করোনা ভয় তোয়াক্কা না করেই পাঠ দান করে চলেছেন এই শিক্ষক - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday, 18 July 2020

করোনা ভয় তোয়াক্কা না করেই পাঠ দান করে চলেছেন এই শিক্ষক



বিশেষ প্রতিবেদন: করোনার ত্রাসে আজ গোটা বিশ্ব জর্জরিত। প্রতিদিন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের দেশেও বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে সরকার পুনরায় লকডাউন কড়াকড়ি করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। আর এই লকডাউনের প্রভাব স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের জনজীবনে পরছে। স্বাভাবিক চেনা ছন্দ হারিয়ে ফেলেছি আমরা; ঘর থেকে কাজ করতে হচ্ছে, বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ। আমরা বড়রা তো ক্ষতির মুখে পরেইছি, তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পরেছে ক্ষুদেরা। করোনার কারণে ঘর বন্দী তারাও। সেই সাথে স্কুলেও যেতে পারছে বহু দিন ধরে। এতে পড়াশোনার ব্যাঘাত তো ঘটছেই, সেই সাথে তারা কিছুটা হলেও মুষড়ে পরেছে। যদিও বেসরকারি স্কুলগুলো অনলাইনের মাধ্যমে শিশুদের পঠন-পাঠন চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এমন অনেক প্রত্যন্ত এলাকা আছে, যেখানে অনলাইন পাঠ দেওয়ার সুবিধা নেই। আর থাকলেও কিছু কিছু সরকারি বিদ্যালয়ে এমন ঘরের শিশুরা পড়তে আসে, যাদের হয়তো এক বেলা খাবারও ঠিক করে জোটে না, ভরসা বিদ্যালয়ের মধ্যাহ্ন ভোজন। সেখানে দামি স্মার্ট ফোন ব্যবহার বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাস অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাহলে সেই সব শিশুদের পড়াশোনা কি থমকে যাবে? এই মহামারীর কী কেড়ে নেবে সেই সকল শিশুদের শিক্ষার অধিকার? হয়তো না, এই মহামারীর এতটা সাহস নেই যে মানুষকে সব দিক থেকে দমিয়ে রাখবে। আর এর জ্বলন্ত প্রমান আলিপুরদুয়ার জেলার হ্যামিল্টন গঞ্জের এক শিক্ষক বিশ্বজিৎ সাহা।

বিশ্বজিৎ সাহা, কালচিনি ব্লকের হ্যামিল্টন গঞ্জ বোর্ড ফ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক। এই বিদ্যালয়ে মূলত চা বাগান এলাকার শিশুরা পড়তে আসে। এছাড়াও আশেপাশের অঞ্চল থেকেও শিশুরা আসে পড়তে। বলা বাহুল্য, দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এদের পড়াশোনায় খুবই সমস্যা হচ্ছিল। সেই সময় এই স্কুলেরই শিক্ষক বিশ্বজিৎ বাবু তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। তিনি ১১/০৫/২০২০ থেকে এই সকল শিশুদের পাঠ দান করে যাচ্ছেন সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে, নিজ প্রচেষ্টায়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, নিজের বাড়ীর পাশে (হ্যামিল্টন গঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পাশে) তিনি এই ক্ষুদ্র পাঠশালার আয়োজন করেছেন। এখানে সমস্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে তিনি বাচ্চাদের নিয়ম করে প্রতিদিন সকাল ১০.৩০ থেকে দুপুর ১.০০ টা পর্যন্ত পাঠ দান করে চলেছেন। তাঁর এই উদ্যোগে শিশুরা তো বটেই, তাদের অভিভাবকেরাও খুব খুশি।

বিশ্বজিৎ বাবুর সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, 'লকডাউনে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। তিনি ছাড়াও বিদ্যালয়ে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শ্রীমতি সোমা ব্যানার্জী‌, সহ শিক্ষক শ্রী ইন্দ্রজিৎ দাস এবং পার্শ্ব শিক্ষিকা শ্রীমতি সুস্মিতা গোস্বামী- এই তিনজন রয়েছেন, তবে করোনার কারণে সকলেই ঘরবন্দী। তাই তিনি শিশুদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজেই এই ক্ষুদ্র পাঠশালার আয়োজন করেছেন।'



উল্লেখ্য, হ্যামিল্টন গঞ্জ বোর্ড ফ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয় এই এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন বিদ্যালয়। ১৯৩৪ সালে, ব্রিটিশ আমলে শ্রী যতীন্দ্র মোহন কুন্ডুর হাত ধরে এই বিদ্যালয়ের পথ চলা। এরপর থেকে বহু শিক্ষক- শিক্ষিকা এখানে পাঠ দান করেছেন। সেদিনের সেই মাটির ঘর থেকে আজকের এই দ্বিতল ভবন পর্যন্ত সময়টা খুব একটা সহজ ছিল না। তবে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মিলিত প্রয়াসে আজ এত বছর ধরে বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন সুষ্ঠ ভাবে এগিয়ে চলেছে। আর বিশ্বজিৎ বাবুর কথা বলতে গেলে, বছর তিন হল, ওনাকে এই বিদ্যালয়ে নিয়োগ করা হয়েছে। তার বয়স টাও মাত্র ২৭। তবে এই কম বয়সে তিনি শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে এই করোনা মহামারীতেও তাদের যেভাবে পাঠ দান করছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার এই উদ্যোগকে আমরা কুর্ণিশ জানাই।

তার এই প্রচেষ্টা অন্যদেরও অনুপ্রেরণা জোগাবে আমরা সেই কামনাই রাখছি। আর সেই সাথে আর এই ক্ষুদেরাও একদিন বড় হয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়াবে, তার জন্যও রইল অনেক অনেক শুভকামনা।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad