গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যুর পেছনে কিছু কারণ - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday, 1 December 2019

গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যুর পেছনে কিছু কারণ





মা হওয়া প্রতিটি মেয়ের জীবনের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও কামনা। মাতৃত্বে নারীর পরিপূর্ণতা। মা হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। উন্নত দেশগুলোতে বর্তমানে মায়ের মৃত্যুহার খুবই কম। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ০.২ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি হাজারে মাত্র দুইজন, অথচ আজও আমাদের দেশে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ বা প্রতি হাজারে ৫০ থেকে ৬০ জন মহিলা মাতৃত্ব বরণ করতে গিয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

মায়ের মৃত্যুর প্রধান কারণ
(১) এক্লাম্পসিয়া বা গর্ভাবস্থায় খিঁচুনি রোগ।
(২) সেপটিক অ্যাবরশন বা গর্ভপাত পরবর্তী সংক্রমণ ও প্রদাহ।
(৩) গর্ভাবস্থায় বা প্রসবোত্তর রক্তস্রাব
(৪) বাধাপ্রাপ্ত প্রসব
(৫) প্রসবোত্তর সংক্রমণ ও প্রদাহ প্রথমোক্ত কারণটি হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রসূতি মৃত্যুর প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৩০ জনই মারা যান এ ঘাতক ব্যাধির কারণে।

এ ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব লক্ষণকে বলা হয় প্রি-এক্লাম্পসিয়া। এ রোগটি সাধারণত গর্ভাবস্থার শেষ দিকে বা সাত মাসের পর দেখা দেয়, এসময় প্রসূতির পা ফুলে যায়। এমনকি সর্বশরীরও ফুলে যেতে পারে, ওজন অস্বাভাবিক রকম বৃদ্ধি পাবে। প্রস্রাবে অ্যালবুমিন দেখা দেয় এবং রোগিণীর উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। এসব গর্ভবতীর এরকম সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে সুচিকিৎসা না করলে পরে তারা এক্লাম্পসিয়া নামক এ বিভীষিকাময় রোগের শিকার হয়।

এরপর আসছে সেপটিক অ্যাবরশনের কথা। আমাদের দেশে আজ পরিকল্পিত পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা খুবই সহজলভ্য। প্রতিটি শহর, জেলা, থানা এমনকি গ্রামেও পরিবার কল্যাণ ব্যবস্থার বিভিন্ন প্রকল্প বা সংস্থা আছে। তবু আজও অনেকেই এ ব্যবস্থা সম্বন্ধে অজ্ঞ। যার পরিপ্রেক্ষিতে অনাকাঙ্ক্ষিত বা অপরিকল্পিতভাবে গর্ভসঞ্চার ঘটে যায়। তখন এই অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের বোঝা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য অনেককেই অশিক্ষিত ও অনভিজ্ঞ দাইয়ের হাতে যেন তেন ভাবে গর্ভপাত করানোর ঝুঁকি নিতে হয়। ফলে এসব মহিলার অনেকেই মারাত্মক রকমের জননেন্দ্রিয়ের সংক্রমণের শিকার হন। অত্যধিক রক্তক্ষরণে এবং মারাত্মক সংক্রমণ ও প্রদাহে হাজার হাজার মহিলা মৃত্যুবরণ করে। যারা মৃত্যুর ছোবল থেকে বেঁচে যায় তারাও চির রুগ্ন ও ভগ্ন স্বাস্থ্যের শিকারে পরিণত হয় এবং ধুঁকে ধুঁকে জীবনের বাকি দিনগুলো দুর্বিষহ কষ্ট ও যাতনার মধ্য দিয়ে যাপন করে।

এরপর আসে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবোত্তর রক্তস্রাবের কথা। গর্ভাবস্থায় ২৮ সপ্তাহের পর যোনি পথে রক্তস্রাব হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে তাকে বলা হয়, এন্টিপারটেম হেমারেজ। এ অবস্থা হতে পারে প্রধানত দু’টি কারণে প্রথমত গর্ভফুলে গর্ভস্থ সন্তান নিচে অবস্থান করলে, যাকে বলা হয়- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া অথবা রোগী উচ্চ রক্তচাপে ভুগলে ও তার প্রস্রাবে অ্যাবুমিন থাকলে বা প্রি এক্লাম্পটিক টকসিমিয়াতে ভুগলে। এই দু’টি অবস্থায় সুচিকিৎসা সম্ভব, উপযুক্ত সময়ে নিয়মিত অ্যান্টিনেটাল চেকআপের মাধ্যমে।

প্রসবোত্তরকালে রক্তক্ষরণ হওয়ার প্রধান কারণ হল গর্ভফুল মাতৃজঠরে আটকে যাওয়া। সন্তান প্রসব হওয়ার পর গর্ভফুল বের হয়ে আসতে আধাঘণ্টার বেশি সময় পার হলে আমরা তাকে বলি রিটেইনডপ্লাসেন্টা।

এরকম অবস্থায় রোগীকে নিকটস্থ কোন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে তার রক্তস্বল্পতা থাকলে, তাকে জরুরি ভিত্তিতে রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা হবে পাশাপাশি তাকে অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গর্ভফুল বের করে নিতে আসতে হবে। এসময় যাতে সংক্রমণ না হয় তার জন্য উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

প্রসবকালে জটিলতা পরিহার করার জন্য একজন গর্ভবতীকে নিয়মিতভাবে অ্যান্টিনেটাল চেকআপে রাখা একান্ত প্রয়োজন, যাতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ প্রসূতিকে সময়মতো হাসপাতালে  প্রসবের ব্যবস্থা করা যায়।

প্রসবোত্তর সংক্রমণ প্রতিরোধ করা খুব সহজ যদি প্রতিটি শহরে, গ্রামে ও উপজেলা পর্যায়ে টিবিক্রর ব্যবস্থা করা যায় এবং ধাত্রীদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রসব সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়।

প্রতিটি ঘরে পরিবার কল্যাণের কথা পৌঁছে দিতে পারলে এবং প্রতিটি গর্ভবতীর উপযুক্ত অ্যান্টিনেটাল চেকআপ ও প্রসবের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা আমাদের এসব প্রতিরোধযোগ্য রোগে মায়ের মৃত্যুহার অনেকটা কমিয়ে আনতে পারি।


(সংগৃহীত) 

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad