বঙ্গে ধারণার চেয়েও কয়েক গুণ অধিক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 22 May 2020

বঙ্গে ধারণার চেয়েও কয়েক গুণ অধিক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান





পশ্চিমবঙ্গে ধারণার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি তা-ব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা ঘণ্টা চারেকের তুমুল ঝড়ে ল-ভ- হয়ে গেছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকা।  এসব স্থানে অন্তত ৭২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে আসল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানা যায়নি। এ সময় বহু গ্রাম তলিয়ে যায়, শত শত গাছ উপড়ে যায় এবং বহু ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঘূর্ণিঘড়ের মূল তা-ব চলে।

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘আম্ফান এতটা ভয়াবহ হবে ভাবিনি। গোটা শহর লন্ডভন্ড  করে দিয়েছে। তিনশর বেশি গাছ, কিছু বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আম্ফানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের সহস্রাধিক ঘর-বাড়ী গ্রাস করেছে এই ঝড়। তিনি আরও জানান, আম্ফানের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে এক লাখ কোটি টাকা। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, পশ্চিমবাংলাকে এখন সবকিছু পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

রাজ্যের আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সুন্দরবনসহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮৫ কিমি বেগে ঝড় বয়ে গেছে। আয়লার সময়ে উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। আর কলকাতায় আয়লার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। এ দিন আম্ফানের তা-বের সময়ে দমদমে ঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটার এবং কলকাতার আলিপুরে ১১৪ কিলোমিটার। রাত পর্যন্ত কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে ২৪৪.২ মিলিমিটার।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, বুধবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ রাজ্যজুড়ে শুরু হয় আম্ফানের তান্ডবলীলা। এরপর সন্ধ্যা থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো স্থায়ী হয় এই ঘূর্ণিঝড়। প্রবল ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার পেরিয়ে যায়। সন্ধ্যাবেলায় তা বাড়তে বাড়তে এসে পৌঁছায় ১৩০ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে হয় প্রবল বর্ষণ। উপকূলবর্তী জেলায় কয়েক হাজার কাঁচা বাড়ী ভেঙে পড়ে। বহু বাড়ীর টিনের চাল উড়ে যায়, কোথাও ভেঙে পড়ে ইটের দেওয়াল। উপড়ে পড়ে বহু গাছ, ট্রাফিক সিগন্যাল, টেলিফোন ও বিদ্যুতের খুঁটি। ফলে কলকাতাসহ বহু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ হয়ে যায় বিচ্ছিন্ন। বিপর্যস্ত হয় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাও। সেই সঙ্গে জল জমে বিচ্ছিন্ন বহু এলাকা। সৈকত শহর দীঘাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বসতি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, কুলতলী, কৈখালী, পাথরপ্রতিমা এলাকায় নদীর বাঁধে ফাটল ধরে। ফলে ভেসে যায় কচুবেড়িয়া জেটি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কলকাতা বিমানবন্দর। বেশ কিছু জায়গায় শেড ভেঙে পড়েছে এবং তা গিয়ে পড়েছে রানওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানের ওপর। পুরো বিমানবন্দরই জলমগ্ন হয়ে পড়ে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর স্টেশনের গ্লোসাইনবোর্ড উড়ে যায়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পুলিশ সুপারের মূল ফটকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কলকাতার চিত্তরঞ্জন এভিনিউতে ডাকঘর অফিসের একটি বোর্ড উড়ে রাস্তায় পড়ে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে হাসপাতালে টিনের চাল উড়ে গিয়ে পড়ে পাশের জায়গায়। হাওড়ার ব্যাটরায় খড়কুটোর মতো উড়ে যায় স্কুলের টিনের চাল।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগরদ্বীপ এলাকায় কাঁচা বাড়ীর একটিও অবশিষ্ট নেই। বহু পাকা বাড়ীও ক্ষতিগ্রস্ত। বহু ঝড়ের সাক্ষী থাকা এলাকার মানুষ কখনও এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হননি বলেই জানিয়েছেন। কিছুক্ষণ থমথমে পরিস্থিতির পর নতুন করে ফিরে আসে প্রলয়। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বকখালি, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি, ঝড়খালি, গোসাবা। আবহাওয়া দফতর জানায়, বিকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ সাইক্লোনের মূল অংশ প্রবেশ করেছে সুন্দরবনে। তখন ঝড়ের গতিবেগ ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad