১৯৯২ সাল নাগাদ রামগোপাল ভার্মা ঠিক করেন ‘দ্রোহী’ বলে একটি ছবি বানাবেন। সে ছবিতে তাঁর প্রথম পছন্দ ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। মাধুরীর বাজার তখন তুঙ্গে। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য সেই ছবি নাকোচ করে দেন মাধুরী। এ দিকে রামও ছাড়বার পাত্র নন। ঠিক করেন হুবহু মাধুরীর মতো দেখতে হবে-এমন এক অভিনেত্রীকেই ওই ছবিতে নিবেন তিনি।
ইন্ডাস্ট্রিতে তখন ঊর্মিলা মাতণ্ডকরের লুককে মাধুরী এবং শ্রীদেবীর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছিল। রামও সেটা জানতেন। তাই মাধুরী ফিরিয়ে দেওয়ার পর ঊর্মিলাকে সেই ছবি অফার করেন তিনি। এ রকম একটি অফারের সন্ধানেই ছিলেন ঊর্মিলা। তিনি শোনামাত্র রাজি হয়ে যান।
কে জানত মাধুরীর এই না-করা ছবি আশীর্বাদ হয়ে আসবে ঊর্মিলার জীবনে! ‘দ্রোহী’র শ্যুটিংয়ের সময় এক দিন ড্যান্স কোরিওগ্রাফার অসুস্থতার কারণে সেটে আসতে পারেননি। এ দিকে শ্যুটিংয়ের সমস্ত আয়োজন হয়ে গিয়েছে। একটি নাচের দৃশ্যে ঊর্মিলাকে রামগোপাল বলেন, “তোমার ইচ্ছে মতো নাচ। আমি শ্যুট করে নেব।” ব্যাস কেল্লাফতে!
ঊর্মিলার সেই নাচ দেখে রাম তখনই ঠিক করেন এঁকে নিয়ে আরও ছবি বানাবেন। 'ঊর্মিলা' আসক্তিতে পড়ে যান রামগোপাল ভার্মা।
ওই একটি নাচের দৃশ্য থেকেই জন্ম রামগোপাল ভার্মার আইকনিক ছবি ‘রঙ্গিলা’-র। এক দিকে জ্যাকি শ্রফ এবং অন্য দিকে আমির খান। দুই সুপারস্টারের মাঝে জায়গা হয় ঊর্মিলার। জ্যাকি এবং আমিরের তারকা ইমেজের কাছে ঊর্মিলার চরিত্র যাতে ফিকে না হয়ে যায় সে দিকে কড়া নজর ছিল রামের। ই ছবির ফ্যাশন ডিজাইনার মণীশ মলহোত্রকেও রাম কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন, ছবিতে যেন ঊর্মিলাকে হুবহু শ্রীদেবীর মতো দেখতে লাগে। পরিচালকের কথা মেনে সে রকম জামাকাপড়ই বানিয়েছিলেন মণীশ।
আর সে জন্যই ১৯৯৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ‘রঙ্গিলা’ মুক্তি পেতেই চারিদিকে হইহই পড়ে যায়। দর্শকের নতুন ক্রাশের নাম রাতারাতি হয়ে যায় ‘মিলি’ ওরফে ঊর্মিলা। ও বাকিটা ইতিহাস। এত বছর পরেও ঊর্মিলার সেই ‘ইআইরে ইআইরে’ আজও একই রকম জনপ্রিয়। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ঊর্মিলাকে। এক রাতের মধ্যেই তিনি পেয়ে যান সুপারস্টার তকমা। আর রামও পণ করে নেন, এই নায়িকাকে তিনি সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যাবেন। হলও তাই। রামের ছবি মানেই তখন ঊর্মিলা। তিনি ছাড়া ছবি করার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন রামগোপাল ভার্মা। ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুদের বলে বেড়াতেন, ঊর্মিলা তাঁর ‘লাকি চার্ম’। এ দিকে ঊর্মিলাও রামগোপালের পরিচয় দিতেন 'গুরু' হিসেবে।
রামের ‘দাউদ’ ছবিতে প্রথমে তিনি অশ্বিনী ভাবেকে নিলেও শেষমুহূর্তে সেই ছবিতেও জায়গা হয়ে যায় ঊর্মিলার। শুধু তাই নয়, ‘সত্য’ ছবিতে প্রথমে নেওয়ার কথা ছিল মহিমা চৌধুরীকে। তিনি ছবিতে সই-ও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু রামের সেই ছবিতেও বাদ পড়েন মহিমা। নেওয়া হয় ঊর্মিলাকে।
অন্য দিকে ঊর্মিলাও তাঁর ‘গুরু’ রামের অনুমতি ছাড়া কোনও ছবিতে সই করতেন না। সুপারহিট ছবি ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবিতে কারিশমা কাপুরের চরিত্রটির অফার প্রথমে ঊর্মিলার কাছেই এসেছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। কারণ বারণ করেছিলেন রাম। শাহরুখ-মাধুরীর ওই ছবি না নিয়ে তিনি যে ভুল করছেন, সে বিষয়ে সাবধান করেছিলেন অনেকেই।
রামের সঙ্গে ঊর্মিলার সম্পর্ক নিয়ে সে সময় সরগরম ছিল বলিউড। মুখে গুরু-শিষ্য বললেও তাঁদের সম্পর্ক যে আরও গভীর, তা বুঝতে কারও অজানা ছিল না। শেষমেষ একদিন খবর পৌঁছায় রামগোপালের স্ত্রীর কাছে। শোনা যায়, স্বামীর এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি তিনি। চড় মেরে বসেন ঊর্মিলাকে। ঊর্মিলাকে চড়! মানতে পারেননি রামগোপালও। স্ত্রীকে কয়েকদিনের মধ্যেই ডিভোর্স দিয়ে দেন তিনি।
সব ঠিকই চলছিল। ঠিক এই সময়েই হঠাৎই রামের জীবনে প্রবেশ ঘটে অন্য এক নারীর। তিনি অন্তরা মালি। ঊর্মিলাকে ছেড়ে রাম মজেন অন্তরাতে। নায়িকার চরিত্রে ঊর্মিলার বদলে ক্রমে নিতে থাকেন অন্তরাকে। আর ঊর্মিলা? তাঁর পায়ের তলার মাটি ক্রমশ সরে যেতে থাকে। ছবির অফারও কম আসতে থাকে। রামগোপালের ছবিতেও পেতে থাকেন সাইড রোল।
এ দিকে এত দিন যাবত রামের ছত্রছায়ায় থাকার জন্য সে ভাবে অন্য যোগাযোগও তৈরি হয়নি ঊর্মিলার। তাই হাতে গোনা ছবি পেতে থাকেন তিনি। এ দিকে বয়সও বাড়ছিল। পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল প্রতিযোগিতা। ধীরে ধীরে বলিউড থেকে দূরে সরে যান ঊর্মিলা।

No comments:
Post a Comment