নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মৃত্যুর মিছিল কিছুতেই থামছে না জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে। প্রতি দিন দুরুদুরু বুকে হয় মৃত, নয় তো অসুস্থ গন্ডার উদ্ধারটাই এখন দস্তুর হয়ে উঠেছে জলদাপাড়ার বনকর্মীদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই মৃত্যু উপত্যকায় মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্যবনপাল উজ্জ্বল ঘোষ, ডিএফও কুমার বিমল সহ এক ঝাঁক বনকর্তা।
গত তিনদিনে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে পরপর পাঁচটি মাদি গন্ডারের রহস্য মৃত্যুর পর কার্যত দিশেহারা বনদপ্তর। কারন বেছে বেছে শুধু মাত্র মাদি গন্ডার গুলোই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে কেন এবং কেনই বা মাদি গন্ডাররাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তাই নিয়েই মারাত্মক উদ্বেগ ছড়িয়েছে বনদপ্তরের অন্দরে। প্রাথমিক ভাবে আনথ্রাক্সের তত্ত্ব সামনে এলেও বনকর্তাদের বর্তমান যুক্তি এই যে, যদি আদতেও ওই মারণ রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে থাকে, তবে পুরুষ গন্ডার অথবা অন্যান্য বন্যপ্রাণী যেমন হাতি, বাইসন ও হরিণ সহ বাকিদের দেহে তেমন কোন নমুনা এখনও মেলেনি। তাই নতুন করে শুধু মাত্র মাদি গন্ডারদের মরক নিয়েই প্রায় মাথার চুল ছেড়ার দশা হয়েছে বনকর্তাদের।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ব রেঞ্জ এলাকাটিকে বনরক্ষী ও কুনকি হাতি দিয়ে ঘিরে সিল করে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোন ভাবেই জঙ্গলের ওই নির্দিষ্ট এলাকার বন্যপ্রাণীরা অন্যত্র যেতে না পারে, আবার অন্য একার বন্যপ্রাণিরা ওই সংক্রমিত এলাকার জঙ্গলে প্রবেশ করতে না পারে। কারন অরণ্যের ওই এলাকা থেকেই পরপর দুই দিনে পাঁচটি গন্ডারের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ, তা স্বীকার করে নিয়েছে বনদপ্তর। মরক মোকাবেলায় কোলকাতা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ বন্যপ্রাণী চিকিৎসকদের দল শনিবারই ছুটে আসছেন জলদাপাড়ায়। এমনকি আগাম সতর্কতা হিসেবে জলদাপাড়ার কুনকি হাতিদের প্রতিষেধক প্রয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বনদপ্তর। আর একটি তত্ত্বও উঠেছে যে, সম জিনভুক্ত গন্ডারদের মধ্যে প্রজননের ফলে কোন মারাত্মক কিছু জিনঘটিত রোগেরও সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে মাদি গন্ডারদের মধ্যে। তাই সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটাতে এখন মৃত গন্ডারদের রক্তের নমুনার চুড়ান্ত রিপোর্টের দিকেই পাখির চোখ করেছেন রাজ্যের শীর্ষ বনকর্তাদের।
জলদাপাড়ার পরিস্থিতি যে জটিল তা স্বীকার করে নিয়েছে উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষ। তিনি জানান যে, বর্তমানে জলদাপাড়ার পরিস্থিতি জটিল। যে পাঁচটি স্ত্রী গণ্ডারের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে তিনটের শাবক রয়েছে তার মধ্যে একটা খুবই ছোটো। শাবকটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে আর দুটো বড় আছে তাদের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কিন্ত তাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে । সংক্রামিত জোন চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেই জোনে যে গণ্ডারগুলো আছে তাদের আ্যানথ্রাক্স এর টীকা করণ করার কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল চারটি পূর্ণবয়স্ক গণ্ডারকে টীকাকরণ করা হয়েছে। আজও আরও টীকাকরণের কাজ চলবে এবং কুনকি হাতিদের ও টীকাকরণ করা হবে ।

No comments:
Post a Comment