কালিয়াগঞ্জের বাসন্তী পূজা ৪০০ বছরের প্রাচীন

বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বন,আর তেরো পার্বনের মধ্য অন্যতম বাসন্তী পূজা। উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের বোচাডাঙ্গা গ্রামপঞ্চাতের অধিন চারগ্রাম সার্বজনীন বাসন্তী পুজা। ঐতিহ্যবাহী এই বাসন্তী পূজা ৪০০ বছরের প্রাচীন।





এই বাসন্তী পুজা কালিয়াগঞ্জের গ্রামীন লোকসংস্কৃতির পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ঐতিহ্যবাহী আনন্দের পরম্পরায় এবারে থাবা বসিয়েছে করোনা। কালিয়াগঞ্জের কুঁজিয়া গ্রামের মন্দিরে সিংহবাহিনী দশভুজা মা বাসন্তীর পুজো হয় ঘটা করে। এই বাসন্তী পুজো ঘিরে আয়োজন হয় ৫ দিনের মেলা।






সন্তানের মঙ্গল কামনায় দিনাজপুরের জমিদারের হাতে সুচনা হওয়া এই চন্ডী মন্দিরে মা বাসন্তী পুজো ঘিরে মেলা বসে। আদিকালের রীতি মেনে এখনো কুঁজিয়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী বাসন্তী পুজোর সঙ্গে মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। এবারে পুজোর আয়োজন হলেও মেলা হচ্ছেনা। করোনা ভাইরাস নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোন জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে সরকার। ফলে প্রশাসনিক অনুমতি মেলেনি বাসন্তী মেলার। তাই পুজোর আয়োজন হলেও এবারে মেলা বাতিল।





কালিয়াগঞ্জের কুঁজিয়া, আটঘড়া, মহাগ্রাম ও মুজিয়া এই চার মৌজার বাসিন্দারা সম্মিলিত ভাবে এই বাসন্তী পুজো ও মেলার আয়োজন করে থাকে। ৪০০ বছরের প্রাচীন এই বাসন্তী পুজো ও  মেলার আলাদা ঐতিহ্য আছে। চৈত্র মাসে হওয়া এই বাসন্তী পুজোর অষ্টমীর দিনের আলাদা গুরুত্ব আছে স্হানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বহিরাগতদের কাছে।






 প্রাচীন রীতি মেনে এই মন্দিরে সন্তানের মঙ্গল কামনায় অষ্টমীর পুজোর দিন ৫ থোকা কলা অর্থাৎ ছড়ি দিয়ে পুজোর ডালা সাজিয়ে মায়ের চরনে নিবেদন করা হয়। চারগ্রামের সমস্ত পরিবার এখনো সেই রীতি মেনে মায়ের পুজো করে।






সন্তানের মঙ্গল কামনার সঙ্গে সন্তান লাভের আশায় নিষ্ঠার সাথে ৫ থোকা কলা দিয়ে ডালা নিবেদন করলে মা বাসন্তীর কৃপায় মনোস্কামনা পূর্ণ হয় বলে বিশ্বাসী এলাকার বাসিন্দারা। কুঁজিয়া গ্রামের এই বাসন্তী মন্দিরের স্হানীয়দের সঙ্গে কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ সহ আশপাশের জেলা ও বিহার থেকে বহু মানুষ আসে পুজো দিতে।





এবারে বাসন্তী পুজোর মহাষষ্ঠী সুচনা হবে ১৬ চৈত্র ৩০ মার্চ সোমবার। দশমী ২০ চৈত্র ৩ এপ্রিল শুক্রবার। ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্য সরকার সমস্ত ধরনের জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। এতেই মেলা আয়োজনের অনুমতি মেলেনি। কালিয়াগঞ্জের এই বাসন্তী পুজো উদ্যোক্তাদের অন্যতম বিজয়চন্দ্র সরকার জানান নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর আয়োজন হচ্ছে। কিন্তু এবারে মেলা হচ্ছেনা।





করোনা ভাইরাস নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে, তার জন্য মেলা বাতিল। মেলা বাতিল হলেও পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। মন্দিরের ভেতরে সিংহবাহিনী দশভুজা মা বাসন্তীর মাটির প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। অন্যদিকে মন্দিরে গায়ে নতুন রঙের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। বাহিরে মন্ডপ বাধার কাজ হচ্ছে।





কালিয়াগঞ্জের চারগ্রাম বাসন্তী পুজো কমিটির সম্পাদক বিবেকানন্দ সরকার বলেন মানুষের সুস্থতা আগে। মায়ের অশেষ কৃপায় করোনা সংকট মোকাবিলায় আমরা সক্ষম হবো। এবারে না হলেও আগামীবছর আবার বসবে মেলা।