শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: আমাদের দোষেই আজ মানুষ জুমলাবাজ দল বিজেপির প্রতি আকর্ষিত হচ্ছেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদেরই।’ রাজ্য জুড়ে তৃনমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়ার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে তার পেছনে যে তৃনমূল নেতা-কর্মীদেরই ব্যর্থতা রয়েছে তা স্পষ্ট করে দিয়ে আত্ম সমালোচনায় নামলেন সদ্য তৃনমূলে যোগ দেওয়া সদ্য প্রাক্তন আইপিএস আধিকারিক হুমায়ুন কবীর। শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরাতে কবীর অবশ্য এই ‘আমরা’র মধ্যে নিজেকেও সংযুক্ত করে বলেছেন, ‘আমরা মানে আমি সহ এই ব্যর্থতার অংশ আমরা সবাই।’
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ভোটারদের মন জয়ে নানাবিধ কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল রাজ্য কমিটি। তারই অন্যতম হল ‘দিদির দূত’ হয়ে বিধানসভা ধরে ধরে দলের বিশিষ্ট নেতা মন্ত্রী বা ব্যক্তিত্বকে এলাকায় পাঠানো। তাঁরা এলাকার নেতৃত্ব, কর্মী, ছাত্র-যুব, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, অধ্যাপক, শিক্ষক সহ নানা পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিচ্ছেন। সেরকমই এক কর্মসূচি নিয়ে তিনদিনের সফরে শুক্রবার প্রথম ডেবরার মাটিতে পা রাখলেন চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার থেকে অবসর নিয়ে তৃনমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া এই প্রাক্তন আইপিএস। সেই সফরেই সংবাদিককদের তিনি এই বক্তব্য শোনান।
কবীর জানান, ‘১২টি প্রকল্প নিয়ে এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুয়ারে সরকার কর্মসূচি চালু করেছেন। মানুষকে সরকারের দুয়ারে যাওয়ার পরিবর্তে সরকারই মানুষের দুয়ারে যাচ্ছে। এই প্রকল্প অন্য আর কোথাও পাওয়া যাবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের স্বার্থে তিনি যে সমস্ত কর্মসূচি নিয়েছেন তার প্রতিটিই বাস্তবায়িত হয়েছে।
অন্যদিকে তাকিয়ে দেখুন, যারা ২০১৪ সালে ভোটের আগে পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম নিয়ে কথা বলত তাঁদের রাজত্বে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের সময় এরা যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি। সেই প্রশ্ন তোলাতে এখন নিজেরাই বলছে ওসব জুমলা ছিল। সেই জুমলাবাজ দলের প্রতি যদি মানুষ আকৃষ্ট হয় তবে সেটা মানুষের দোষ নয়, দোষ আমাদের কারন আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পগুলি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করতে পারিনি। আমাদের ত্রুটি রয়েছে। সেই ত্রুটি কাটিয়ে উঠে মানুষকে বোঝাতে হবে।”
হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনা সময়ের কথা ভাবুন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নের ১৪তলায় তাঁর অফিসে বসে নির্দেশ দিয়ে কাজ সারেননি। নিচে নেমে এসেছেন। নিজের হাতে মাইক নিয়ে এলাকায় এলাকায় গিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমাদের মত আধিকারিক, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মীদের নিয়ে করোনা মোকাবিলায় রণকৌশল তৈরি করেছেন।
তাহলে মুখ্যমন্ত্রী বা সরকারের দোষ নয়, দোষ আমাদের। আমরা মানুষকে বোঝাতে পারিনি।” তবে তৃনমূল কর্মীরা সেই সমস্যা মিটিয়ে দ্রুত লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন বলে দাবী করেছেন কবীর। তিনি বলেন, “২০১১-র চাইতেও অনেকগুন শক্তি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন কর্মীরা কারন যে দলটার বিরুদ্ধে লড়াই সেই দলটা ২০১১-র প্রতিপক্ষের চেয়েও খারাপ দল যারা বিদ্বেষ ঘৃণা আর বিভেদের রাজনীতি করে পশ্চিম বাংলায় জায়গা করে নিতে চাইছে। আমরা সবাই মিলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি, যা কিছু সমস্যা ছিল বা আছে সে সব মিটিয়ে সবাই এক সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ব এই জনমুখী সরকারকে আবার ফিরিয়ে আনতে।”
হুমায়ুন কবীরের জন্মভূমি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই ডেবরা থেকেই তিনি তাঁর কর্মসূচি শুরু করায় প্রশ্ন উঠেছে তিনি কী তবে এখান থেকেই প্রতিদ্বন্দিতা করবেন? কবীর নিজে অবশ্য এই প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, সেরকম কোনও আলোচনাই হয়নি। দল তাঁকে যেমন কর্মসূচি দিয়েছে বা যেখান থেকে দাঁড়াতে বলবে সেখান থেকেই দাঁড়াবেন সেটা ডেবরা বা অন্য কোথাও যেখানেই হোক। তিনি বলেন, লোকসভা নির্বাচনে ডেবরা বিধানসভায় সাড়ে চার হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকা তৃনমুল কংগ্রেসকে ২০২১ সালের বিধানসভায় ৪০হাজার ব্যবধানে জয়ী করার জন্য কর্মীরা লড়াই করছে।
এদিন কবীরের সাথে ডেবরা তৃণমূলের সমস্ত গোষ্ঠীর নেতা, বিধায়ক সেলিমা খাতুন, ব্লক সভাপতি রাধকান্ত মাইতি, তিন কর্মাধ্যক্ষ অলোক আচার্য্য, বিবেক মুখার্জী, প্রদীপ কর এবং সাংসদ দেবের প্রতিনিধি সীতেশ ধাড়া উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment