নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রবল আলোড়ন হয় পোস্তা উড়ালপুল দুর্ঘটনায়। প্রচারে মাত্রা পেয়েছিল বিষয়টি। রাজ্য সরকার চায় আগামী ভোটের আগে পরিত্যক্ত, অসম্পূর্ণ উড়ালপুলের বিপজ্জনক অংশটি ভেঙে ফেলতে।
২০১৬ সালের ৩১ মার্চ আচমকা প্রায় ৪০ মিটার দীর্ঘ এই নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। ওই ঘটনায় মারা যান ২৮ জন। সরকার সেই সময় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। এর নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত হায়দরাবাদের একটি সংস্থা ও প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র কয়েকজন আধিকারিককে গ্রেফতার করা হয়। সেই বিচার এখনও চলছে।
এই অসমাপ্ত উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ কী, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দুর্ঘটনার পর মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি গঠিত হয়। আইআইটি’র বিশেষজ্ঞদের নিয়েও একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঐ উড়ালপুলকে রেখেই পুনর্নিমাণ করা হবে, নাকি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি সরকার।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সেতু বিশেষজ্ঞ ভি কে রায়নাকে পোস্তা উড়ালপুলের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য ডেকে আনে রাজ্য সরকার। তাঁর নেতৃত্বে কেএমডিএ এবং পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা পোস্তা প্রকল্পের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। রায়না তাঁর রিপোর্টে জানিয়ে দিয়েছেন, পোস্তা ফ্লাইওভারের যা অবস্থা, তাতে এটি ভেঙে ফেলাই ভালো। দরকারে নতুন করে তৈরি করা যেতে পারে। উড়ালপুলের নির্মাণের নকশা, নির্মাণ পদ্ধতিতে গলদ ছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবেকানন্দ রোডে নির্মীয়মাণ এই উড়ালপুলের ভেঙে পড়া অংশ সেই সময় সরানো হলেও বাকি অংশ সেভাবেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। তবে রোদ-জল-বৃষ্টি আর দেখভালের অভাবে এই অসমাপ্ত সেতু এখন বিপজ্জনক চেহারা নিয়েছে। ক্রমেই বাড়ছে বিপদ। কারণ মাথার উপর মরচে ধরা ব্রিজের লোহা। আর নীচে দিয়ে নিত্য যাতায়াত করছে অসংখ্য গাড়ি, বাস আর কয়েক হাজার মানুষ। কলকাতায় খাদ্যসামগ্রীর সব থেকে বড় পাইকারি বাজারও এই অঞ্চলে। দুর্ঘটনা এড়ানোই এখন প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য। তাই ধসে পড়া উড়ালপুলের কিছু বিপজ্জনক অংশ আপাতত ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এর জন্য ডাকা আগ্রহপত্রে (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) পাঁচটি সংস্থা সাড়া দিয়েছে বলে কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে। তারা চায়, টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত উড়ালপুলের বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলতে। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত কাঁচামালের গুণমানও ঠিক ছিল না বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২০০৮ সালে বামফ্রন্ট রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন উড়ালপুল তৈরির দায়িত্ব একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়েছিল। ২.২ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালপুল ২০১০ সালে শেষ করার কথা থাকলেও, তা করা যায়নি। দেরি হওয়ায় খরচও বাড়ে। প্রথমে ১৬০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু যখন এটি অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় ভেঙে পড়ে, তখনই ১৩০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
রায়না পোস্তা উড়ালপুলটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলার সুপারিশ করলেও এখনও তা গ্রহণ করেনি সরকার। কেএমডিএ সূত্রে খবর, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বধীন কমিটি এব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আপাতত বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলা হবে। পোস্তা উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ চূড়ান্ত হবে বিধানসভা ভোটের পর।
No comments:
Post a Comment