করোনা মহামারীতে লন্ডভন্ড বিশ্ব; অথচ উৎস স্থল ফিরছে স্বাভাবিক ছন্দে - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday, 28 March 2020

করোনা মহামারীতে লন্ডভন্ড বিশ্ব; অথচ উৎস স্থল ফিরছে স্বাভাবিক ছন্দে



ইতালি, স্পেনের হাল ভয়াবহ। বিপর্যয়ের শঙ্কায় আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি। করোনা ভাইরাসের বিশ্বজোড়া এই কালো মেঘেও উজ্জ্বল আলোকরেখা— দীর্ঘদিনের লকডাউন পার করে ক্রমশ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে চীনের করোনা সংক্রামিত অঞ্চল। সেইসঙ্গে শোনা যাচ্ছে কিছু আশার পূর্বাভাস, দুর্বল হচ্ছে করোনা।

চীনে এতদিন বন্ধ থাকা কয়েকটি কারখানায় আবার উৎপাদন শুরু হয়েছে, চালু হয়েছে কয়েকটি বিমানের ফ্লাইট। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই পুনরুজ্জীবন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে। গত এক মাসে চীনের গাড়িশিল্প সব থেকে বেশি ধাক্কা খেয়েছিল। বুধবার আবার কিছু গাড়ি কারখানায় কাজ শুরু হয়েছে। এমনকী করোনা ভাইরাসের উৎসভূমি হিসেবে চিহ্নিত যে উহান শহর, সেখানেও শিগগিরই লকডাউন শেষ হতে চলেছে। ধীরে হলেও ছন্দে ফিরছে চীনের শহরগুলোর জনজীবন। মেট্রো স্টেশনগুলোতে গত এক সপ্তাহে নিত্যযাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ২১ শতাংশ। অনলাইনে ভোগ্যপণ্যের বিক্রিও আস্তে আস্তে বাড়ছে।

করোনা প্রতিরোধ প্রসঙ্গে আরও এক আশার কথা মঙ্গলবার শুনিয়েছেন আমেরিকার টেক্সাস ইউনিভার্সিটির চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষক বিনীত মেনাচারি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই বিজ্ঞানী আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, যতটা ভয় পাওয়া গিয়েছিল, ততটা দ্রুত নিজের চরিত্র বদলাচ্ছে না করোনা ভাইরাস, যা তাকে আরও  অপ্রতিরোধ্য বা আরও মারাত্মক করে তুলতে পারে। ভাইরাসটির কিছু মিউটেশন ঘটছে বটে, কিন্তু তা খুব সামান্য এবং গুরুতর কিছু নয়। এমনকি মিউটেশন ঘটার পর তার সংক্রমণ ক্ষমতাও বেড়ে যাচ্ছে না। অর্থাৎ দুর্বল হচ্ছে করোনা।

২০১৩ সালে রসায়নে নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী মিশায়েল লেভিটও এদিন আশ্বাস দিয়েছেন, এবার কমতে শুরু করবে সংক্রমণ, পিছু হঠবে করোনা। এই লেভিটই ফেব্রুয়ারির শুরুতে প্রথম সতর্ক করেন যে, করোনা ভাইরাসে চীনে কমপক্ষে ৮০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হবেন। মারা যাবেন ৩,২৫০ জন। দেখা যায়, এ পর্যন্ত চীনে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০,২৯৮ জন। মৃতের সংখ্যা ৩,২৮১! আশ্চর্যভাবে পূর্বাভাস মিলিয়ে দেওয়া লেভিট এবার জানালেন, দ্রুত করোনার প্রকোপ থেকে মুক্তি পাবে গোটা বিশ্ব। তবে চীন, ইতালির মতোই আমেরিকাতেও হতে পারে মৃত্যুমিছিল। কিন্তু তারপরই ধীরে ধীরে কমতে থাকবে সংক্রমণ, কমবে মৃত্যু।

করোনার প্রকোপ এখন তীব্র ইউরোপের দেশগুলোতে। ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা সব থেকে বেশি; ৬,৮২০ জন (৯১৩৪ জন বর্তমানে)। কিন্তু স্পেনে মৃত্যুসংখ্যা এদিন চীনকে ছাড়িয়ে গেল। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর হার ২৭ শতাংশ বেড়ে বুধবার স্পেনে মৃতের সংখ্যা হয়েছে ৩,৪৩৪, আক্রান্ত ৪৭,৬১০ জন। ইতালিতে চিকিৎসার সঙ্কট এখনও চলছে। হাসপাতালে সবাইকে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। খোলা আকাশের নিচে রাখতে হচ্ছে রোগীদের। সংক্রমণ রুখতে মরিয়া সরকার এদিন কঠোর শাস্তির ঘোষণা করেছে, যে নাগরিকেরা রোগ লুকিয়ে রাখছেন, বা রোগ শনাক্ত হওয়ার পর কোয়ারেন্টিন মানছেন না তাঁদের জন্য। স্পেনেও পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর। আগামী এক সপ্তাহে আরও বেশি সংক্রমণ এবং মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন সেদেশের চিকিৎসকেরা। জার্মানিও একই আশঙ্কায় রয়েছে। সেদেশের বিখ্যাত চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের প্রধান লোথার ভিলার এদিন বলেছেন, করোনা মহামারীর একদম দোরগোড়ায় জার্মানি।

খারাপ একটা সময়ের শুরু মাত্র দেখা যাচ্ছে। জার্মানির জাতীয় সংসদে এদিন দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে করোনা প্রতিরোধে সরকার কত বেশি অর্থ বরাদ্দ করতে পারে, তা নিয়ে। আমেরিকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাণিজ্য মহলকে কিছুটা আর্থিক মদত জোগানোর প্রক্রিয়া এদিন শুরু হয়েছে। হোয়াইট হাউস এবং মার্কিন কংগ্রেস ২ ট্রিলিয়ন ডলারের এক ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বেহাল বাণিজ্য সংস্থাগুলোর জন্য। চলছে মৃত্যুমিছিল। মোট মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে ৭৮৫–‌তে।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফর–‌নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর একটু স্বস্তিতে, যেহেতু আক্রান্ত কোনও দেশের সঙ্গে তাদের স্থলসীমান্ত ভাগ করে নিতে হয় না। টোকিওর বাসিন্দাদের অন্তরীণ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন শহরের মেয়র ইউরিকো কোইকে। থাইল্যান্ডে সংক্রমণ রুখতে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সরকার। পাকিস্তানে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারির চাপ বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর।‌

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad