করোনা লক ডাউনের জেরে শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে গেল উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের চারগ্রাম সার্বজনীন বাসন্তী পুজো। মন্দিরে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে পুরোহিতের মাধ্যমে মায়ের পুজো হচ্ছে। কিন্তু তাতে অংশ গ্রহন করতে পারছেনা চারগ্রামের বাসিন্দারা।
এই বাসন্তী পুজো ঘিরে যে ঐতিহ্যবাহী মেলার আয়োজন হত, করোনার গ্রাসে তা আগেই বাতিল ঘোষনা হয়েছিল। লক ডাউনের কোঁপে এবারে ৪০০ বছরের প্রাচীন এই বাসন্তী পুজোয় বাসিন্দাদের অংশ গ্রহন এবং অঞ্জলী দেবার রীতিতে ছেদ পড়ল। কালিয়াগঞ্জের এই চারগ্রাম বাসন্তী পুজো এবং তাকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন গ্রামীন লোকসংস্কৃতির পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। সেই পরম্পরায় এবারে থাবা বসিয়েছে করোনা।
কালিয়াগঞ্জের ৪ নম্বর বোঁচাডাঙ্গা পঞ্চায়েতের কুঁজিয়া গ্রামের মন্দিরে সিংহবাহিনী দশভুজা মা বাসন্তীর পুজো হয় ঘটা করে। এই বাসন্তী পুজো ঘিরে আয়োজন হয় ৫ দিনের মেলা। সন্তানের মঙ্গল কামনায় দিনাজপুরের জমিদারের হাতে সুচনা হওয়া এই চন্ডী মন্দিরে মা বাসন্তী পুজো ঘিরে মেলা বসে। আদিকালের রীতি মেনে এখনো কুঁজিয়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী বাসন্তী পুজোর সঙ্গে মেলার আয়োজন হয়ে আসছে।
এবারে পুজোর আয়োজন হলেও মেলা হচ্ছেনা। করোনা ভাইরাস নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোন জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে সরকার। ফলে প্রশাসনিক অনুমতি মেলেনি বাসন্তী মেলার। তাই পুজোর আয়োজন হলেও এবারে মেলার সঙ্গে অঞ্জলী দেবার রীতি বাতিল।
কালিয়াগঞ্জের কুঁজিয়া, আটঘড়া, মহাগ্রাম ও মুজিয়া এই চার মৌজার বাসিন্দারা সম্মিলিত ভাবে এই বাসন্তী পুজো ও মেলার আয়োজন করে থাকে। ৪০০ বছরের প্রাচীন এই বাসন্তী পুজো ও মেলার আলাদা ঐতিহ্য আছে। চৈত্র মাসে হওয়া এই বাসন্তী পুজোর অষ্টমীর দিনের আলাদা গুরুত্ব আছে স্হানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বহিরাগতদের কাছে। প্রাচীন রীতি মেনে এই মন্দিরে সন্তানের মঙ্গল কামনায় অষ্টমীর পুজোর দিন ৫ থোকা কলা অর্থাৎ ছড়ি দিয়ে পুজোর ডালা সাজিয়ে মায়ের চরনে নিবেদন করা হয়।
চারগ্রামের সমস্ত পরিবার এখনো সেই রীতি মেনে মায়ের পুজো করে। সন্তানের মঙ্গল কামনার সঙ্গে সন্তান লাভের আশায় নিষ্ঠার সাথে ৫ থোকা কলা দিয়ে ডালা নিবেদন করলে মা বাসন্তীর কৃপায় মনোস্কামনা পূর্ণ হয় বলে বিশ্বাসী এলাকার বাসিন্দারা। কুঁজিয়া গ্রামের এই বাসন্তী মন্দিরের স্হানীয়দের সঙ্গে কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ সহ আশপাশের জেলা ও বিহার থেকে বহু মানুষ আসে পুজো দিতে।
এবারে বাসন্তী পুজোর মহাষষ্ঠী সুচনা হয়েছে সোমবার। মঙ্গলবার ছিল সপ্তমী। বুধবার অষ্টমীর সকালে মায়ের চরনে পুজোর ডালা নিবেদন করে অঞ্জলী দিতে হাজার হাজার মানুষের আগমন হওয়ার কথা ছিল। লক ডাউনে এই জমায়েত নিয়ে প্রশাসনের আপত্তির জেরে এবছর করোনার জন্য পুজো স্থগিত ঘোষনা করে মন্দিরের সামনে পোস্টার দিয়েছে কমিটি।
পুজো স্থগিত হওয়ার জেরে মন্দিরের চাতালে বাঁশের মন্ডপ বাধা হলেও তাতে কাপর লাগানো হয়নি। কালিয়াগঞ্জের এই বাসন্তী পুজো উদ্যোক্তাদের অন্যতম বিজয়চন্দ্র সরকার জানান নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর আয়োজন হচ্ছে। কিন্তু এবারে বাসিন্দারা অংশ গ্রহন করতে পারছেনা পুজোয়। করোনা ভাইরাস নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে, তার জন্য অঞ্জলী প্রথা ও মেলা বাতিল।
No comments:
Post a Comment