সম্পত্তির কারণে বাবা- মায়ের ওপর অত্যাচারের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কখনও দেখা যায় বৃদ্ধ বাবা মা-কে ঘর থেকে বের করে দেয় সন্তানেরা। আবার অনেকেই আছেন যারা হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পিছপা হন না। বাবা মা-কে দেখাশোনার জন্য আইন বলবৎ হলেও, কার্যত সেই আইনকে বুড়োআঙুল দেখিয়ে নিত্যদিন এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে ছেলে-মেয়েরা। আবার ঘটলো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তবে নতুন মোড়কে।
বাবা সম্পত্তি লিখে দেয়নি, সেই অপরাধে তার মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করলে তার ছেলেমেয়েরা। ঘটনাটি ঘটেছে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে। পরবর্তীতে নানা গড়িমসির পর দুপুরের দিকে পুলিশের হস্তক্ষেপে বড় ছেলে বাবার মৃতদেহ নিতে বাধ্য হয়। মৃতের নাম হারাধন কোটাল, বয়স ৭০।
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, মৃত হারাধন বাবুর বাড়ী কেশবচক পঞ্চায়েতের কেটেরা গ্রামে। কিন্তু তিনি অস্থায়ী ভাবে বাস করতেন তারকেশ্বরের মাকড়ার গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাঁর দুই পক্ষের মোট ৩ জন সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিবাহ করেন তিনি। আগের পক্ষের এক ছেলে ও পরে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও সন্তান তুল্যাণ গ্রামে থাকেন। হারাধন বাবু দিনমজুরের কাজ করতেন এবং বড় ছেলের সাথেই থাকতেন। শোনা যায়, কেটেরার বসত বাড়ীটি বিক্রি করে দেওয়ার পর সেই টাকার ভাগ তিনি কোনও সন্তানকেই দেননি। এরপর থেকেই তিনি একা থাকতেন অস্থায়ী ঠিকানায়।
মাস কয়েক আগে হঠাৎ করে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং অসাবধানতাবশত পা ভেঙে বিছানা নিতে হয়। দেখাশোনার জন্য পরিবারের কেউই এগিয়ে আসেন নি। অগত্যা স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তাকে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় এবং মঙ্গলবার সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পরিবারে খবর দেওয়া হয়, কিন্তু ছেলেমেয়েরা তার লাশ নিতে আসেনি। পরে পুলিশ বড় ছেলে অরুণকে বাবার লাশ নিতে বাধ্য করে।
অভিযোগ, হারাধন ছেলেমেয়েদের সম্পত্তি লিখে দেননি। সম্পত্তি বিক্রির টাকার ভাগও দেননি।
বড় ছেলে অরুণ জানান, ‘বাবা জমি-বাড়ি বিক্রি করে টাকা নয়ছয় করেছে। আমাকে কিছুই দেয়নি। ভাইকে দিয়েছে কিনা বলতে পারব না। আমার মেয়ের বিয়ের সময় বাবার থেকে টাকা চেয়েছিলাম। কিন্তু দেয়নি। রাগ হবে না কেন?’
তবে গ্রামবাসী বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, ছেলেরা দীর্ঘদিন ধরেই হারাধনবাবুর দেখভাল করতেন না। বাবার সম্পত্তিতে তাদের লোভ ছিল। তা না-পাওয়ায় অমানবিক আচরণ করতে তারা দ্বিধা করেননি। বাবার মৃত্যুতেও তাদের রাগ যায়নি।
সূত্র: যুগান্তর
No comments:
Post a Comment