নানুর এখন নিজের ঢাক নিজেই পেটাচ্ছে , তবে তা কাঠের না, লোহার পাতের! - pcn page old

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday, 8 September 2019

নানুর এখন নিজের ঢাক নিজেই পেটাচ্ছে , তবে তা কাঠের না, লোহার পাতের!




দেবশ্রী মজুমদার:    গ্রাম গঞ্জে পুজো তখন, ঢাকের বাড়ি পরে যখন। আর সেই আশাতেই মনে পুলক, ঢাকীর বৌ বাচ্চাদের। চলচ্চিত্রের গল্প কাহিনীর মত শোনালেও, করুণ কাহিনী আজকের ঢাকীদের। নানুর বোমা বিধ্বস্ত নাম। তবে আগের থেকে শান্ত। কারো মতে আপাত শান্ত। কবি চণ্ডীদাসের নানুর আর হাসে না।  কথা বললে, তার দাঁত কদাপি ‘দন্ত রুচি কৌমুদি’ হয়ে ফোটে না। 


তবে পুজোর মরশুমে কান পাতলে বোমার আওয়াজ নয়। এখন শোনা যাবে, ‘ ড্যাং ড্যাঙা  ড্যাং , ড্যাড্যাং ড্যাড্যাং’ ঢাকের বোল। রাখ ঢাক না করেই এলাকাবাসীর এখন সোজা উত্তরঃ একটাই বাসনা, মা কবে আসবেন। তাই ভোরের আলো ফুটতেই সমস্ত আওয়াজ ছাপিয়ে ঢাকের মহড়া। দেখে নেওয়া হচ্ছে, কোন ঢাকে মিস্টি আওয়াজ-কাঠের না লোহার পাতের? হাতে আর সময় নেই! কম দামে বেশি আওয়াজের ঢাক খুঁজতে এখন রাজ্যের বেশির ভাগ ঢাকিরা এখনও ভিড় জমাচ্ছে নানুরে। তাই বোমা নয়, নানুর এখন নিজের ঢাক নিজেই পেটাচ্ছে।   



 সাধারণতঃ কাঠের ঢাক দেখতে সবাই অভ্যস্ত। মহালয়ার ভোরে ঢাকের আওয়াজ শুনে নিজেকে ঘরের মধ্যে গুটিয়ে রাখা দায়। ডিজিট্যাল সাউন্ড বক্সের যুগে ঢাকের কদর খুব একটা কমে নি। তবে সেরকম আহ্বান ও নেই, নেই আপ্যায়ন। আগে পুজোর চারদিন ঢাকি বাধা থাকত। এখন পুজোর সময় ক্ষণ টুকু ছাড়া, বাকি সময় ডিজিট্যাল সাউন্ড। তাই সেই রকম আয় না হওয়ায় ঢাকি সিনেমার মতই ঢাকির পরিবার আজ অসহায়। তবে বয়স্করা শেষ বয়সে চাইছেন তাঁদের বাপ ঠাকুর্দার পেশা বদলাতে। বয়স বেড়েছে। সেই সুবাদে তাঁরা কাঠের ভাড়ি ঢাকের চেয়ে, হালকা ধাতব পাতের তৈরী ঢাকের দিকে ঝুঁকছে। কারন এই পাতের ঢাক হালকা এবং আওয়াজও বেশি। এছাড়াও কাঠের ঢাকের দাম ৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে ধাতব পাতের ঢাকের দাম ৮ শত টাকা। তাই ভিন রাজ্য থেকে ঢাকিরা ভিড় জমায় নানুরে।     



 ঢাক ক্রেতা সনৎ দাস বলেন, “ ধাতব পাতের ঢাক আটশো টাকায় পাওয়া যায়। সস্তা হওয়ায়, সাধারণ ক্রেতার নাগালে। তাই ধাতব পাতের ঢাকই কিনেছি”। একই ভাবে গোরাচাঁদ দাস বলেন, “ কাঠের ঢাকের দাম বেশি। আবার ভারীও। তবে এটাও ঠিক কাঠের ঢাকের আওয়াজ বেশী মিষ্টি। কিন্তু সারা বছর সেরকম বাইনা হয় না। তাই এই ঢাক কিনলে, গায়ে লাগে না”।     


নানুরের এক ঢাক বিক্রেতা নিমাই কোনাই জানান, ধাতব পাতের ঢাকের দাম কম। আওয়াজও মিষ্টি। বিশ্বাস করুন, নিজের ঢাক নিজেই পেটাচ্ছি না। এই ঢাক ভাল। ভাল বলেই আমরা পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও, ঝাড় খণ্ড থেকে এখানে ঢাক কিনতে আসে”।   


তাই সদ্য উত্তপ্ত নানুরের আরেকটা পরিচয় আছে। সেটা বিখ্যাত ধাতব পাতের ঢাকের। কবি চণ্ডীদাসের স্মৃতি ধন্য নানুরের পূর্ব আত্মপরিচয় বারুদের ধোঁয়ায় ঢাকা পড়েছিল দু’দশক আগেই। সেই হৃত গৌরব উদ্ধার না হলেও, এই ঢাক শিল্প কিছু একটা পেরেছে। অন্ততঃ ‘এক ধামা চাল, চারটা কাঁকুর’ এমন কত শত ঢাকের বোল সেটাই ভোরের আলো ফোটার আগেই অবিরাম বলে চলে আগমনীর আগে। এই বা কম কিসে!



পি/ব 

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad