সৌম্যদ্বীপ: জেলার ইতিহাসের প্রথম অংশে আজ আমরা কথা বলবো পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক জেলা কোচবিহারকে নিয়ে। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রচিত 'শাহজাহাননামা গ্রন্থে' কোচবিহার নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মেজর রেনেলের মানচিত্রে কোচবিহার ‘বিহার’ নামে উল্লিখিত হয়।
১৭৭২ সালে ভুটানের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে কোচবিহার-রাজ ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণ ও ওয়ারেন হেস্টিংসের মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে কোচবিহার ব্রিটিশদের একটি করদ রাজ্যে পরিণত হয়। ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে রাজ্যটি "কোচ বিহার" নামে পরিচিত হয় এবং এর রাজধানীর নাম হয় "বিহার ফোর্ট"। উল্লেখ্য, "কোচবিহার" শব্দটির অর্থ "কোচ জাতির বাসস্থান"। মহারাজার আদেশ অনুযায়ী রাজ্যের সর্বশেষ নামকরণ হয় "কোচবিহার"।
কোচবিহারের উত্তরপূর্বে আসাম রাজ্য, এছাড়াও আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাাদেশের সাথে৷ শহরটি কোচবিহার সদর মহকুমার কোচবিহার ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক-এ অবস্থিত৷ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে কোচবিহার শহরের জনসংখ্যা হল ৭৭,৯৩৫ জন।এর মধ্যে পুরুষ ৫১% এবং নারী ৪৯%।
সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে কোচবিহার এর সাক্ষরতার হার বেশি।এই শহরের জনসংখ্যার ৯% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
বর্তমান কোচবিহার জেলাটি অতীতে বৃহত্তর কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। কামরূপের রাজধানী দ্বিধাবিভক্ত হলে কোচবিহার ‘কামতা’-র অন্তর্গত।
১৯৪৯ সালের ২৮ অগস্ট রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ কোচবিহার রাজ্যকে ভারতীয় অধিরাজ্যের হাতে তুলে দেন। এই বছর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কোচবিহার ভারতের কমিশনার শাসিত প্রদেশে পরিণত হয়। ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ২৯০ক ধারা বলে কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি জেলায় পরিণত হয়।
কোচবিহার বা কোচবিহার জেলার প্রধান ঐতিহাসিক স্থান গুলি হল:
(১)কোচবিহার রাজবাড়ি-কোচবিহার জেলার মূল আকর্ষণ কিন্তু এই রাজবাড়ি। ইংল্যান্ডের বাকিংহাম প্যালেসের অনুকরণে তৈরী এই বিশাল রাজবাড়ি কিন্তু আজও রাজবাড়ির জাঁকজমকের সাক্ষ্য বহন করে।১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদের আদলে এই রাজবাড়িটি তৈরি হয়েছিল।
(২)সাগর দীঘি - মহারাজা হীরেন্দ্র নারায়ণের আমলে তৈরী এই দীঘি। এই স্থানটিও বেশ মনোরম।
(৩)বানেশ্বর মন্দির - এই মন্দিরের গর্ভগৃহে যে শিবলিঙ্গটিকে পূজা করা হয় তা প্রায় ১০ ফিট মাটির নীচে অবস্থিত।
(৪)মদনমোহন মন্দির- মদনমোহন মন্দির কোচবিহার জেলার একটি প্রসিদ্ধ পীঠস্থান। রাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ এই মন্দির তৈরী করেন।
এছাড়াও কোচবিহারে আরও কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান হল,কামতেশ্বরী মন্দির(দিনহাটা),বড়দেবী বাড়ি(কোচবিহার),মধুপুর ধাম মন্দির(কোচবিহার),মদন মোহন মন্দির(মাথাভাঙ্গা) ইত্যাদি।
ঐতিহাসিক স্থান ছাড়াও এই রাজ্যে রয়েছে কয়েকটি ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সব ইংরেজ আমলে নির্মিত।এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাই স্কুল: ১৯১৬ সালে কোচবিহারের সম্মানীয় মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। প্রয়াত সম্মানীয় মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়েছিল।
সুনীতি একাডেমী: এই বিদ্যালয়টি ১৮৮১ সালে কোচবিহারের মহারাজা দ্বারা সুনীতি বিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মহারাণী সুনীতি দেবী ছিলেন কেশব চন্দ্র সেনের কন্যা।
জেনকিন্স স্কুল: ১৮৬১ সালে মহারাজার নরেন্দ্র নারায়ণের প্রয়াসে প্রতিষ্ঠিত হয় এই স্কুল।
এবিএন শীল কলেজ: মহারাজা নিপেন্দ্র নারায়ণ এর উদ্যোগে ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই শহরটি।
No comments:
Post a Comment