প্রেসকার্ড নিউজ ডেস্ক ; প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী ক্রিকেটের মাঠ থেকে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি) হয়ে সবে মাত্র ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) এর প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। কিন্ত বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট পদে নাম ঘোষনা হতে না হতেই অযাচিতভাবেই রাজনীতির সাথে নাম জড়িয়ে গেল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সারা দিন দেশজুড়ে উল্লেখযোগ্য আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো সৌরভ। চারদিকে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়ে চলেছে, তবে এবার কি রাজনীতিতে নাম লেখাচ্ছেন সৌরভ? তবে কি ২০২১ সালে তাকে সামনে রেখেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে চলেছে বিজেপি?
আর এই জল্পনা বাড়িয়ে তুলেছে বিজেপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’এর সাথে সৌরভের সাম্প্রতিক সাক্ষাত নিয়ে। সৌরভ বিজেপিতে এলে সেটা যে ভাল হবে তা একবাক্যে স্বীকার করে নেন শাহ। সোমবারই বিসিসিআইয়ের সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দেন সৌরভ। সচিব পদে অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ এবং কোষ্যাধক্ষ পদে মনোনয়ন জমা দেন দেশটির অর্থপ্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের ভাই অরুণ সিং ধুমাল। যদিও বোর্ড সভাপতি নিয়ে সোমবার রাতেই একপ্রস্থ নাটক হয়। বোর্ড সভাপতি হিসাবে ব্রিজেশ প্যাটেলের নাম যখন প্রায় চূড়ান্ত। ঠিক তখনই পাশার চাল ঘুরে যায়।
দিল্লি থেকে প্রাক্তন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুরের সাথে অমিত শাহের সাথে ফোনালাপেই ঠিক হয়ে যায় বোর্ডের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সৌরভ। এব্যাপারে মঙ্গলবার সকালেও মুম্বাইতে সৌরভ বলেছেন ‘অমিত শাহের সাথে আলাপচারিতাকালে রাজনীতি নিয়ে এমন কোন কথাই হয় নি। এমনকি উনিও একবারের জন্য আমায় বিজেপিতে যোগদান করার কথা বলেন নি।’ তাঁর অভিমত ‘রাজনৈতিক দলে যে কেউ যোগ দিতে পারে। আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম তখন আমি চাইতাম যে সবচেয়ে ভাল খেলোয়াড়টি আমার দলে খেলুক, যাতে দল যেতে। তেমনি যে কোন রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ নেতাও চাইবেন ভাল মানুষেরা তার দলের সাথে যুক্ত থাকুক। কারণ সেটাই তার কাজ সে দিদিই (মমতা ব্যনার্জি) হোক বা অমিত শাহ।’
তিনি আরও জানান ‘আমার কোন রাজনৈতিক চাপও নেই। আমি কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিও নই। তাই রাজনীতিতে যাচ্ছি-এই কথার কোন সত্যতা নেই। যদিও এই জল্পনার মধ্যেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও জানিয়ে দেন ‘রাজনীতিতে আসা নিয়ে সৌরভের সাথে এমন কোন আলোচনা হয় নি। এটা একটা গুজব। বাংলায় সৌরভের মতো কোন মুখকে বিজেপি তাদের দলে চাইছে কি না-সেই প্রশ্নের উত্তরে সংবাদমাধ্যমে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেন ‘আমরা কখনও তাকে দলে যোগদানের বিষয়ে আসতে বলিনি। এবং তার তরফেও দলে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয় নি।’ এসময় বিজেপি সভাপতি বলেন ‘বাংলায় আমরা বিজেপির কোন মুখ চাইছি না।
কারণ কোন রকম প্রস্তাবিত মুখ ছাড়াই লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ১৮ টা আসন জিতেছি এবং কয়েকটি আসনে খুব কম ব্যবধানে হেরেছি। তবে সৌরভ যদি সত্যিই বিজেপিতে যোগদান করতে চায়, তবে তাকে স্বাগত জানানো হবে।’ কিন্তু তার পরেও থামছে না জল্পনা। ব্যক্তিতের কারণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছেই সৌরভ বরাবরই আকর্ষণের বিন্দু ছিলেন। ২০০০ সালের শুরুতে রাজ্যটির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন সৌরভ। তাকে কার্যত নিজের ছেলের মতো দেখতেন বুদ্ধদেব। শোনাযায় সেসময় সিএবি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বুদ্ধদেবের পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন করেন সৌরভ। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর মমতা ব্যানার্জির স্নেহধন্য হন সৌরভ।
২০১৫ সালে বোর্ডের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জমমোহন ডালমিয়ার মৃত্যুর পর ওই পদে সৌরভের নাম ঘোষনা করেছিলেন মমতা। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের তরফেও দলে টানার চেষ্টা হয়েছিল সৌরভকে। যদিও সৌরভ তাতে রাজি হন নি। ২০১৬ সালে রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচনের সময় জোর জল্পনা ছড়ায় বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন সৌরভ। যদিও তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির তরফে এমন কোন প্রস্তাব পান নি আর পেলেও নির্বাচনী ময়দানে যেতেও তিনি ইচ্ছুক নয়।
এদিকে সৌরভের বিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট হওয়ার খবরে নতুন করে সেজে উঠেছে ইডেন গার্ডেনে অবস্থিত সিএবি কার্যালয়। আলোকমালায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে সিএবি সামনের দিক। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুম্বাই থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন সৌরভ। সেখানে তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য সাধারণ ও ক্রিড়াপ্রেমী মানুষ। সেখানে থেকে যান সিএবি কার্যালয়ে। সেখানে সিএবি’র প্রেসিডেন্ট সৌরভকে জমকালো সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
পি/ব
No comments:
Post a Comment