নিজস্ব প্রতিনিধি, আলিপুরদুয়ার: আর কয়েকদিন বাদে পুজো, এখন অবধি হয়নি বায়না, চিন্তার ভাঁজ পড়েছে আলিপুরদুয়ার জেলার পাটকাপাড়া এলাকার ঢাকিপাড়ার সকলের কপালে।
সারা বছরই দুর্গোৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন পাটকাপাড়ার ঢাকিরা। পুজোর কটা দিন ঢাক বাজিয়ে যে অর্থ উপার্জন হয় সেই অর্থই তাদের সারা বছর খেয়ে পড়ে থাকার পাথেয়। তবে এবারে করোনার তাণ্ডবে সবটাই মনে হয় শেষ হতে চলেছে। তাই কপালের ভাঁজ গাঢ় হয়েছে পাটকাপাড়া এলাকার ঢাকি পাড়ার বাসিন্দাদের ।
পুজোর এগিয়ে এলেও এখনও পুজো কমিটির লোকজনের আনাগোনা নেই ঢাকিপাড়ায় । প্রতিবছর এসময় বায়ন এসে যায় । শুরু হয়ে যায় মহড়া। এবার মহড়া চলছে নিয়ম মেনে । তবে কোনও বায়না হয়নি এখন পর্যন্ত। তবুও আশায় বুক বেঁধে আছেন ঢাকিরা, যদি শেষ মুহূর্তে ডাক আসে!
করোনার জেরে এ বছরে দুর্গোৎসব তার চেনা জৌলুস হারিয়েছে। প্রায় সব পুজো কমিটি গুলো বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। কোথাও আবার একবারেই বন্ধ রয়েছে পুজো। আর সেই কারণেই পাটকাপাড়া এলাকার ঢাকিপাড়ার বাসিন্দাদের মুখের হাসি ম্লান।
উল্লেখ্য, আলিপুরদুয়ার জেলার পাটকাপাড়া এলাকার হাজরাপাড়া গ্ৰাম। লোকমুখে এই গ্ৰামটি ঢাকিপাড়া হিসেবে পরিচিত, কেননা এই গ্ৰামের প্রায় দুশো জন ঢাকিবাদক রয়েছেন। এখানকার ঢাকিবাদকদের শিল্পকলায় প্রচুর নাম ডাক। প্রতিবছর এখানকার ঢাকিওয়ালারা নাগাল্যাণ্ড, ডিমাপুর, অসম, উত্তরপ্রদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পাড়ি দেয় । প্রতি বছর পুজোর বহু দিন আগে থেকে পুজো কমিটি এনাদের অগ্ৰিম বায়না করে রাখে কিন্তু এবছর করোনা আবহে সব লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। পুজো সামনে, অথচ বায়না হয়নি। ঢাকিওয়ালারা নিজে পুজো কমিটির সাথে যোগাযোগ করছেন কিন্তু পুজো কমিটির পক্ষ থেকে মিলছে না কোনও সাড়া।
এই এলাকার ঢাকিওয়ালা সুধাংশু হাজরা জানান, "বিশ্বকর্মা পুজো থেকে আমাদের মরশুম শুরু হয়ে যায়, একদম ছট পুজো অবধি আমাদের লাগাতার কাজ থাকে। প্রতিবছর অনেক দিন আগে থেকেই বায়না হয়ে যায় কিন্তু এবছর বিশ্বকর্মা পুজোতে কোনও কমিটি আমাদের ডাকেনি, যেখানে যেতাম তারাও না করে দিয়েছেন। আশায় বসেছিলাম দুর্গা পুজোর জন্য, তবে এখনও বায়নি হয়নি। এ বছর যা পুজো হবে শুনছি সব ছোটো, সবার ডাক পড়বে কিনা এই নিয়ে সন্দিহান রয়েছি।"
অপর এক ঢাকিওয়ালা নিমাই হাজরা জানান, "অন্যবার তো বিশ্বকর্মা পুজোর আগের থেকে আমাদের বায়না হয়ে যায় দুর্গা পুজোর । এবছর বিশ্বকর্মা পুজোয় যেখানে আমার ঢাক বাজাই সেখানে গেলাম, তারা না করে দিয়েছেন, আর দুর্গা পুজোয় যেই পুজো কমিটিগুলোতে প্রতিবছর যাই, সেখানে খোঁজ খবর নিচ্ছি তারা বলছেন এখনও কিছু বলতে পারছিনা । প্রতিবছর যেখানে পুজো কমিটিরা আমাদের সাথে আগেভাগে যোগাযোগ করে, আর সেখানে এবছর আমরা যোগাযোগ করছি, তাও বায়না হচ্ছে না খুবই দুশ্চিন্তায় আছি আমরা। "

No comments:
Post a Comment