চা সৃষ্টির নেপথ্যে থাকা ইতিহাস জেনে নেওয়া যাক - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 2 December 2019

চা সৃষ্টির নেপথ্যে থাকা ইতিহাস জেনে নেওয়া যাক




সর্বপ্রথম ২৭৩৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মহান চৈনিক শাসক শেন নাং আভিজাত্যের প্রতীক এই চা আবিষ্কার করেন। তার শাসন আমলে তিনি সবাইকে জল ফুটিয়ে পান করার জন্য আদেশ জারি করেছিলেন। বর্তমান বিশ্বে যারা আদেশ জারি করেন, অনেকেই আবার নিজেরাই সেই আদেশ অমান্য করে থাকনে। তবে শেন নাং নিজের জারি করা এই আদেশ পালনে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তিনি নিজেও সবসময় ফোটানো জল পান করতেন। শেন তখন চীনের জুন্নান প্রদেশে অবস্থান করছেন। একদিন যাত্রাপথে এক জায়গায় যাত্রা বিরতি করা হলো।

জল পান করার জন্য সেবকদের জল ফোটাতে আদেশ দিলেন। এমন সময় ঘটলো এক আজব কান্ড। হঠাৎ বাতাসে ফুটন্ত জলের মধ্যে এক ধরনের গাছের পাতা এসে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে সেই পাতা, ফুটন্ত জলে দ্রবীভূত হয়ে জলের রং পরিবর্তন হয়ে গেল। শেন তাংয়ের কৃষি এবং ভেষজ চিকিৎসায় ব্যাপক আগ্রহ ছিলো। তিনি কৌতূহলী হয়ে জলের ঘ্রাণ শুঁকে দেখলেন অন্যরকম এক সুগন্ধি ছড়ানো গন্ধ। তিনি এটার স্বাদ নিলেন। প্রথম চা পান শুরু হল। পরবর্তীতে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি এই পানীয়কে ওষুধি পানীয় হিসেবে সবাইকে পানের আদেশ দেন।

৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চীনা অভিধানে চা স্থান পায় এবং সেখানে চা তৈরির পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছিল। পবর্তীতে এরা চায়ের সাথে আদা, নানা রকম মশলা এবং কমলার রস মিশিয়ে চায়ের স্বাদ বৃদ্ধির চেষ্টা করে। চীনারা তখন থেকেই ধারণা করেন, চা হচ্ছে রোগ নিরাময়ে এক মহৌষধ।

চায়ের খ্যাতি দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ৪৭৯ খ্রিষ্টাব্দে চায়ের খ্যাতি তুরস্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে এবং বাণিজ্যিকভাবে চা লেনদেন শুরু হয়। এরপর ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে চীন থেকে জাপান পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে চায়ের খ্যাতি। যেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা চা পানে আসক্ত হয়ে পড়েন।

৬৪৮ থেকে ৭৪৯ খ্রিষ্টাব্দ, এই সময়কালে গোয়োকি নামে এক জাপানি ভিক্ষু ৪৮ টি বৌদ্ধ মন্দিরে চা বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় জাপানের সাধারণ মানুষ চা সম্বন্ধে কিছুই জানতো না। চা পান সীমাবদ্ধ ছিল শুধুমাত্র উচ্চ পর্যায়ের ভিক্ষু এবং সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে।

৭২৫ খ্রিস্টাব্দে চীন সম্রাট সরকারী ভাবে এই পানীয়র নাম রাখেন `চা। আমরা বাঙালিরাও এই পানীয়কে চা নামেই জানি। তবে হিন্দি, উর্দু, ফার্সি, আজারবাইজান, তুর্কি, কুর্দি, বসনিয়ান,এবং আরও অনেক ভাষায় চা কে ‘চায়ে’ বলে। আরবীতে বলে ‘শায়ে’। এছাড়া জাপানিরা বলে `অচ্চা’। এরপর ১৬১৮ সালে রাশিয়া সর্বপ্রথম চায়ের সাথে পরিচিত হয়। দিনদিন চায়ের খ্যাতি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশে চা জনপ্রিয়তা লাভ করে।

একপর্যায়ে ইংরেজদের হাত ধরেই ভারতীয় উপমহাদেশে চায়ের প্রবেশ ঘটে। তারা ভারতের আসাম রাজ্যে চায়ের চাষ শুরু করে। চা উৎপাদনে চীনের একক আধিপত্যকে বিনাশ করতে ব্রিটিশরা ভারতে চা চাষ শুরু করে। এভাবে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে পুরো ভারতবর্ষে চায়ের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পরে। প্রথম দিকে কেবল অভিজাত শ্রেনীর মানুষেরাই চা পান করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে বর্তমানে সকল শ্রেণির মানুষ চা পান করেন।


(সংগৃহীত) 

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad