আধার কার্ড‌ না থাকায় সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত অসহায় বিধবা - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, 25 August 2020

আধার কার্ড‌ না থাকায় সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত অসহায় বিধবা


নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা২০১৬ সালের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত হল না বিধবার ঘর। কেন ? উঠছে প্রশ্ন। আর কত গরিব হলে মিলবে সরকারি ঘর ? এই দুশ্চিন্তায় কাটছে বিধবার দিন। বিধবা মহিলার নাম সাবেরা বেওয়া। বাড়ী মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির ভবানীপুর গ্রামে। একমাত্র ভাঙাচোরা রান্না ঘরেই কাটছে তার দিন। বাড়ীতে বিদ্যুৎ নেই। নেই কোন পানীয় জলের ব্যবস্থা। পুকুরের জল দিয়েই করেন রান্না-বান্না। শৌচাগার না থাকায় মাঠই একমাত্র ভরসা। বসবাসের একমাত্র রান্নাঘরটিও এই বর্ষায় ভেঙে পড়েছে। দরজা হীন ঘরে পলিথিন টাঙিয়ে কোনরকমে কাটছে তার দিন। নেই কোন রেশন কার্ড। অর্ধাহারে-অনাহারে কাটছে দিন। প্রতিবেশীদের সহায়তায় কোনদিন একবেলা খাবার জোটে, তো কোনদিন জোটেও না। স্বামী মারা যাওয়ার কুড়ি বছর কেটে গেলেও মেলেনি বিধবা ভাতা। পায়নি কোনরকম সরকারি সাহায্য। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রয়েছে পঞ্চায়েত সদস্যের ঘর। নিজের জানলা দিয়ে উঁকি মারলে দেখা যায় বিধবার ভাঙ্গাচোরা ঘরটি। দেখেও নীরব। সাহায্যের আশ্বাস টুকুও পায়নি বলে আক্ষেপ। তৃনমূল পরিচালিত মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেও মিলেনি কোন-রকম আশ্বাস।

জানা যায়, সাবেরা বেওয়ার স্বামী সেখ সোনুয়া প্রায় কুড়ি বছর আগে অসুখে মারা যান। বাড়ীতে রেখে যান স্ত্রী সহ চার কন্যা সন্তান। পুত্রহীন সংসারে হাল ধরার কেউ নেই। শুরু হয় বাড়ীতে অভাব-অনটন।

প্রতিবেশীদের সহায়তায় চার মেয়ের বিয়ে হলেও মাকে দেখাশোনা করার জন্য বাড়ীতেই থেকে যান ছোট মেয়ে লিলিফা খাতুন। তারও দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে মাঠে ধান কেটে, অন্য কারও বাড়ীতে কাজ করে খুব কষ্টে দু'মুঠো অন্ন জোগাড় করে মায়ের মুখে তুলে দেন।

লিলিফা খাতুন জানান, তার বাবা কুড়ি বছর আগে  মারা যায়। একমাত্র রোজগেরে মারা যাওয়ায় পরিবারটি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। প্রতিবেশীদের সহায়তায় চার বোনের বিয়ে হলেও মাকে দেখাশোনা করার জন্য সে বাবার বাড়ীতেই থেকে যায়। ১৫ বছর ধরে মায়ের সংসারকে আগলে রেখেছে সে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই মা মানসিক ভারসাম্যহীন ‌হয়ে পড়ে। আর্থিক অভাব থাকায় চিকিৎসা করাতে পারেনি আজও। বাস্তু ভিটে ছাড়া তাদের কোন জমি নেই। রয়েছে একটি ভাঙাচোরা ঘর।‌ মেয়ে ও তিন নাতি-নাতনি ওই ভাঙাচোরা ঘরেই থাকেন। মা কখনও বাড়ীর বারান্দায়, কখনও আবার রান্নাঘরেই ঘুমান। বৃষ্টি হলেই চাল চুয়ে জল পড়ে। ঘরের উপরে টিনের ছাউনি থাকলেও দেওয়ালগুলিতে ঘুন ধরে খসে পড়ার ভয় রয়েছে। সকাল হতেই ফাঁকফোকর দিয়ে সূর্যের আলো ঘরটিতে প্রবেশ করে। প্রতিটা ইঁটে দারিদ্রতার ছাপ ফুটে উঠেছে। সরকারি ঘরের জন্য সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন লাভ হয়নি। আজ পর্যন্ত হয়নি বিধবা ভাতা। রেশন কার্ড না থাকায় পাচ্ছে না কোন রেশন ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই বিধবা মহিলার বসবাসের রান্না ঘরটিও সম্প্রতি বৃষ্টিতে একেবারে ‌ ভেঙে ‌পরেছে। প্লাস্টিক মুড়িয়ে কোনো রকম বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। 

পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী গোলাম মর্তুজা জানান প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা তালিকায় তার নাম রয়েছে। তার আধার কার্ড না থাকায় ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে না। এমনকি ‌তার নামটিও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় কম্পিউটারে রেজিস্টারও করা হয়নি। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হলেই তার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন  বলে জানান। তার বাস্তু ভিটেছাড়া কোন জমি না থাকায় নলকূপ ও শৌচাগারের ব্যবস্থাও করা হয়নি।

বিডিও অনির্বাণ বসু জানান, সাংবাদিক সূত্রেই খবরটি জানতে পারেন। মহিলাটির যেহেতু আধার কার্ড নেই তাই ব্যাংকে অ্যাকাউন্টও হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা পায়নি। আধার কার্ড যাতে দ্রুত করিয়ে দেওয়া যায় তার জন্য আধার কেন্দ্রের কর্ম-কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আধার কার্ড করিয়ে দেবেন বলে জানান এবং মহিলাটি যাতে দ্রুত ঘর পায় তারও ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad