। সমস্ত বহিরাগত গুন্ডারা বসে আছে। কার কোভিড হয়েছে আর কার হয় নি কি করে জানবো? সকলেই কোভিড নিয়ে এখানে চলে আসছে। দিল্লি থেকে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে তাদেরও অনেকে কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছে। দিল্লি, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান উত্তরপ্রদেশে কোভিড বাড়ছে। ওখান থেকে যারা রাজ্যে নির্বাচনের ডিউটি করতে আসছে তাদের অনেকেই কোভিড নিয়ে আসছে।  কিন্তু কারওই করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। আমি মনে করি এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। এব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকেও দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ। না হলে এই মানুষগুলো বাংলায় প্রবেশ করে  করোনা ছড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে যাবে আর, আর তার ফল আমাদের ভুগতে হবে। তাদের জন্য কারো মা, ভাই, বোন, মারা যাবে।’

মমতার অভিমত ‘গত ছয় মাসে কোভিড যখন ছিল না, তখন যদি দিল্লি ক্ষমতাসীন সরকার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে বলেছিলাম যে আমরা রাজ্যের প্রতিটি মানুষকে বিনা পয়সায় এই ভ্যাকসিন দেবো, তাতেও রাজি হয় নি। গত ছয় মাস সময় পেয়েছে যদি ভ্যাকসিন দিত, তাহলে আজকে নতুন করও কোভিড বাড়তো না। শুধু নির্বাচন করতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার করোনাকে অবহেলা করেছে, তাই আজকে সারা ভারতে আবার করোনা বেড়েছে।’ করোনা সতর্কতা হিসেবে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ারও আহ্বান জানান মমতা।

এদিনের সভা থেকে মতুয়াদের নাগরিকত্ব প্রসঙ্গটিও উত্থাপন করেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান। মমতার দাবি ‘মতুয়াদের উন্নয়নে রাজ্য সরকার অনেক কাজ করেছে। আজ পর্যন্ত বিজেপি কি কাজ করেছে? উল্টে তারা মিথ্যা কথা বলছে। ওরা বলছে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। তবে কি মতুয়ারা নাগরিক নয়? আমি বিজেপিকে জিজ্ঞাসা করতে চাই বাংলাদেশ থেকে যারা এদেশে এসেছে তারা সকলেই এদেশের নাগরিক। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যারা এখানে এসেছে তারা সকলেই নাগরিক। কে বলেছে নাগরিক নয়? এগুলো বিজেপির চিটিংবাজি, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা। এইভাবে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো ক্ষমতা বিজেপির নেই। মতুয়ারা সকলেই নাগরিক। সব তপশিলি জাতি, আদিবাসী, রাজবংশী, উদ্বাস্তু সকলেই এখানকার নাগরিক।’

তার সাফ বক্তব্য ‘আমি এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, আমি যখন বলছি মতুয়ারা নাগরিক তখন এদেশের নাগরিক। আমি বাজে কথা বলতে পারিনা। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ বাজে কথা বলতে পারে। বাংলায় তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।’  

নাম না করে হাবড়ার জনসভা থেকে বিজেপি নেতা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকেও নিশানা করেন মমতা ব্যানার্জি। দিন কয়েক আগেই তৃণমূল কংগ্রেসের দুয়ারে সরকার প্রকল্প নিয়ে কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছিল মিঠুনকে। তা নিয়েই এদিন মমতা পাল্টা নিশানা করে বলেন ‘সিনেমার কেউ কেউ এসে বলছেন দুয়ারে রেশন নাকি ভাওতা। তুমি কোনদিন মোটা চালের ভাত খেয়েছ? তুমি যে কি খাও সেটা ঈশ্বরই জানেন। চাউলের সাথে তোমার কোনো সম্পর্কই নেই। তুমি কি করে বুঝবে যে দুয়ারে সরকার করে রেশন ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া যায়। এই বুদ্ধি যদি ওর না থাকে তবে তবে বলবো তুমি একটা মূর্খ, গণ্ড, গবেট। তোমার কোন বাস্তব বুদ্ধি নেই। সিনেমায় গোখরো আর বাস্তবের গোখরোর মধ্যে তফাৎ আছে। সিনেমার গোখরো কাউকে কামড়ায় না, আর বাস্তবের কামড়ে দেয়। তখন এক ছোবলেই গেল। ছেলেকে বাঁচাতে মিঠুন বেলাইনে চলে গেছে বলেও মন্তব্য করেন মমতা।

বিজেপিকে দাঙ্গাবাজ পার্টি বলে অভিহীত করে মমতা বলেন ‘যতগুলো আছে সব নির্বাচনে তৃণমূল তথা জোড়া ফুলকেই ভোট দেবেন। একটা করে ভোট দিয়ে তৃণমূলের একটা করে গোল বাড়াবেন। আর বিজেপিকে খেলার মাঠ থেকে আউট করে দেবেন। মনে রাখবেন বিজেপি একটা দাঙ্গাবাজ, মিথ্যেবাদী, যুদ্ধবাজ, গুলি বাজ পার্টি। এরা মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলে।’

পাশাপাশি মমতা এদিন পরিস্কার জানিয়ে দেন ‘এরাজ্যে আমি জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি), ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর)  করতে দেব না। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। কারো অধিকার যাবে না। কিন্তু ভোটার তালিকা নাম থাকাটা জরুরি। অন্য কোন সনদ এর দরকার নেই।’  

যদিও পশ্চিমবঙ্গের তেহট্টে এক নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত হয়ে তৃণমূলকে নিশানা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন ‘তৃণমূলের বিরোধিতার কারণে মতুয়া ও নম:শুদ্রদের নাগরিকত্ব প্রদানে দেরী হচ্ছে।’ তিনি বলেন ‘২ মে তৃণমূলের বিদায় নিশ্চিত। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে গৌরবের সাথে মতুয়া সম্প্রদায় ও নম:শুদ্রদের নাগরিকত্ব দেবে। তখন শরণার্থীদের তিন প্রজন্মের অবসান করা হবে। যারা নাগরিকত্ব পাবেন তাদের কল্যাণে মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে ১০০ কোটি রুপির তহবিল গঠন করা হবে।’ এছড়াও মতুয়াদের উন্নয়নে একাধিক প্রতিশ্রুতি দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।  

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad