নিজস্ব সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: মৌমাছি তাড়াচ্ছে হাতি। মানুষের মতো হাতিও মৌমাছির হুল পছন্দ করে না। হাতিদের শ্রবণ এবং ঘ্রাণশক্তি খুব তীব্র৷ তাই মৌচাকের গন্ধ বা মৌমাছির গুণগুণ আওয়াজ পেলেই হাতি দূরে সরে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় মৌ চাষ করে হাতির হানা অনেকটা ঠেকানো গিয়েছে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মত হাতির হানা রুখতে মৌ চাষ শুরু হচ্ছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প লাগোয়ো নূরপুর গ্রামে।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরামর্শ নিয়ে স্থানীয় একটি সংস্থার উদ্যোগে মৌ চাষের পাশাপাশি সরষে চাষ শুরু হবে। ওই সরষে ফুলের থেকে মধু সংগ্রহ করবে মৌমাছি। গ্রামের চারপাশে এভাবে মধু এবং সরষে চাষ শুরু হলেই হাতি হানা রোখা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের এমন পরামর্শ মেনে আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের ভূটান পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বনাঞ্চল ঘেরা নূরপুর গ্রামের বাসিন্দাদের মৌ চাষে উৎসাহ দিচ্ছে সাঁওতালপুর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে একটি সংস্থা। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন এবং কৃষি দফতরের সাহায্যে মধু চাষের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে নূরপুরে।
সাঁওতালপুর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কর্মকর্তারা জানান, কৃষকদের দুঃশ্চিন্তা হাতি। প্রায় সারা বছর ধরেই এলাকায় হাতির হানা চলে। ঘরবাড়ি ভাঙার পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্ষেতের ফসল। জঙ্গল লাগোয়া জমিগুলি থেকে কৃষকরা ধান বাড়ীতে তুলতে পারে না হাতির তান্ডবে। শুধু সন্ধ্যা বেলা নয়, দিনের আলোতেই জঙ্গল লাগোয়া জমিগুলিতে নেমে পড়ে হাতির পাল। এর জন্য জঙ্গল লাগোয়া সব গ্রামে প্রচুর জমি পতিত পড়ে রয়েছে। হাতির হানার জন্য চাষ-আবাদ বন্ধ রেখেছেন বেশীর ভাগ চাষিরা। ইতিমধ্যে ওই গ্রামে গোলমরিচ এবং হলুদ চাষ শুরু করিয়েছি। ওই দুটি ফসল বা গাছ হাতি খায় না। এবার উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরামর্শ এবং সাহায্য নিয়ে মধু চাষ করার উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। মধু চাষ করলে হাতি তার ত্রিসীমানায় যায় না। পাশাপাশি জৈব পদ্ধতিতে সরষে চাষও করা হবে।
সর্বভারতীয় জৈব চাষ প্রকল্পে নূরপুর গ্রামে মধু এবং সরষে চাষ শুরু করা হচ্ছে। এতে হাতির হানা যেমন রোখা যাবে, তেমন মধু এবং সরষে চাষ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হবেন গ্রামবাসীরা। ঘুরবে গ্রামের অর্থনীতি।
No comments:
Post a Comment