বিশেষ প্রতিবেদন:--
"পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে স্যাটেলাইট আর কেবলের হাতে ড্রয়িং রুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দী।"-- সত্যিই বোকা বাক্স বটে। যেভাবে টিভি সিরিয়ালের মধ্যে দিয়ে আমাদের বোকা বানিয়ে চলেছে, সে বিষয় কারও অজানা নয় নিশ্চয়ই। বিশেষ করে জলসা পরিবার আর জি বাংলা পরিবার। না আমার ঘরটিও এর কবল থেকে মুক্তি পায়নি। বেশ ভালোভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে রেখেছে আমাদের সকলকে, কি বলেন!
এই দুই পরিবারের সদস্যরা মিলে আমাদের পরিবারকে কেমন যেন অদৃশ্য ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, লক্ষ্য করেছেন কি? তাদের পরিবারের কলহ, হিংসা এসবের সাথে আমরা নিজেকে কেমন যেন না চাইতেও জড়িয়ে ফেলেছি। তাদের চিন্তা গুলো আমাদেরই চিন্তায় ফেলে দেয়। তাদের হতাশায় আমরা হতাশ হয়ে যাই।
তবে এই পরিবারের মেয়েদের এলেম আছে বলতে হবে। এই যেমন ধরুন জবা- ছোট থেকে সেভাবে পড়াশোনাই করেনি, অথচ এত বয়সে পড়াশোনা করে সে আজ হাইকোর্টের বিচারপতি হয়ে গেল। আবার মাঝে কয়েক বছর বিদেশে গিয়ে ওখানকার বদমায়েশদেরও নাকানিচোবানি খাইয়ে এসেছে। অথচ আমরা তাকে একদিনও বই নিয়ে বসতে দেখিনি। এই পরিবারের বড় বৌটিও কম যান না কিন্তু, সাধারণ বাড়ির ঝগড়া থেকে সে আতঙ্কবাদী সংগঠনের সাথে জড়িয়ে গেল এমনকি দেশদ্রোহিতাও করে বসল, অথচ ধরা পড়লো না। আর পড়লেও সকলের চোখে ফাঁকি দিতে বেশ ওস্তাদ। বর্তমানেও তার কুকীর্তিতে এতটুকু ঘাটতি হয়নি। আর জবাও আজকাল বিচারকের আসন ছেড়ে গোয়েন্দাগিরির খাতায় নাম লিখিয়েছে।
জি বাংলার মেয়েরাও একদম পিছিয়ে নেই। শ্যামার কথাই ধরুন, পেটে বিদ্যে নেই তো কি হয়েছে, গলায় আওয়াজ তো আছে। আর এই গান গেয়েই শ্বশুরের প্রান বাঁচালো সে, যেখানে বড় বড় ডাক্তার ও ফেল হয়ে গেলেন।
এরপর তৃনয়নী, ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা, অথচ নিজের ভাগ্যটিই দেখতে পেল না।
আর একজন ছিলেন পেখম দেবী, তিন বার হৃদের সাথে পালিয়ে গেল, মন্দিরে বিয়েও করলো, দশমীতে চুটিয়ে সিঁদুর ও খেললো, তারপর বলছে আর বিয়ে করবে না হৃদেকে।। যা বাবা! আর কতবার বিয়ে করতে চায় কে জানে।।
এরা ছাড়াও আরও অনেক ই আছেন, যেমন মহুল, বকুল, সবনম, প্রফুল্ল ইত্যাদি ইত্যাদি সব মহীয়সীরা। আবার একটি রোবট বউ ও আছে, সে ও আজকাল মানুষের মত হিংসুটে হয়ে উঠেছে, নানারকম ছক কষছে সে। আবার এক আলোকচিত্রকর আছেন, তিনি অন্ধ, অথচ বেস্ট ফোটোগ্ৰাফারের পুরষ্কার প্রাপ্ত।
এই পরিবারের হাত থেকে অবশ্য ভগবানও রক্ষা পাননি। ব্রক্ষ্মচারী লোকনাথ বাবারও যে প্রেমিকা আছে, জি বাংলা না থাকলে জানতেই পারতাম না কখনও। এখন তো নেতাজিকেও এরা পাকড়াও করেছে। নেতাজির সাথে আবার কি করতে চলেছে কে জানে! দুই পরিবার আবার একসাথে কাদম্বিনী তৈরি করছে, দেখা যাক কে বেশি আকৃষ্ট করছেন সিরিয়াল প্রেমীদের।
এই পরিবারগুলোর আবার কিছু কমন সমস্যা আছে; এদের ঘরের পুরুষদের এক একজনের দুটো তিনটে বিয়ে, আর না হয় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। এই পরিবারের মেয়ে বৌ-রা সকলেই আবার দয়ালু প্রকৃতির, খুব একটা প্রতিবাদ করে না। বরের সাথে অন্য মেয়ের সম্পর্ক সহজেই মেনে নেয়, আবার তার জন্য নিজেকে পরিবারের কাছে খারাপও প্রমাণ করে দেয়।
আর একটা কথা তো ভুলেই গেছি-এখানে বেশির ভাগই আবার মহিলা ভিলেন। মেয়েদের বেশ হিংস্র বানিয়ে দিয়েছেন এরা।
যাই হোক সবকিছুর ই ভালো মন্দ উভয় দিকই আছে। সিরিয়াল প্রেমীরা আমার ওপর নিশ্চয়ই অনেক ক্ষেপে গিয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, দয়া করে ক্ষেপে না গিয়ে বিষয়টি নিয়ে ভাবুন একটু। এই সিরিয়াল গুলো কতটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে আমাদের জীবনে। আমরা সংকীর্ণ মনের হয়ে যাচ্ছি। এই শো গুলি দেখা মিস হয়ে যাবে বলে আজকাল কেউ কারও বাড়ি যাওয়া-আসা করে না। মানুষ একঘরে হয়ে গেছে। এমনকি একসাথে কেউ গল্প করার সময়েও নিজের থেকে বেশি এদের নিয়ে আলোচনা করতে ব্যস্ত। এমনও হয়, পরিবারের সদস্যরাও এদের মত ব্যবহার করে ফেলে কখনও কখনও। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই কথাটা বলছি।
তাই সিরিয়াল দেখুন, তবে কেবলমাত্র মনোরঞ্জন হিসেবে একে গ্রহণ করুন। নিজেদের জীবনে একে জাঁকিয়ে বসতে দেবেন না যেন। খারাপের মধ্যে থেকে ভালোটা গ্ৰহন করুন। তাহলেই আনন্দ পাবেন, না হলে কিন্তু এর থেকে ক্ষতি ছাড়া কিছুই হবে না।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
বি:দ্র- এই লেখা সম্পূর্ণ প্রতিবেদকের নিজস্ব মতামত, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এর জন্য কোনও ভাবে দায়ী নয়।

No comments:
Post a Comment