করোনার পরেই বুবোনিক প্লেগের আতঙ্ক, প্রথম মৃত্য এই দেশে

 উলানবাটর
করোনার ভাইরাস নিয়ে লড়াই করা বিশ্বের সামনে এখন বুবোনিক প্লেগ নামে একটি নতুন হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। এই রোগে মঙ্গোলিয়ায় ১৫ বছরের এক বালকের মৃত্যু হওয়ার পর প্রচুর উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কথিত আছে যে ছেলেটি একটি সংক্রামিত ইঁদুরের মাংস খেয়েছিল যেটা তার কুকুর  ধরে এনেছিল।


 ১৫ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে মঙ্গোলিয়ায়
মিরর থেকে প্রাপ্ত খবরে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহ আগে ছেলেটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। যদিও এই মারাত্মক সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে কয়েক ডজন লোককে চীনে পৃথক করা হয়েছে। মঙ্গোলিয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান ডি নারঙ্গেরেল বলেছেন যে, 'এটি আমাদের দেশে দ্বিতীয় প্লেগ। চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইনার মঙ্গোলিয়ায় মার্মগ প্লেগের ঘটনাও সামনে এসেছে। এরপরেই রাশিয়া সতর্কতা দেখিয়ে ইঁদুর শিকার নিষিদ্ধ করেছে।

 বুবোনিক প্লেগ ২৪ ঘন্টা মধ্যে মারা জীবন কেড়ে নিতে পারে
মঙ্গোলিয়া সরকার জনগণকে একটি সতর্কতা জারি করে বলেছে যে, তারা যেন অবৈধভাবে শিকার করা কোনও মাংস না খায় । গত বছরও, প্লেগের কারণে চীনের অন্তর্নিহিত মঙ্গোলিয়ায় ২ জন মারা গিয়েছিলেন। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন জানিয়েছে যে, বুবোনিক প্লেগের সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে এই রোগটি ২৪ ঘন্টার মধ্যে একজন মানুষকে হত্যা করতে পারে।

 আমেরিকার এক কাঠবিড়ালিতে বুবোনিক প্লেগ পাওয়া গেছে
মার্কিন জনস্বাস্থ্য আধিকারিকরা বলছেন, কলোরাডোর মরিসন শহরে একটি কাঠবিড়ালিতে বুবোনিক প্লেগ পাওয়া গেছে। এটি কলোরাডোতে প্লেগের প্রথম ঘটনা। জেফারসন কাউন্টি জনস্বাস্থ্যের (জেসিপিএইচ) কর্মকর্তারা সর্বজনীন রূপে জারি করা এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, প্লেগ হ'ল ইয়ার্সিনিয়া পেস্টিস ব্যাকটিরিয়াম দ্বারা সংক্রামক রোগ।  গৃহপালিত পোষা প্রাণীদের পর্যাপ্ত যত্ন নেওয়া না হলে এটি মারাত্মক হতে পারে।

বুবোনিক প্লেগ কি?
বুবোনিক প্লেগ ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট একটি রোগ। প্রধান কারণ হ'ল প্লেগ নামক ব্যাকটিরিয়া। এখানে লক্ষ্য করার বিষয়টি হ'ল ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণ আছে, ভাইরাস নয়! অতএব, অ্যান্টিবায়োটিকগুলির সাথে চিকিৎসা সম্ভব। মঙ্গোলিয়ায়, গত বছর, মারমোট নামে একটি প্রাণী খেয়ে ২জন  রোগে জর্জরিত হয়েছিল, যার ফলে তাদের মৃত্যুও হয়েছিল। অতএব, এই সময় সাবধানতা অবলম্বন করায় কোনও ভুল হওয়া উচিৎ নয়। বিশেষত করোনার ভাইরাসের মহামারী যুগে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার।

 বুবোনিক প্লেগ কীভাবে ছড়ায়
বুবোনিক প্লেগ ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের কারণে ঘটে। এটি একটি বিশেষ ধরণের ব্যাকটিরিয়া, ইয়ার্সিনিয়া পেস্টিসে সংক্রামিত হওয়ার কারণে ঘটে। মানবদেহে, এই রোগটি সাধারণত ঠোকরানো বা কামড় দেওয়া প্রকৃতির প্রাণীদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে, যা সাধারণত পিস্সু‌ (পোকা/ইঁদুর জাতীয়) দের  সংস্পর্শে আসে।  কখনও কখনও এগুলো মানুষকে কামড়ায়, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। । রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের মতে, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালি বা স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে প্লেগ উপস্থিত থাকে এবং এই প্রাণীগুলি মানুষের সংস্পর্শে এলে তাদের সংক্রমণ সহজেই  মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। এটি ছাড়াও এটি কামড়, সংক্রামিত টিস্যু এবং সংক্রামক ফোঁটাগুলির কারণে ছড়িয়ে পড়ে।

 বুবোনিক প্লেগের লক্ষণগুলি কী কী?
বুবোনিক প্লেগের কারণে, নীচে উল্লিখিত কয়েকটি প্রাথমিক লক্ষণ একটি সংক্রামিত ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায়। সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তির মাথা ব্যথা থাকে। জ্বর,  শীতের সমস্যা, দুর্বলতা অনুভূত হয্‌  দেহের একাধিক জায়গায় ফোলাভাব দেখা যায়। লিম্ফ নোড বা পেটেও ব্যথা হতে পারে।

 বুবোনিক প্লেগের চিকিৎসা কী?
বুবোনিক প্লেগের চিকিৎসটি যদি সঠিক সময়ে ব্যবস্থা করা হয়, তবে আক্রান্তদের বাঁচানো যেতে পারে। তবে সামান্য কিছু মৃত্যু হতে পারে। এর সাথে সাথে চিকিৎসায় বিলম্বের ফলে আরও অনেকগুলি স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। আর প্রধানত আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং অ্যান্টিবায়োটিকগুলি চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। উপরে উল্লিখিত হিসাবে, প্লেগ মূলত তিন প্রকারের। সেই অনুসারে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে রোগীকে বিশেষ যত্নে রাখা হয়। এর পাশাপাশি তাকে প্রতিরোধমূলক অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি দেওয়া হয়।