রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রথম থেকেই একটা চাপানোতর চলছিল রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে। অন্তত বিরোধীদের তরফে এমনটাই অভিযোগ বারবার আসছিল। সোমবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে যে বুলেটিন প্রকাশ পায় তার ধরন বদল করা হয়েছে। নতুন বুলেটিনে কর্মর্বিদিতি মৃত্যুর তালিকা মুছে ফেলেছে রাজ্য সরকার। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ফের বিতর্ক রাজনৈতিক মহলে। মঙ্গলবার এই গোটা ঘটনার নেপথ্যে ফের রাজ্য সরকারের তথ্য গোপনের অভিযোগে সরব হন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
সোমবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে যে বুলেটিন প্রকাশ করা হয় তার প্রথম ভাগে কোমর্বিডিটি মৃত্যুর তালিকা ছিল শূন্য। অন্যদিকে এতদিন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশে করোনায় মৃত্যু ও কোমর্বিডিটির ভিত্তিতে মৃত্যু আলাদা ভাবে ভাগ করা হচ্ছিল। সে ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই ৭২ জনকে কোমর্বিডিটি মৃত্যুর তালিকায় রাখা হচ্ছিল। অর্থাৎ এই ৭২ জন করোনায় আক্রান্ত হলেও তাদের মৃত্যু অন্য কারণ বলেই দেখানো হচ্ছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিনে।
এদিকে ৮ তারিখের বুলেটিনে আচমকাই ওই ৭২ জনকে করোনায় মৃতদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যদিও ৮ তারিখের বুলেটিনের ৫ নম্বর পাতায় কোমর্ডিবিটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে ২৬৬ জন কোমর্বিডিটি তালিকাভুক্ত, অর্থাৎ এরা করোনা আক্রান্ত হলেও এদের শরীরে অন্যান্য রোগ ছিল। কিন্তু এখানে একবারও বলা হয়নি এদের মৃত্যুর কারণ কি। অন্যদিকে কোমর্বিডিটি অ্যাবসেন্ট দেখানো হয়েছে ১৩৯ জন, অর্থাৎ এরা শুধুমাত্র করোনায় আক্রান্ত। এদিকে এই বুলেটিন প্রকাশ্যে আসার পর এই বিতর্ক শুরু হয়। প্রশ্ন উঠতে থাকে, এতদিন যাদের মৃত্যুর কারণ অন্য রোগ বলে বিবেচনা করা হচ্ছিল হঠাৎ করে কি করে তাদের করোনা আক্রান্তের মৃতের তালিকার সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। এদিন এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ফের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'রাজ্যে করোনায় মৃতের তথ্য প্রথম থেকে চাপা দেওয়া হয়েছে। এখন করোনায় মৃতের সংখ্যা গলানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে এখন আর চেপে রাখা যাচ্ছে না। তাই বারবার পরিসংখ্যান বদল হচ্ছে। তথ্য গুলিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার বুলেটিনের ফিগার পাল্টানো হচ্ছে।'
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় বুলেটিনে এতদিন ধরে ৭২ জনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কোমর্বিডিটি ডেথ লেখা ছিল। এদিকে গতকালের বুলেটিনে ৪০৫ জন কেই যুক্ত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বুলেটিনে। অর্থাৎ ৪০৫ জন কেই পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত বলে ধরা হয়েছে। এদিকে রাজ্য সরকারের বুলেটিন অনুযায়ী কোমর্বিডিটি প্রেজেন্ট ২৬৬-র সঙ্গে কোমর্বিডিটি অ্যাবসেন্ট ১৩৯ যোগ করলেই ৪০৫ সংখ্যাটা মেলে।
প্রসঙ্গত, করোনায় আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা জনসমক্ষে আনতে প্রথম থেকেই করোনা বুলেটিন প্রকাশ করতে থাকে রাজ্য সরকার। এর সাথেই করোনায় মৃতদের মৃত্যুর কারণ জানার জন্য অডিট কমিটি গঠন করা হয় রাজ্য সরকারের তরফে। এরপরে যতদিন গেছে একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছে এই বুলেটিনের ফিগার। প্রথমে করোনায় মৃতদের সংখ্যা একভাবে প্রকাশ করা হলেও পরে তা পরিবর্তন করা হয়। অডিট কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনা অ্যাক্টিভ ও নন অ্যাক্টিভ কেস হিসেবে মৃত্যু ফাইল করা হতে থাকে। এরপরই ফের শুরু হয় বিতর্ক। যদিও শেষমেষ বিরোধীদের চাপে পড়ে অডিট কমিটির তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তারপরেও কোমর্বিডিটি মৃত্যু হিসেবে যে ৭২ জনকে দেখানো হয়েছিল তার কোন সুরাহা হয়নি। অবশেষে ৮ তারিখের বুলেটিনে ওই ৭২ জনকে করোনায় মৃতদের তালিকার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। সেখানেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা যে, তাহলে এতদিন কিভাবে ওই ৭২ জনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে অন্য রোগ বলা হচ্ছিল। যদিও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে কোনও রকম বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

No comments:
Post a Comment