নিজস্ব প্রতিবেদন: গতকাল প্রশাসনিক ক্ষমতাচ্যুত করার পর তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতাও খর্ব করা হল। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতির পদ থেকে অপসারিত হলেন শিশির অধিকারী, যদিও তিনি তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। তাঁর জায়গায় নতুন দায়িত্ব পেলেন সোমেন মহাপাত্র।
গতকাল দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয় শিশির বাবুকে। এনিয়ে এদিন তেমন কোনও মন্তব্য না করলেও, কিছুটা বিরক্তির সুরে বলেছেন, 'কিছু জানি না। আপনাদের কাছে শুনলাম। কেন এনেছিল, কেন সরাল জানি না। কাউকে ফোনও করব না।' কিন্তু নতুন পদ পেয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন অখিল গিরি, কিছুটা অভিযোগের সুরে বলেছিলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে শিশিরবাবু পর্ষদে যাচ্ছিলেন না, কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছিল। তাই সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাকে বসানো হয়েছে।'
তবে কুণাল ঘোষ অবশ্য শিশির বাবুর অসুস্থতাজনিত কারণকেই এর জন্য দায়ী করেছিলেন। সেই সাথে ফিরহাদ হাকিমও একই কথা বলেছেন, তিনি বলেন, “শিশির দার বয়স হয়েছে, শারীরিক সমস্যায় বেরোতে পারেন না, যেহেতু দিঘা শঙ্করপুর ট্যুরিস্টস্পট, তাই কম বয়সীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, শিশির দার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে, ছেলে আদর্শচ্যুত হলেও শিশির দা আদর্শচ্যুত হবেন না। বয়সের কারণে আডবাণী জোশীদেরও তো সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।“
কিন্তু গতকালের ঘটনায় শিশির বাবু তেমন প্রতিক্রিয়া না দিলেও শুভেন্দু কিন্তু ছেড়ে কথা বলেনি। কটেক্ষের সুরে শাসকদলের উদ্দেশ্যে বলেছে, “আমি ওই প্রাইভেট লিমিটেড পার্টি সম্পর্কে কিছুই বলব না। ওরা কর্মচারী খোঁজে। যাঁরা থাকতে চান, তাঁরা থাকেন। যাঁরা চান না, তাঁরা বেরিয়ে আসেন।“ শুধু তাই নয়, হুঁশিয়ারিও দিয়ে বসেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘যারা সরিয়েছে, তারাই সরে যাবে’।
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে, রাম নবমীতে অধিকারী পরিবারে পদ্ম ফুটবে, যার সূচনা হয়েছিল তাঁর ছোট ভাই সৌমেন্দুকে দিয়ে। কিন্তু শুভেন্দুর আরও এক ভাই দিব্যেন্দু ও বাবা শিশির অধিকারী এখনও ঘাসফুল শিবিরেই রয়েছেন; এককথায় বলতে গেলে পদ্ম ও ঘাসফুল শিবিরের অধিকারী পরিবারের অবস্থান এখন সমান সমান; দুই বনাম দুই । তবে ছেলে পদ্ম শিবিরে যাওয়ার পর শাসকদলের কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি শিশির বাবুকে। আর গতকাল ডিএসডিএ-র চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর তাঁকে দলে নিজের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করলে বর্ষীয়ান এই নেতা জানান, “বেঁচে আছি”। আর এই ইঙ্গিত একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার মত নয়।
এই ঘটনার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই ফের শিশির বাবুকে নিজের পদ থেকে সরানো হল, এতে শাসক দলের সাথে অধিকারী পরিবারের ফাটল যে আরও বাড়ল, সেকথাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

No comments:
Post a Comment