অন্যের হাসির খোরাক হয়ে বেঁচে থাকা দায়; আত্মহত্যা করতে চায় ৯ বছরের শিশুটি - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 21 February 2020

অন্যের হাসির খোরাক হয়ে বেঁচে থাকা দায়; আত্মহত্যা করতে চায় ৯ বছরের শিশুটি





সৃষ্টিকর্তা তাকে বামন বানিয়েছে। তাইতো আট-দশটা স্বাভাবিক শিশুদের মতো নয় সে। আর এতেই যেন যত আপত্তি! দৈহিক আকৃতি নিয়ে হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠে বন্ধুরা। স্কুলে গেলে তাকে নিয়ে মশকরা করা হয়। এত অল্প বয়সে সমাজের মানুষের হাসি-ঠাট্টায় আর যেন কুলিয়ে উঠতে পারছে না ৯ বছরের শিশু কুয়াদেন। বেঁচে থাকতে চায় না সে। তাই মায়ের কাছে শিশুটির আবদার, ‘মা, তুমি আমাকে একটা দড়ি এনে দাও। আমি গলায় ফাঁস দিয়ে মরব।’

এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবনে। ছেলের এই কষ্টের কথা ক্যামেরাবন্দি করে তা ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন অসহায় মা। তিনি সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন। কুয়াদেনের মা চান, বিদ্রুপের শিকার হয়ে আর কোন শিশু যেন জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে।

অসহায় এই অস্ট্রেলিয়ান মায়ের নাম ইয়ারা বেইলিস। বুধবার পীড়াদায়ক এই ভিডিওটি ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেন তিনি। ভিডিওতে স্কুল পড়ুয়া শিশুটিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমাকে একটা দড়ি এনে দাও। আমি নিজেকে শেষ করে দেব।’

অত্যন্ত মানবিক আবেদনময়ী ভিডিওটি এ পর্যন্ত ৩০ লাখের বেশি দেখা হয়েছে। ভিডিওতে কুয়াদেনকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আমি শুধু আমার বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে চাই...আমি চাই, আমাকে কেউ মেরে ফেলুক।’

শারীরিক ত্রুটি নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হলে কুয়াদেনের মতো অসহায় শিশুদের জীবনে তা যে কত বড় প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে মূলতঃ সবাইকে সচেতন করতেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছেন মিসেস বেইলিস।

ভিডিওটি একটি প্রাইভেটকারে ধারণ করা। এতে আরও দেখা যাচ্ছে, শিশুটি সিটে বুক গুঁজে দিয়ে অনবরত কেঁদে যাচ্ছে। তার চোখে-মুখে অসহায়ত্বের ছাপ। আর তার মা কান্না জড়িত কণ্ঠে শিশুটির ওপর বিদ্রুপের বিরূপ প্রভাব তুলে ধরছেন।

৬ মিনিটের ভিডিও ক্লিপটিতে মাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি সাধারণত বিষয়টা চেপে থাকি। কারণ এটি ব্যক্তিগত বিষয়। তবে আমি বিষয়টিকে আর চেপে রাখতে পারলাম না। আমি এইমাত্র ছেলেটিকে স্কুল থেকে নিয়ে এলাম এবং দেখলাম তাকে কীভাবে অপমান করা হচ্ছে। আমি বিষয়টি প্রিন্সিপালকে জানিয়েছি। আমি আসলে সমাজের লোকদের জানাতে চাই, এ রকম সামাজিক পীড়ন আসলে জীবনে কতটা প্রভাব ফেলে। আমার ছেলেকে তো দেখছেনই।’

‘সুতরাং, দয়া করে আপনাদের শিশুদের এ বিষয়ে শিক্ষা দিন, আপনার পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদের এ বিষয়ে শিক্ষা দিন। কারণ, তাদের মাধ্যমেই একেকজন একেকভাবে আমার ছেলের মতো অপমানের শিকার হবে। এখন আপনারা বুঝতে পারছেন, এসব অবুঝ শিশুরা নিজেদের কেন শেষ করে দিচ্ছে’-বলেন মিসেস বেইলিস।

কুয়াদেনের মা মিসেস বেইলিস আদিবাসী অধিকার আদায়ের একজন সক্রিয় কর্মী। অস্ট্রেলিয়ার ট্যাবলয়েড পত্রিকা কুরিয়ার মেইলকে জানান, তার ছেলে কুয়াদেন এর আগেও একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তিন বছর আগে যখন তার বয়স মাত্র ৬ বছর তখন সে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। আমি তাকে বুঝিয়েছি দেখ, তুমি যদি একবার চলে যাও, তাহলে কিন্তু চিরকালের জন্য চলে যাবে। আর ফিরে আসতে পারবে না। তারপরও সে এটা করেই যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, দাদা ও ছোট ভাইয়ের (গর্ভে থেকেই মৃত্যু হয়) মৃত্যুতে সে বেশি ভেঙে পড়েছে। সে বিশ্বাস করে, সে যদি মারা যায়, তাহলে সে স্বর্গে দাদা ও ভাইয়ের সঙ্গে একসঙ্গে থাকতে পারবে।







সূত্র: জাগো নিউজ24

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad