মকলেশা বেগম, জন্মগত ভাবেই দৃষ্টিহীন। দৃষ্টিহীন কন্যা সন্তান হওয়ার অপরাধে ২ বছর বয়সে মকলেশার মাকে ছেড়ে দেয় মকলেশার বাবা। দৈন্য দিদিমার বাড়িতেই বসবাস করে মকলেশা ও তার মা। মা কৃষি শ্রমিক, অভাবের মধ্যেই মেয়েকে বড় করছেন। তবে দারিদ্রতা, দৃষ্টিহীনতা কোনওটাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি মকলেশার জীবনে। সাধারন পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনা করে বড় হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের মকলেশা বেগম। সে এখন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তার জীবনের লক্ষ্য শিক্ষিকা হওয়া।
বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে মকলেশার বার্তা এগিয়ে যেতে হবে, লড়াই করতে হবে৷ মকলেশার লড়াইয়ে পাশে আছে তার পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়, স্কুলের বন্ধুরা ও শিক্ষকরা৷ সকলেই রোল মডেল বলেন মকলেশা বেগমকে।
হেমতাবাদ ব্লকের সমশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সমশপুরের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা মকলেশা বেগম। বর্তমানে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ৪০ শতাংশের বেশী নাম্বার পেয়ে পাশ করেছে মকলেশা। একজন দৃষ্টিহীনের জন্য সাধারণ স্কুলে পড়াশোনা করে এই নাম্বার পেয়ে পাশ করাটা যে আনুপাতিক হারে যথেষ্ট ভালো, তা বলাই বাহুল্য। স্কুলে অনেক বন্ধু আছে মকলেশার। বন্ধুদের কথায় মকলেশা বেশ আন্তরিক, কারও সাহায্যের প্রত্যাশা করে না সে, তবুও বন্ধু স্কুলের ক্লাসে নোট লেখার সময় কার্বন দিয়ে অন্য কাগজে মকলেশার জন্যও নোট লিখে দেয়৷ আর সেই সব নোট পড়ে শুনিয়ে মুখস্ত করিয়ে দেয় মকলেশার দুর সম্পর্কের আত্মীয়া এক বৌদি। সংসারের কাজের মধ্যে মকলেশার বায়না মেনে শত কষ্টেও তার বৌদি তাকে এই সহায়তা করে।
স্কুলের বান্ধবীরা বা বৌদি সকলেই চায় মকলেশা তার লড়াইয়ে এগিয়ে যাক৷ সমশপুর হাই স্কুলের শিক্ষকরাও মকলেশাকে নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত, তারাও মনে করে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে মকলেশাকে রোল মডেল করে এগিয়ে যাক স্পেশাল স্টুডেন্টরা। মকলেশার মায়েরও একটাই ইচ্ছা, মকলেশা নিজের পায়ে দাঁড়াক। আর মকলেশা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে এগিয়ে যাচ্ছে৷
No comments:
Post a Comment