স্বামীকে বৃদ্ধ স্ত্রীর ত্রিশ বছরের সাংসারিক শ্রমের মূল্য হিসেবে আট মিলিয়ন পেসো পরিশোধ করার নির্দেশ - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, 21 January 2020

স্বামীকে বৃদ্ধ স্ত্রীর ত্রিশ বছরের সাংসারিক শ্রমের মূল্য হিসেবে আট মিলিয়ন পেসো পরিশোধ করার নির্দেশ


আর্জেন্টিনার বৃদ্ধ দম্পতি। স্বামীর বয়স সত্তর, আর স্ত্রীর বয়স ষাট। ত্রিশ বছর সংসার করছেন। যদিও ২০০৯ সাল থেকে এই দম্পতি আলাদা থাকছেন। তবে বছর দুয়েক আগে তারা সাংসারিক জীবনের ইতি টেনেছেন।
জীবন সায়াহ্নে এসে এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন স্ত্রী। কারণ স্বামী বেশ স্বচ্ছল। তিনি বিয়ের পর থেকে স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর নিজের জীবন চালাতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন। ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞায় তাদের কারো নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে স্ত্রীর নাম শুধুমাত্র এমএল দ্বারা বোঝানো হয়েছে।
স্ত্রী এমএল ছিলেন অর্থনীতিতে স্নাতক। ভালো চাকরি পাওয়ার সম্ভবনাও ছিল। তবে বিয়ের পর সংসারের কথা চিন্তা করে চাকরি, নিজের ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে সংসারে মনোযোগী হয়েছেন। সন্তান জন্ম দিয়েছেন, তাদের প্রতিপালন করাসহ হাজারটা সাংসারিক ঝামেলা সামলেছেন। অথচ ত্রিশ বছর বাদে খালি হাতে স্বামীর ঘর থেকে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে।
আর্জেন্টাইন এই দম্পত্তির জীবনের ঘটনা যেন বিশ্বের অনেক দম্পতির প্রতিচ্ছবি। এমনকি উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এই চিত্র বিরল নয়। তাই প্রশ্ন উঠেছে— নারী কেন তার এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি পাবে না? তাই আর্জেন্টিনার এক আদালতের বিচারক এমএলের স্বামীকে বৃদ্ধ স্ত্রীর ত্রিশ বছরের সাংসারিক শ্রমের মূল্য হিসেবে আট মিলিয়ন পেসো পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারক ভিক্টোরিয়া ফামা রায়ে লিখেছেন, স্বামী এবং স্ত্রী একই সংসারের দুই সেবক। উভয়ে সাংসারিক স্বচ্ছলতার জন্য উদয়-অস্ত খেটে চলে। সাধারণত পুরুষ বাইরে থেকে অর্থ উপার্জন করে সংসারে অবদান রাখে। আর নারী রান্না থেকে শুরু করে সন্তান জন্মদান, প্রতিপালন, টুকিটকি হাজারটা কাজের দ্বারা সংসারে অবদান রাখে। তবে পুরুষের কাজকে অর্থ মূল্য দ্বারা পরিমাপ করা হলেও নারীর কাজকে সেভাবে পরিমাপ করা হয় না। বৃদ্ধ এমএল জীবন সায়াহ্নে আর্থিক জটিলতায় পড়েছেন। অথচ ভালো চাকরি করার সুযোগ তার ছিল। তা না করে তিনি গোটা জীবন সংসারের পিছনে উৎসর্গ করেছেন। তাই তাকে এই অর্থ দেয়া হোক। যেন তিনি বাকি জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারেন।
আর্জেন্টিনার নারীবাদী ও আইনজীবী সংগঠনগুলো দ্রুত এই ঐতিহাসিক রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। লুসিয়া মার্টেলট নামের এক আইনজীবী বলেন, এটা মহৎ একটি রায়। কারণ নারীর সাংসারিক কাজকে আমরা কাজ মনে করি না। অথচ আর দশটা দাপ্তরিক কাজের মতো এখানেও দক্ষতা যোগ্যতা সবই লাগে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad