ঘুমের মধ্যে কখনও বোবায় ধরেছে? - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, 5 December 2019

ঘুমের মধ্যে কখনও বোবায় ধরেছে?





আমাদের মাঝে অধিকাংশ মানুষেরই প্রায় রাতের মধ্যে গভীর ঘুম ভেঙে যায় এবং আমরা মনে করি যে, আমাদের শরীরের উপরে কোন ভারী জিনিস কিছু চাপ দিয়ে রেখেছে।

এই বোবায় ধরা সমস্যার কারণে আমাদের অস্বস্তি অনুভব হয় এবং সে এতটাই ভারী অনুভব হয় যে, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে, আমাদের পাশে কেউ শুয়ে থাকলেও তাকেও ডেকে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ডাকা তো দূরের কথা অনেক চেষ্টা করেও কোন শব্দ তৈরি করাও সম্ভব হয় না এমনকি পাশফিরে শরীরকে হালকা করা সম্ভব হয় না। এর ফলে আমাদের অতিরিক্ত ভয় কাজ করে এবং বুক ধড়ফড় করতে থাকে, যার ফলে দম আটকে মরে যাওয়ার মত অবস্থা সৃষ্টি হয়।

ঘুমের মাঝে আমাদের এই শারীরিক জটিলতাকে অনেকেই বোবায় ধরা বলে থাকেন। কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় সমস্যাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস । স্লিপ প্যারালাইসিস বা ঘুমের মধ্যে পক্ষাঘাত এই সমস্যাটি অনেকের মুখ থেকে শোনা যায়। এটি মূলতঃ এমন একটি রোগ, যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির কিছু সময়ের জন্য কথা বলতে পারা বা শরীর নড়াচড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং ভয়ে কাতর হয়ে পড়েন। এটি অনেকেই ভুতের কীর্তি বলেও মনে করতে পারেন। কিন্তু স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে ঘুম ও জাগরনের মাঝামাঝি স্নায়ু সমস্যা জনিত কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে।

ঘুমের এমনই বিশেষ সময়কে বলা হয় জারপিট আই মুভমেন্ট। এটি এমন একটি সময়, যেখানে ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্ক খুবই সক্রিয় থাকে এবং ঐ পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখার ওই সময় কালে মানুষের শরীরের কোন পেশি অথবা অঙ্গ কাজ করতে সক্ষম হয় না। এ কারণে মস্তিষ্ক সচল থাকলেও শরীর অচল থাকে না সে সময়। মস্তিষ্ক সচল থাকার ফলে আমরা আমাদের সঠিক জ্ঞান পেয়ে থাকি, কিন্তু শরীর অচল থাকার ফলে ভয় কাজ করে এবং শরীর অসাড় হয়ে পড়ে। এ সময়টিতে কোন স্বপ্ন দেখলে ব্যক্তি সত্যি সত্যি ভূতের কোন ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে মনে করে থাকেন এবং অনেকাংশই তার কাছে বাস্তব বলে মনে হয়।

আমাদের এই শারীরিক জটিলতা বা স্লিপ প্যারালাইসিস যেকোনও বয়সেই হতে পারে, তবে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা আখ্যায়িত করেছেন তরুণ-তরুণী ও কিশোর কিশোরী বয়সে সবচেয়ে বেশি স্লিপ প্যারালাইসিস হতে পারে। স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার কতিপয় কিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে মাদকাসক্ত হলে এই রোগ দেখা দেয় চরম আকারে। পাশাপাশি ঘুমের অভাব হলেও বা ছেড়ে ছেড়ে ঘুম হওয়াও স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। তার পাশাপাশি অসময়ে ঘুমানো অথবা পরিবারের কারও সমস্যা থাকলে ইত্যাদি কারণে এটি দ্বারা কোন ব্যক্তি খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারে।

সঠিক পরামর্শ ও কিছু নিয়মকানুন মানার মাধ্যমে খুব সহজেই রোগ থেকে প্রতিকার সম্ভব। স্লিপ প্যারালাইসিস থেকে প্রতিকার পেতে রাতে অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে এবং সে ঘুম যেন গভীর হয়, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। রাতের ঘুম অবশ্যই পরিমাণ মতো হতে হবে এবং গভীর হতে হবে, যার ফলে ঘুমের মাঝে কোন ধরনের শারীরিক জটিলতা প্রকাশ পায় না। ঘুমানোর ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা যেন প্রতিদিন রাতে ঠিক একই সময় ঘুমাতে যাই এবং সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠার সময় সব দিনই কাছাকাছি হয়।

আমাদের ঘুম হতে হবে আরামদায়ক এবং আমাদের পরিবেশ হতে হবে ঘুমের উপযুক্ত। সে ক্ষেত্রে আমাদের কোলাহল ব্যতীত ঘরে ঘুমাতে হবে। ঘুমানোর ক্ষেত্রে আমাদের ঘরের অন্ধকার থাকা এবং তার তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রা রাখা, ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ভারী খাবার বা চা-কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকা, স্লিপ প্যারালাইসিস থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করবে। যদি কোন কারনে স্লিপ প্যারালাইসিস আক্রান্ত হয়ে পড়েন ঠিক ওই সময় নিজের মনকে শান্ত রাখতে হবে। অস্থিরতা ও ভয় থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে হবে। মনে করতে হবে যে এটি খুবই সামান্য ব্যাপার, ভয়ের কোন কারণ নেই।



সূত্র: টিডিটি

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad