ইরফান খান বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার অভিনয় প্রতিভা নিয়ে বলিউডের প্রবীণ-নবীন সবাই প্রশংসা করেছেন। এবার তাকে নিয়ে সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে লিখেছেন, কালজয়ী অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ।
নাসিরুদ্দিন ও ইরফান এক সঙ্গে দুটি ছবি করেছেন। বিশাল ভরদ্বাজের মকবুল ও ৭ খুন মাফ। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নাসির লিখেছেন, ইরফান মানুষকে বিশ্বাস করতেন, বুদ্ধির ঝলক ও ব্যক্তিত্বের চৌম্বকীয়তা তার মধ্যে এক ধরনের নম্রতা এনেছিল। অদ্ভুত হেঁয়ালি ছিলেন ইরফান, বহু স্বল্প পরিশ্রমী অভিনেতার ঈর্ষার কারণ ছিলেন যারা সাফল্যের জন্য ঈশ্বরের বদান্যতা, জন্মসূত্রে পাওয়া প্রতিভা বা স্রেফ কপালের ওপর নির্ভর করেন। ইরফান যা হয়ে উঠেছিলেন তার পেছনে এই একটি কারণও ছিল বলে তার মনে হয় না।
নাসির বলেছেন, স্বীকার করতে কোনও অস্বস্তি নেই, ইরফানের অভিনয় ক্ষমতা তার নিজেরও ঈর্ষণীয় ছিল। যেভাবে ইরফান কাজ করতেন, দেখে বহুবার মনে হয়েছে, যদি ঘড়িটা পিছনে ফেরাতে পারতেন। পুরোনো কিছু অভিনয় নতুন এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারতেন। তার অভিনয়ের প্রতি নাসিরের অসামান্য মুগ্ধতা ছিল। এই বয়সেই অভিনয়ের সমস্ত খুঁটিনাটি তার আয়ত্ত্বে, তারপরেও শেখার আগ্রহ একটুও কমেনি। অভিনয় কখনও অভিনয় হয়ে উঠতে দেননি ইরফান, তাই বোঝা অসম্ভব হয়ে যেত, ঠিক কীভাবে কী করলেন উনি।
বিভিন্ন সময়ে ইরফান বলেছেন, আমেরিকান টিভি সিরিজ ইন ট্রিটমেন্ট-এ জীবনের অন্যতম কঠিন চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
গল্পে এক বিপত্নীক ব্যক্তির চরিত্রে ছিলেন তিনি। যাকে স্ত্রী-বিহীন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রতি মুহূর্তে হোঁচট খেতে হচ্ছে। শ্যুটিংয়ের আগের রাতে ইরফান নাসিরকে ফোন করেন। তিনি বলেন, ৪ পাতার ডায়ালগ আছে, কীভাবে মুখস্ত করবো? আপনি কীভাবে করেন? জবাবে নাসির বলেন, আপনার কাছে সময় কত আছে? ইরফান বলেন, এক রাত। তখন নাসিরুদ্দিন বলেছিলেন, তাহলে ঘুমের কথা ভুলে যান। গোটা রাত ধরে মুখস্ত করুন। যত বার সম্ভব পড়ে ফেলুন। আমার কাছে কোনও জাদু কাঠি তো নেই, আমি হাজার বার করে পড়ি, যাতে মনে থাকে। এই রাতটায় যতবার পারেন, পড়ে ফেলুন।
নাসিরুদ্দিনের কথাই শুনেছিলেন তিনি। পরদিন তার অভিনয় সেটের সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল।
No comments:
Post a Comment