হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে তিলকের ইতিহাস ও মাহাত্ম্য - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 28 February 2020

হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে তিলকের ইতিহাস ও মাহাত্ম্য



তিলক বিভিন্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তগণ কর্তৃক ললাটাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অঙ্কিত চিহ্নবিশেষ। সম্প্রদায়ভেদে চন্দন, খড়িমাটি জাতীয় গুঁড়া, ভস্ম প্রভৃতি দিয়ে তিলক অঙ্কিত হয়। কবে কোথায় এর প্রথম প্রচলন হয় তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠানে ললাটে হোমভস্মের টিকা ধারণ প্রথার সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়। সপ্তম শতকে রচিত বাণভট্টের কাদম্বরী গ্রন্থে শিবভক্ত দৃঢ়দস্যু এবং জাবালি ঋষির বর্ণনায় ললাটে ভস্ম দ্বারা ত্রিপুন্ড্র অঙ্কনের কথা জানা যায়, যা থেকে পরবর্তীকালে শৈবদের কপালে তিনটি সমান্তরাল রেখার সমন্বয়ে তিলকচিহ্ন অঙ্কনের প্রথা প্রচলিত হয় বলে অনেকের ধারণা। ১০ম-১১শ শতকে রচিত বিভিন্ন পুরাণ ও উপপুরাণ থেকে জানা যায় যে, ওই সময় থেকে শৈবাদি সম্প্রদায়ের মধ্যে তিলক ধারণ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ সময়ের চর্যাপদেও ‘বাণচিহ্ন’ নামে এ তিলক ব্যবহারের পরিচয় পাওয়া যায়। গবেষকদের অনুমান, তিলক ধারণের প্রথা প্রথমে শৈবদের মধ্যে শুরু হয় এবং তদনুসরণে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও তা বিস্তার লাভ করে।

তিলক ধারণের প্রথম অনুপ্রেরণা কোথা থেকে এসেছিল তা সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে, শৈবাদি বিভিন্ন সম্প্রদায় যেসব ভঙ্গিতে তিলক ধারণ করে তার অনুপ্রেরণা এসেছে স্বস্ব ইষ্ট দেবদেবীর মূর্তিতে অঙ্কিত বিভিন্ন চিহ্ন থেকে।

তিলকের ব্যবহার সকলের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। সাধারণত নিষ্ঠাবান হিন্দুরা নিত্য, নৈমিত্তিক ও কাম্য এবং পৈত্র্যাদি কর্ম অনুষ্ঠানের পূর্বে তিলকচর্চা করে থাকেন। তবে শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, সৌর এবং গাণপত্য সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এটি একটি নিয়মিত আচার। এদের মধ্যে আবার বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অধিক। স্নানের পর বৈষ্ণবরা বিষ্ণুর দ্বাদশ নাম স্মরণ করে দেহের দ্বাদশ অঙ্গে তিলক ধারণ করেন।


 হিন্দু ধর্মের অন্তর্গত প্রায় সকলেই কোনো না কোনো তিলক ধারন করেন। শৈব, বৈষ্ণব, তান্ত্রিক হিন্দু ধর্মের প্রায় সব শাখা উপশাখাতেই তিলক ধারনের প্রচলন আছে। হিন্দু বাড়ির মহিলারাও সাধারনভাবে কুমকুম বা সিঁদুরের টিপ পরিধান করেন।  সম্প্রদায়ভেদে চন্দন, খড়িমাটি জাতীয় গুঁড়া, ভস্ম প্রভৃতি দিয়ে তিলক অঙ্কিত হয়। সাধারনত কপালে তিলক পরিধানের রীতি থাকলেও বৈষ্ণবরা দেহের বিভিন্ন অংশে তিলক কাটে।

কপালে দুইটি ভ্রূর মাঝ বারবার তিলক কাটেন অনেকেই। দেহতত্ত্ব মতে এখানে আজ্ঞাচক্র থাকে৷ যেটি আমাদের শরীরে উপস্থিত ৭টি চক্রের মধ্যে একটি৷ আবার শরীরতত্ত্ব অনুযায়ী, কপালের এই স্থানে থাকে পিনিয়ল গ্ল্যান্ড থাকে৷ এই গ্ল্যান্ডকে উদ্দীপিত করলে মস্তিষ্কের মধ্যে এক অন্যধরনের প্রকাশ অনুভূতি হতে থাকে৷ তিলক সেই অনুভূতিকেই আরও ভালো ভাবে উপলব্ধি করার জন্য ব্যবহার হয়।

হিন্দু মতে ললাত ইষ্ট দেবতার প্রতীক ৷ এখানে তিলক লাগিয়ে ইষ্টদেবকে স্মরণ এবং শরীরের যাবতীয় চেতনাকে একস্থানে কেন্দ্রীভূত করা হয়ে থাকে৷ আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা বলেন , কাউকে দেখার সময় সেই মানুষটির মাথায় দৃষ্টি যায় সবার আগে, তাই তিলক বা টিপ-এর মাধ্যমে সেই দৃষ্টিকে আকর্ষন করা সম্ভব।


হিন্দু মতে ললাত ইষ্ট দেবতার প্রতীক ৷ এখানে তিলক লাগিয়ে ইষ্টদেবকে স্মরণ এবং শরীরের যাবতীয় চেতনাকে একস্থানে কেন্দ্রীভূত করা হয়ে থাকে৷ আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা বলেন , কাউকে দেখার সময় সেই মানুষটির মাথায় দৃষ্টি যায় সবার আগে, তাই তিলক বা টিপ-এর মাধ্যমে সেই দৃষ্টিকে আকর্ষন করা সম্ভব।



No comments:

Post a Comment

Post Top Ad