শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: বিজেপির পরিবর্তনের রথ কেশপুরে পৌঁছতেই তা এক পলক দেখার জন্য রাস্তার দুধারে উপচে পড়লো সাধারণ মানুষের ভিড়। রবিবার পরিবর্তনের রথ চন্দ্রকোনার গাছ শীতলা মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে কেশপুর ব্লকের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে পাছখুরি হয়ে এসে পৌঁছায় কেশপুর বাজারে। এদিন কেশপুরের খেতুয়া থেকে বাইক র্যালির মধ্য দিয়ে বিজেপি কর্মীরা পাছখুরি বাজার এলাকায় এই রথকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হয়। সেই উপলক্ষ্যে পাছখুরি বাজার এলাকায় এক পথ সভারও আয়োজন করা হয় কেশপুর উত্তর মন্ডলের পক্ষ থেকে।
এই পথসভায় উপস্থিত হন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা লকেট চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদক তুষার মুখার্জী, ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য, জেলার সাধারণ সম্পাদক তন্ময় দাস ও কেশপুর বিধানসভার কনভেনার অজয় কৃষ্ণ প্রধান, কেশপুর উত্তর মন্ডলের সভাপতি প্রবীণ হালদার সহ অন্যান্যরা।
এদিন কেশপুরের পরিবর্তন যাত্রায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, প্রথম যাত্রা লালগড় থেকে শুরু হয়েছিল, সেদিনই তারাপীঠ থেকে একটি যাত্রা শুরু হয়েছিল যা বর্ধমান পর্যন্ত পৌঁছেছে। এছাড়া কোচবিহার থেকেও একটি যাত্রা শুরু হয়েছিল, যা উত্তরবঙ্গ পার করে কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এবার আরও একটি যাত্রা আগামী ১৮ তারিখ গঙ্গা সাগর থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশগুলি পরিকল্পনা করবে। এছাড়াও তিনি বলেন এই যাত্রার একটাই উদ্দেশ্য পশ্চিমবঙ্গে যে রাজনীতি চলছে তা পরিবর্তন করা।
দিলীপ ঘোষ এই সভা থেকে শাসক দলের উদ্দেশ্যে তীব্র আক্রমন শানান। তিনি বলেন, "এই সরকার আমাদের কিছু দিতে পারেনি, শুধু দুর্নীতি দিয়েছে। সবাই আগে ওনাকে দিদি বলতো কিন্তু উনি এখন পিসি হয়ে গেছেন। আর তৃণমূল এখন পিসি-ভাইপো সরকার।"
এদিনের সভা থেকে পুলিশ, চিকিৎসকদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, 'এখানে কোনও সুবিধা কাটমানি ছাড়া পাওয়া যায় না। আর তৃণমূলের কেউ কোনও দোষ করলে পুলিশ সেই অভিযোগ লিখবে না, চিকিৎসকরা কেউ মারা গেলে বা কারও কিছু হয়ে গেলে পোস্টমর্টেম লিখবে না, যতক্ষণ না কালীঘাট থেকে অর্ডার আসছে।"
সেইসঙ্গে দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, প্রিজমের দুত যখন আপনাদের পাড়ায় যাবে তখন আপনারা ঝাটা নিয়ে বিতাড়িত করে পশ্চিমবাংলা থেকে তৃণমূল নামক লিমিটেড কোম্পানিকে উৎখাত করেবেন। রাস্তাঘাট উন্নয়ন সহ কৃষকদের উন্নয়ন করার লক্ষ্যে কার্যত বিজেপিকে রাজ্যে নিয়ে আসার আহ্বান জানান দিলীপ ঘোষ।
কেশপুর বাজারে সভার সময় দিলীপ ঘোষ কার্যত তৃণমূল কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, 'ভোটের দিন যে সমস্ত দিদির চামচারা ভয় দেখাতে আসবে, ভোট লুট করতে আসবে, বাড়ীতে বলে আসবেন আমাদের আর ফেরা নাও হতে পারে।'
বর্তমান রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে তিনি আরও বলেন, যখন আমরা ২০১১ তে ক্ষমতায় এসেছিলাম তখন যা দেনার পরিমাণ ছিল, তার থেকে ১৫০গুণ বেশী এই সরকার ১০ বছরে দেনা করেছে। তিনি বলেন , যে বাংলার স্বপ্ন স্বামী বিবেকানন্দ দেখেছেন, যে বাংলার স্বপ্ন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু দেখেছেন, যদি সেই স্বপ্ন সত্যি করতে হয় আমি আপনাদের আবার বলব, ১০ বছর সুযোগ দিয়েছেন, দয়া করে ৫ বছর ভারতীয় জনতা পার্টিকে সুযোগ দিন, যদি দেখেন আমরা কাজ করতে পারলাম না, আবার আপনারা পাল্টে দেবেন। এদিন পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর কয়েক বছর কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত কেশিয়াড়ীতে পঞ্চায়েত সমিতি গঠন না হওয়া নিয়ে তৃনমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলায় শুরু হয়েছে বিজেপির পরিবর্তন যাত্রা। জেপি নাড্ডার হাত ধরে শুরু হয় এই যাত্রা। ৯ তারিখ তারা মায়ের কাছে পুজো দিয়ে রথ যাত্রার সূচনা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। এবার সেই রথই দেখা গেল গ্রামে ও শহরের পথে পথে। গ্রামের পথ দিয়ে এগিয়ে চলেছে পরিবর্তনের রথ।
No comments:
Post a Comment