নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মাটিগাড়া থানায় পুলিশি হেফাজতে অভিযুক্তের মৃত্যুর ঘটনায় দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়াল শহরে। লকআপে মারধর করার অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং ক্ষতিপূরণের দাবি করে বৃহস্পতিবার সারা দিন বিক্ষোভ দেখায় মৃতের পরিবার এবং স্থানীয়রা। অন্যদিকে, ঘটনার পরই তৎপর পুলিশমহল। পুলিশি হেফাজতে অভিযুক্ত বচন রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় অন্তর্বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট। পাশাপাশি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, শিলিগুড়ি মহকুমাশাসক এবং রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ঘটনার পর যথেষ্ট বিপাকে পুলিশমহল।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (জোন ২, পশ্চিম) কুনওয়ার ভুষণ সিং বলেন, “ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরথানে মারধরের কোন চিহ্ন মেলেনি। ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সমস্ত আধিকারিকদের জানানো হয়েছে। অন্তর্বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তিনি জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। এদিন সকালে শিলিগুড়ি মহকুমাশাসক দফতরের এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মিরজা তাজউদ্দিনের উপস্থিতিতে মাটিগাড়া থানায় মৃতের সুরথান হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ক্যামেরা বন্দি করা হয়েছে। এছাড়া মাটিগাড়া থানার ভিতরে থাকা সমস্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করে ফরেনসিকে পাঠান হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ আধিকারিকরা। এদিন মৃত বচন রায়ের দেহ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুরে অবৈধভাবে মদ বিক্রির অভিযোগে অভিযান চালিয়ে শিলিগুড়ি সংলগ্ন মাটিগাড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের খোলাইভক্তরি এলাকার ঠক্করের বাসিন্দা বচন রায়কে গ্রেফতার করে মাটিগাড়া থানার পুলিশ। থানায় নিয়ে আসা হলে ছ’টা নাগাদ আচমকা শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে বচনকে মাটিগাড়া ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, ছাড়ানোর জন্য ২০ হাজার টাকা ঘুষের দাবি করেছিল পুলিশ। তা দিতে দেরি হওয়ায় লকআপের ভিতরে মারধর করা হয় অভিযুক্তকে। তার ফলেই মৃত্যু হয়েছে বচন রায়ের। পুলিশ এবং মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুরথান এবং প্রাথমিক ময়নাতদন্তে মৃতের শরীরে মারধরের কোন চিহ্ন মেলেনি। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে শরীরের নমুনা ভিসেরা সহ আরও দুটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এদিন শিলিগুড়ি সকালে সুরথানের সময় মাটিগাড়া থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয়রা। সুরথানের পর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাতে গেলে ফের অ্যাম্বুলেন্স রাস্তার উপর আটকে অবরোধ শুরু হয়। খবর পেয়ে থানায় হাজির হন পুলিশ কমিশনার অথর্ব ত্রিপুরারি, ডিসিপি কুনওয়ার ভুষণ সিং, এসিপি বিদিতরাজ ভুণদেশ। তাঁদের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। এরপর ময়নাতদন্ত করিয়ে দেহ বাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় ফের চতুর্থ মহানন্দা সেতুর উপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে স্থানীয়রা। প্রায় এক ঘন্টা অবরোধের ফলে ওই রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এরপর বিশাল পুলিশবাহিনী নামালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

No comments:
Post a Comment