ভিন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, মৃত্যু চার পরিযায়ী শ্রমিকের - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 26 February 2021

ভিন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, মৃত্যু চার পরিযায়ী শ্রমিকের


নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদা: কলকাতায় কাজে গিয়ে মৃত্যু হল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের চার পরিযায়ী শ্রমিকের। এদের মধ্যে রয়েছেন তিন ভাই। প্রত্যেকেই হরিশ্চন্দ্রপুরের মালিওর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব তালসুর এলাকার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার কলকাতার রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার পূর্ব পুঁটিয়ারি এলাকায় হাই ড্রেনের কাজ করার সময় সেখানেই বিষাক্ত গ্যাসে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাদের বাঁচানো যায়নি। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত তিন শ্রমিকের মধ্যে রয়েছেন তিন ভাই আলমগীর হোসেন(২৮), জাহাঙ্গীর আলম(২৬), সাবির আলি(২৪)। অন্যজন লিয়াকত আলি(২২) তাদের প্রতিবেশী। এদিন দুপুরে তাদের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা এলাকায় পৌঁছাতেই পরিবারের পাশাপাশি গোটা এলাকাজুড়েই শোকের ছায়া নেমে আসে।

মৃতদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত চারজনই দীর্ঘদিন ধরেই ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। কখনও বেঙ্গালুরু, কখনও কেরলে! আগে একসময় কলকাতাতেও কাজ করেছেন। লকডাউন শুরু হতেই তারা করোনার ভয়ে বাড়ী ফিরে আসেন। পরে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই মাস তিনেক আগে তারা কলকাতায় যান। রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার পূর্ব পুটিয়ারিতে এদিন একটি ক্লাবের কাছে উঁচু নর্দমার আবর্জা সাফাই করার কাজ করার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। নালার বিষাক্ত গ্যাসে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

করোনাকালে লকডাউনে চাঁচল মহকুমার অন্তত ২০ জন শ্রমিক মারা গিয়েছেন। কেউ বাড়ী ফেরার পথে, কেউ ভিন রাজ্যে যাওয়ার পথে বা দুর্ঘটনায়। এবার একইসঙ্গে একই এলাকার চার শ্রমিকের মৃত্যুর জেরে আতঙ্কিত ভিন রাজ্যে থাকা শ্রমিকের পরিজনেরা। এলাকায় কাজ না মেলায় অভাবের তাড়নায় তাদের ঝুঁকি নিয়েও ভিন রাজ্যে যেতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

হরিশ্চন্দ্রপুর রেল লাইনের ওপারে তালসুর এলাকায় বাড়ী মৃতদের। মাটির বাড়ীর উপরে টালির ছাদ। প্রত্যেকেই অভাবি। তোরাব আলির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় আলমগীর বিবাহিত। তার নাবালক দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। এছাড়া বাড়ীতে রয়েছেন মা রোজিনা বিবিও। দুর্ঘটনায় তিন ছেলেরই মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন সকলেই। এদিকে প্রতিবেশী লিয়াকতের স্ত্রী কোহিনুর বিবি আবার অন্তঃস্বত্ত্বা। তার বাবা মহম্মদ হানিফ, দাদা সাহাদাতও ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। তারা ভিন্ রাজ্যেই রয়েছেন।

মৃত তিন ভাইয়ের বাবা তোরাব আলি বলেন, সকালেই বড় ছেলেটা ফোন করেছিল। স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলে খোঁজখবর নিয়েছিল। কিন্তু তিন ছেলেই যে এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে ভাবতেই পারিনি। আমার সব শেষ হয়ে গেল। কি নিয়ে বাঁচব।

আর লিয়াকতের স্ত্রী কোহিনুর বিবির কথা বলার ক্ষমতা নেই। স্বামীর মৃত্যুর কথা জানার পরেই মাঝে মধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। কোনও রকমে বলেন, 'রাতেই ফোন করে কেমন আছি খোঁজখবর নিয়েছিল। সেটাই যে শেষকথা বুঝতে পারিনি।'

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad